শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রথমবার চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপ যাচ্ছে জাহাজ

আজ তৈরি পোশাকখাতের প্রায় এগারশ’ কন্টেইনার নিয়ে ইতালি যাত্রা সময় ও খরচ কমবে, মাসে দু’বার যাবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ-ইউরোপ নৌ-বাণিজ্যে খুললো নতুন দুয়ার। আজ শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রথম ইউরোপ যাচ্ছে বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি সোঙ্গা-চিতা। তৈরি পোশাকখাতের প্রায় এগারশ’ একক কন্টেইনার নিয়ে ইতালির রেভেনা বন্দরে যেতে প্রস্তুত এই কন্টেইনার জাহাজটি। দেশের তৈরি পোশাকের বড় অংশের ক্রেতা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। দেশের মোট রফতানির ৬০ শতাংশই যায় সেখানকার দেশগুলোতে। এতদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফিডার জাহাজে কলম্বো, পোর্ট কালাং, সিঙ্গাপুরসহ নানা ট্রানজিট বন্দর ঘুরে, তারপর মাদার ভেসেলে করে এই পণ্য রফতানি হতো নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এতে ইউরোপ পৌঁছতে সময় লাগতো অন্তত দেড়মাস।

এ উদ্যোগকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলছে ব্যবহারকারীরা। আর সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকা রুটে জাহাজ চলাচলে উৎসাহ দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এদিকে ইউরোপ-আমেরিকা রুটে চলাচলকারী জাহাজকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডিমরাল এম শাহজাহান জানিয়েছেন, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম জাহাজটি যাওয়ার সম্ভবনা আছে। এরইমধ্যে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক যাত্রাও সম্পন্ন হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে প্রথম সরাসরি জাহাজটি যাবে ইটালির রেভেনা বন্দরে। সেখান থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের ক্রেতারা যার যার দেশে পণ্য নিয়ে যাবেন। ফলে আগের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ সময় লাগবে। খরচও অনেক কমে আসবে। মাসে দু’বার যাবে জাহাজটি।
বাংলাদেশে ইটালিয়ান শিপিং কোম্পানিটির এজেন্ট রিলায়েন্স শিপিং এন্ড লজিস্টিকসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রাশেদ জানিয়েছেন, করোনার সময় শিপিং এর ভাড়া দশ গুণেরও বেশি বেড়ে যায়। তখন ইউরোপের তৈরি পোশাক ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তাদের পাঠানো জাহাজে করে পণ্য নেয়ার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই সরাসরি এখন পণ্য যাওয়া শুরু হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এর ফলে আগে যেখানে ইউরোপে পণ্য পাঠাতে কমপক্ষে চল্লিশ দিন লাগত তা কমে ষোল দিনে নেমে আসবে। আর খরেও কমবে কমপক্ষে চল্লিশ শতাংশ বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
রিয়াল অ্যাডিমরাল এম শাহজাহান মনে করেন, প্রকৃত খরচ আসলে এর চেয়েও কমে আসবে। তিনি বলেছেন, যত বেশি জাহাজ সরাসরি চালু করা যাবে তত খরচ কমবে। আর একটি জাহাজ কতটি কন্টেইনার পরিবহণ করতে পারে তা জাহাজের আকারের ওপরও নির্ভর করে। জাহাজের আকার বড় হলে খরচ কমে।
তিনি বলেছেন, ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এটা শুরু হলে ধীরে ধীরে সরাসরি ইউরোপে পণ্য নিয়ে জাহাজ যাওয়ার সংখ্যা বাড়বে। এটা তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তার মন্তব্য।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ ইনকিলাবকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে আজ জাহাজে পণ্য পাঠানো শুরু হচ্ছে। পণ্য রফতানিতে ব্যবসায়ীদের জন্য বড় একটি সুযোগ। এটি সঠিকভাবে করা গেলে পণ্য রফতানিতে সময় ও খরচ বাঁচবে। তিনি বলেন, ইউরোপে পণ্য পাঠাতে কমপক্ষে ৪০ দিন লাগত তা কমে ১৬ দিনে নেমে আসবে। আর খরচ কমবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ। আশাবাদ ব্যক্ত করে ফয়সাল সামাদ বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে দেশ থেকে জাহাজে পণ্য পাঠানো শুরু হলেও ব্যয়সহ অন্যান্য সবকিছু ঠিক থাকলে এটি স্থায়ী ভাবেই সম্ভব হবে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেছেন, ইতালির তিনটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মিলে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি জাহাজে করে তৈরি পোশাক নেয়ার এই ব্যবস্থা করেছে। তিনি জানিয়েছেন, জাহাজ জটের কারণে ইটালির ক্রেতারা সরাসরি পণ্য নিতে চেয়েছিলো এবং তারা সফল হয়েছে। এখন ইউরোপের অন্যান্য দেশও আগ্রহী হবে। এটা আমাদের জন্য বড় সুযোগ। আমরাও চাচ্ছিলাম মাদার ভ্যাসেলে করে পোশাক পাঠাতে। আমাদের জন্য অনেক বড় সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেল।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে তৈরি পোশাকখাতে ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। আর এর ৬০ ভাগের ক্রেতাই ইউরোপের নানা দেশ।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Monjur Rashed ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:২২ পিএম says : 0
Amazing prospect.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন