তখন ব্রিটিশ শাসনামল। ১৯১৩ সালের ১৫ এপ্রিল তৎকালীন ইস্টবেঙ্গলে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ খোকসা জানিপুর জুবিলী ব্যাংক লি:’। প্রধান কার্যালয় ছিল কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুর। এ কারণেই ব্যাংকটির এই নামকরণ। সময়ের হিসেবে ব্যাংকটির বয়স এখন ১০৯ বছর। দেশের সবচেয়ে পুরনো ব্যাংক। ১৯৮৪ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স পেয়ে ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা শুরু করে। ১৯৮৭ সালের ২৬ জানুয়ারি এটি নাম বদলে হয় ‘জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’। ১৯৮৮ সালে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পায়।
এ সময় ব্যাংকটির মালিকানায় চলে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত তিন খুনির। ব্যাংকটির শেয়ার কেনেন কর্নেল (অব) খন্দকার আব্দুর রশিদ, কর্নেল (অব) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং মেজর (অব) বজলুল হুদা। এদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান ও বজলুল হুদার মৃত্যুদÐ কার্যকর হয়েছে। কর্নেল (অব) খন্দকার আব্দুর রশিদ এখন পলাতক। তাদের সংশ্লিষ্টতার কারণে ব্যাংকটি দুর্নাম কুড়ায়। এখন শতাব্দী প্রাচীন এই ব্যাংকটি বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। জুবিলী ব্যাংক অবসায়নের ‘অফিসিয়াল লিকুইডিটর’ (অবসায়ক) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চের নির্দেশনা সম্বলিত লিখিত আদেশ প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। গতবছর ২৯ নভেম্বর এ আদেশ দেয়া হয়। অবসায়কের দায়িত্ব পালনকালে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক মাসিক সম্মানি হিসেবে পাবেন দেড় লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জুবিলী ব্যাংক অবসায়নের আবেদনে উল্লেখ করে, ১৯১৩ সালের ১৫ এপ্রিল কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জানিপুরে ‘খোকসা জানিপুর জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা শুরু করে।
ব্যাংকটি ১৯৮৭ সালের ২৬ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে হয় ‘জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ (অ-তফসিলি ৫টি ব্যাংক)। বিভিন্ন সময় ধরে বঙ্গবন্ধুর ৩ খুনি জুবিলী ব্যাংকের মালিকানায় চলে আসেন। গত কয়েক বছরে ব্যাংকটি নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকের অবসায়নে হাইকোর্টে আবেদন করে। আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট তানজীব-উল আলম ও কাজী এরশাদুল আলম। সরকারপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল ওহাব এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের (জয়েন্ট স্টক) পক্ষে একেএম বদরুদ্দোজা।
অ্যাডভোকেট কাজী এরশাদুল আলম জানান, ব্যাংকটির মূলধনের বিষয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিধান মানা হয়নি। এ কারণে অবসায়ন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আদেশে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে ‘দ্য অফিসিয়াল লিকুইডিটর’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ জন্য তাকে মাসে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারিয়া হককে অতিরিক্ত লিকুইডিটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। এছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ৯ মাসের মধ্যে তারা এই ব্যাংকের বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সব কাজ সম্পন্ন করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন