রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বড় অপরাধে লঘুদণ্ড

অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি হয় না প্রশাসন কর্মকর্তাদের নভেম্বরে ৩২৫ অভিযোগ নিষ্পত্তি দুর্নীতি নির্মূল করতে অবশ্যই শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে : ড. বদিউল আলম মজুমদার

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি হয় না প্রশাসন কর্মকর্তাদের। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনের ডিসি, এডিসি, ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারসহ শত শত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এসব কর্তকর্তাদের মধ্যে অনেকেই পদোন্নতি পেয়েছেন আবার অনেকেই গুরুদণ্ড ও লঘুদণ্ড, তিরস্কার, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, ছাড় পাচ্ছেন প্রশাসনের ক্ষমতাধর কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি সাবেক দুইজন জেলা প্রশাসককে বিভাগীয় মামলায় শাস্তি দেয়া হলেও পরে প্রেসিডেন্ট তাদের দণ্ড মওকুফ করে দিয়েছেন। সেই কর্মকর্তারা আবার পদোন্নতি পাচ্ছেন। অথচ সর্বস্তরে সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তির মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুয়ায়ী বিভাগীয় মামলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

গত ২০২১ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৩২৫টি অভিযোগ পেয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সরাসরি অভিযোগ পেয়েছে ২৫২টি এবং অনলাইনে অভিযোগ পেয়েছে ৭৩টি। প্রশাসনের ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৬৫টি বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ জন কর্মকর্তাকে গুরুদণ্ড, ১১ কর্মকর্তাকে লঘুদণ্ড এবং ৯ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি এবং ১টি মামলা অন্যান্য পর্যায়ে নিষ্পত্তিসহ মোট ২২টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

অনেক সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর ৩(খ) ও ৩(ঘ) বিধি অনুযায়ী যথাক্রমে ‘অসদাচরণ’ ও দুর্নীতির অভিযোগ রুজুকৃত প্রমাণিত হয়েছে। তার পরেও বিধিমালার ফাঁক-ফোঁকোরে পার পাচ্ছেন। আবার অনেক কর্মকর্তার ক্ষেত্রে বিধি ৩(ঘ) অনুয়ায়ী আনীত দুর্নীতি এর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে পার পেয়ে যাচ্ছেন। আবার ৪(২) (খ) বিধি অনুসারে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা নামীয় লঘুদণ্ড প্রদান এবং একই ধারায় দণ্ডাদেশ বাতিল করে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাচ্ছে। আবার তদবিরের জোরে অনেক অপরাধ আমলে না নিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। গত বছর ৮ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সভায় বিভাগীয় মামলা দ্রুত সময়ে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং তদন্তকারী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় তাগিদ প্রদান করা হয় বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম ইনকিলাবকে বলেন, প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে মামলা করার সুযোগ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রফেসর ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মোসলেহ উদ্দীন ইনকিলাবকে বলেন, বিভাগীয় মামলায় দেয়া দণ্ড মওকুফ করা হলে এক দিকে অসৎ কর্মকর্তারা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে ভালো কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিতে পারে। ফলে জনপ্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে জনবান্ধব প্রশাসন গড়তে সরকারের যে পদক্ষেপ তা কার্যকর হবে না। এ জন্য দণ্ড একেবারে মওকুফ না করে গুরুদণ্ড পাওয়া কর্মকর্তাকে লঘুদণ্ড দিয়ে শাস্তি কমানো যেতে পারে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, যেসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে কেবল সেসব ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। তাই দুর্নীতি নির্মূল করতে অবশ্যই অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যারা তদন্তের সাথে যুক্ত আছেন তাদের খেয়াল রাখতে হবে, যেন অপরাধ করে কেউ ছাড়া না পায়, আবার নিরপরাধ কারো যেন শাস্তি না হয়। ঢালাওভাবে দণ্ড মওকুফের বিষয়টি সুশাসনের পরিপন্থী। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দণ্ড মওকুফ করা হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিভাগীয় মামলার তদন্ত বিলম্বিত হলে কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্য অনেক কিছু ঝুলে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলায় যথাযথ শাস্তি হয় না। নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে ও কৌশলে গুরুদণ্ডকে লঘু আর লঘুদণ্ডকে শাস্তির বাইরে রাখা হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি সাবেক দুইজন জেলা প্রশাসককে বিভাগীয় মামলায় শাস্তি দেয়া হলেও পরে প্রেসিডেন্ট তাদের দণ্ড মওকুফ করে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে নেয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এ অনিয়ম, অবহেলা ও দুর্নীতির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক এই প্রকল্পে সারা দেশে পৌনে ৯ লাখ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে ঘর দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে গত ২০১৯ সালে কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় সোয়া লাখ উপকারভোগীকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ঘরের বিষয়ে বিভিন্ন সময় অনিয়ম-দুর্নীতির কথা উঠে এলে সে বিষয়ে তদন্তে নামেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তদন্তে ৩৬টি উপজেলার অনিয়মের তথ্য গত বছর প্রকাশ করা হয়। তারই ভিত্তিতে ইউএনও ও এসি ল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী পাঁচজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। কিন্তু জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮-এর ৩(ক), ৩(খ) ও ৩(গ) বিধি অনুযায়ী অদক্ষতা, অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে সরকারের বহুল আলোচিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম নিয়ে এখনো চলছে তোলপাড়। এরই মধ্যে পাঁচজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করায় গাইবান্ধা সদরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শফিকুর রহমানকে দুই বছরের জন্য এক ধাপ পদাবনতি ও আত্মসাৎ করা টাকা নিজের বেতন থেকে পরিশোধের শাস্তি দেয়া হয়েছে।

বাকিদের দুর্নীতি তদন্তের কাজ করছে কমিটি। আরো অনেক কর্মকর্তা শাস্তির মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানা গেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে কোনো ঠিকাদার নিয়োগ না করে সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছে। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরসরি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত এক আদেশে তার এই শাস্তি এবং টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়। আদেশে বলা হয়, মোহাম্মদ শফিকুর রহমান গত বছরের ২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দাখিল করলে তার জবাব সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার ৪(৩) (ক) বিধি অনুযায়ী নিচু পদে অবনমিতকরণ এবং আত্মসাৎকৃত ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮০ টাকা তার বেতন-ভাতা থেকে আদায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গুরুদণ্ড আরোপের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশনের মতামত চেয়ে ১১ মার্চ চিঠি পাঠানো হয়।

সরকারি কর্মকমিশন মোহাম্মদ শফিকুর রহমানকে নিচু পদে অবনমিতকরণ ও আত্মসাৎকৃত ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮০ টাকা তার বেতন-ভাতা থেকে আদায়ের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে ১৮ আগস্ট চিঠি পাঠায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮-এর বিধি ৪(৬) অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের জন্য সারসংক্ষেপ পাঠালে তা অনুমোদন পায়। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসনকে (ডিসি) বিপদে ফেলা ও বিব্রত করার চেষ্টাসহ নানা ধরনের অভিযোগ ছিল তৎকালীন উপসচিব আবু জাফর রাশেদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ প্রমাণিতও হয়। এর শাস্তি হিসেবে পরিপ্রেক্ষিতে তিন বছরের জন্য তার বেতন গ্রেড নিম্নতর ধাপে নামিয়ে আনা হয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি আবু জাফর রাশেদকে লঘুদণ্ড দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (উপসচিব) থাকার সময় আবু জাফর রাশেদ (বর্তমানে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব) তৎকালীন জেলা প্রশাসককে (মুন্সিগঞ্জ) দ্বিতীয় স্ত্রীর মাধ্যমে বিপদে ফেলা ও বিব্রত করার চেষ্টা করেছিলেন।

তিনি সরকারের একজন উপসচিব হয়েও মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন সম্পর্কে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মাধ্যমে সিনিয়র কর্তাব্যক্তিদের কাছে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ায় সহযোগিতা করে প্রশাসনের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮’ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী আনিত ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়। ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮’ এর ৪(২)(ঘ) বিধি অনুসারে তাকে ‘৩ বছরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ’ লঘুদণ্ড দেয়া হয়।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে দেয়া ঘর নির্মাণে ৯ কর্মকর্তার দুর্নীতি প্রমাণিত এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। তাদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে সাবেক ইউএনও (বর্তমানে উপসচিব) শফিকুল ইসলাম, বগুড়ার শেরপুরের সাবেক ইউএনও মো. লিয়াকত আলী শেখ (বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক), মুন্সীগঞ্জ সদরের সাবেক ইউএনও রুবায়েত হায়াত, বরগুনার আমতলীর ইউএনও মো. আসাদুজ্জামান ও মুন্সীগঞ্জ সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিনকে ওএসডি করা হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগে পদায়নের জন্য ন্যস্তকৃত মোহাম্মদ শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই শাস্তি দিয়ে আদেশ জারি করেছে।

গত বছরের ৩০ জুলাই থেকে মুলতবি রয়েছে মুন্সীগঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং বর্তমানে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সচিব আবু জাফর রাশেদের মামলা। তার বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করা এবং স্ত্রী সন্তানদের খোঁজখবর না রাখার অভিযোগ রয়েছে। এই মামলাটি তদন্ত করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুর রউফ মিয়া। এখনো তার বিচার হয়নি।

ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল এবং বর্তমানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আইন কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. ইকরামুল হক সরকারের বিরুদ্ধে গত বছরের ১০ আগস্ট বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। তিনি নোয়াখালীর ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন নোয়াখালী এবং লক্ষ্মীপুরের খিলপাড়া ও দত্তপাড়া ডাকঘরে যথাক্রমে ২০ কোটি ৩৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ কর্তৃক দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে ডাকঘর দু’টিতে যথাযথ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি মর্মে মন্তব্য রয়েছে। প্রতিবেদনে মনিটরিংয়ের দায়িত্বে যাদের নাম বলা হয়েছে তাদের মধ্যে নোয়াখালীর সাবেক ডেপুটি পোস্টমাস্টার মো. ইকরামুল হক সরকার অন্যতম। তার এই মামলাটি তদন্ত করছেন বিএডিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) এ এফ এম হায়াতুল্লাহ।

বিপিএটিসির সাবেক পরিচালক (উপসচিব) বর্তমানে এনটিআরসিএর পরিচালক তাহসিনুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। ৬৪তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স এবং ১১৮তম এসিএডি প্রশিক্ষণ কোর্সের অব্যয়িত ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দেয়ায় তার বিরুদ্ধে অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়। এই মামলাটি তদন্ত করছেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) জাবেদ আহমেদ প্রধান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার মো. সারোয়ার সালামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয় গত বছরের ১৩ আগস্ট। বর্তমানে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে স্ত্রী-সন্তানের খোঁজখবর না রাখা এবং সহকর্মীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সেলিনা খানম। সিলেট সদরের সাবেক সহকারী কমিশনার খালেদা খাতুন রেখার বিরুদ্ধে মামলাটির তদন্ত শুরু হয়েছে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর। তিনি বর্তমানে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। তার মামলাটির তদন্ত করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আলাউদ্দীন আলী।

সিলেট মহানগর রাজস্ব সার্কেলের সাবেক সহকারী কমিশনার মিজ শবনম শারমিন এর বিরুদ্ধে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর তদন্ত শুরু হয়েছে। বর্তমানে তিনি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে সহকারী পরিচালক পদে রয়েছেন। তার অভিযোগ তদন্ত করছেন সিলেট জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার সাদাত। কুড়িগ্রামের সাবেক সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে হওয়া মামলা তদন্ত করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু কায়সার খান। নাজিম উদ্দিন সরকারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী মো. আলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। আলিমউল্লাহ বর্তমানে খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজের মামলা তদন্ত করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সেলিনা খানম। আসিফ ইমতিয়াজ বর্তমানে ওএসডি অবস্থায় রয়েছেন। নীলফামারী জেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড মো. আরিফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাকিয়া সুলতানা। গত ২০২০ সালের ৩০ জুলাই মামলাটি করা হয়। কক্সবাজারের পেকুয়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা সাহাদাতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় গত বছরের ২০ ডিসেম্বর। তিনি বর্তমানে পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত রয়েছেন। এই মামলাটি তদন্ত করছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আশফাকুল হক চৌধুরী।

এ ছাড়া মামলা চলমান রয়েছে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং বর্তমানে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) সুমিত সাহা, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সহকারী সচিব (ক্যাডার-বহির্ভূত) জুলহাজ আলী সরকার, বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের সাবেক উপপরিচালক (সিনিয়র সহকারী সচিব) মোহাম্মদ ফারুক আহমদ, ভোলার দৌলতখান উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমানে জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জীতেন্দ্র কুমার নাথ, সাবেক বগুড়ার গাবতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বর্তমানে জাপানে অধ্যয়নরত মোহাম্মদ শামীম সোহেল, নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক উপপরিচালক মো. সাইদুর রহমান, বগুড়ার সাবেক সহকারী কমিশনার এবং বর্তমানে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সহকারী কমিশনার জগৎবন্ধু মণ্ডল, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সারওয়ার আলম, নওগাঁ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বর্তমানে বালিয়াডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুল হাসানের বিরুদ্ধে। বর্তমানে মামলার তদন্ত ঝুলে রয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিভাগীয় মামলার তদন্ত বিলম্বিত হলে কর্মকর্তাদের পদোন্নতিসহ প্রাপ্য অনেক কিছু ঝুলে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলায় যথাযথ শাস্তি হয় না। নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে ও কৌশলে গুরুদণ্ডকে লঘু আর লঘুদণ্ডকে শাস্তির বাইরে রাখা হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি সাবেক দুইজন জেলা প্রশাসককে বিভাগীয় মামলায় শাস্তি দেয়া হলেও পরে প্রেসিডেন্ট তাদের দণ্ড মওকুফ করে দিয়েছেন।

বালুমহালের ইজারার টাকা সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায় মৌলভীবাজার ও নীলফামারীর সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) নাজিয়া শিরিনের বিরুদ্ধে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে বিভাগীয় মামলা শেষে তাকে লঘুদণ্ড দেয়া হয়। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে নাজিয়া শিরিন প্রেসিডেন্টের কাছে আপিল করলে প্রেসিডেন্ট নাজিয়া শিরিনের আপিল আবেদন বিবেচনা করে আগে প্রদত্ত ২ বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার সাজা বাতিল করে তাকে দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করেন।

কুড়িগ্রামের আলোচিত সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে দেয়া লঘুদণ্ড মওকুফ করেছে সরকার। অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এর আগে তার দুই বছরের বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা হয়। মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে অভিযুক্ত সুলতানা পারভীনকে এই শাস্তি দেয়া হয়েছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন গত ২৩ নভেম্বর জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রামাণিত হলেও এভাবেই ছাড়া পাচ্ছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:৫৮ এএম says : 0
হবে না হবে না রে ও পাগলমন আমাদের জনগণের আশা পুরন হবে না,আমরা যে কাল সাপ ঘরে এনেছিরে পাগল মন সবাই কে মারবেরে সেই কাল সাপ,যত আশাকরি আনলিরে কাল নাগ নাগিনির আমলাতান্ত্রিক চৌরাচার দলীয় সংসদীয় পদ্ধতি ও তুই মরবি জনম ভরে সেই বিষে হবে রে তের মরন,ও মন ভুল করিলি রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি বাতিল করলি ও মন চিন্তা করলি না রে ঐ সময় রে মন কি ভুল করলি,ও তুই হাতে দরে আনলি বিপদ(2)চিন্তা করে দেখলি না,ও তুই জলবি সারাজীবন এই বিষাক্ত বিষে রে মন ,শান্তি তের হবে না,।
Total Reply(0)
মোঃ কামরুজ্জামান ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:০৫ এএম says : 0
এই রিপোর্টটা পড়লেই বোঝা যাবে দেশে আসলে কতটা বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে।
Total Reply(0)
সুশান্ত কুমার্ ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:০৫ এএম says : 0
অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের লাগাম টানা যাচ্ছে না।
Total Reply(0)
মামুন রশিদ চৌধুরী ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:০৬ এএম says : 0
সরকার যখন সকল অপরাধের পৃষ্ঠপোষক হয় তখন সেই রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা বলে কিছু বাকি থাকে না।
Total Reply(0)
নিলিমা জাহান তনুশ্রী ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:০৭ এএম says : 0
আমলাদের ওপর নির্ভর কলে ক্ষমতায় থাকলে হলে এটা করা ছাড়া উপায় নেই। দেশটাকে এই সরবার ধ্বংসে করেদিলো।
Total Reply(1)
jack ali ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ পিএম says : 0
দেশটাকে ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগরা 72 সাল থেকে
জাকির হুসাইন মাদারীপুরী ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:০৭ এএম says : 0
সরকারি কর্মকর্তাদের অপরাধের যথাযথ শাস্তি হতে হবে।
Total Reply(0)
রনি জনি সাথী ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৩:০৮ এএম says : 0
ইনকিলাবকে ধন্যবাদ, একটা সাহসী প্রতিবেদন তুলে ধরারজন্য।
Total Reply(0)
jack ali ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১১:৫৮ এএম says : 0
যদি আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ চলতো তাহলে ...........র বাপের সাধ্য হতো না দুর্নীতি করার>>>>
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন