১১ আগস্ট ২০১৭-তে কনফেডারেট মূর্তি অপসারণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে মৌলবাদী সংগঠনগুলো ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলে জড়ো হয়েছিল। পরের দিন এক শ্বেতাঙ্গবাদী পাল্টা-প্রতিবাদকারীর ভিড়ের ভেতর গাড়ি চালিয়ে দিয়ে তাদের একজনকে হত্যা করে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে, পরিষেবার শর্তাবলীতে ঘৃণা উদ্গীরণ নিষিদ্ধকারী অনলাইন-অর্থ লেদেনকারী সংস্থা পেপ্যাল ঘৃণামূলক প্রচারণার জন্য অর্থ সংগ্রহকারী চরমপন্থীদের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে দেয়। অ্যাপল পে এবং গুগল ওয়ালেটও তাই করেছে। ক্রেডিট-কার্ড ফার্ম ভিসা, ডিসকভার এবং অনলাইন কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম প্যাট্রেয়নও একই পথ অনুসরণ করে। এরপর, সহিংস মৌলবাদীরা তাদের কার্যক্রম চালানোর অর্থ সংগ্রহের জন্য সুবিধাজনক প্ল্যাটফর্মের খোঁজে নামে এবং এ কাজের জন্য তাদের অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বেছে নেয়।
এরই রেশ ধরে অ্যাডভোকেসি গ্রুপ সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টার (এসপিএলসি) ৬শ’রও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকারীর ঠিকানা চিহ্নিত করেছে, যা মৌলবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন অ্যান্ড্রিউ অ্যাঙলিনের সাথে যুক্ত নয়া-নাজি ওয়েবসাইট ‘ডেইলি স্টমার’র প্রকাশক শ্বেতাঙ্গ-আধিপত্যবাদী হ্যাকার অ্যান্ড্রিউ আওরেনহেইমার এবং শেতাঙ্গবাদীদের অনলাইন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ডন ব্ল্যাক। তারা তাদের ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের ওয়ালেটের বিজ্ঞাপন দেন এবং অনুদানের জন্য অনুরোধ করে থাকেন। এবং তারা তা পেয়েও যান। বিটকয়েনের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে বিতাড়িত মৌলবাদী পডকাস্টার স্টেফান মলিনেক্স ১৬ লাখ ৭০ হাজার ডলারেরও বেশি পেয়েছেন। অ্যাঙলিন ১শ’রও বেশি বিটকয়েন (৩৮ লাখ ডলার) পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
বর্তমানে আমেরিকানদের প্রায় ১৬ শতাংশ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার বা লেনদেন করে থাকেন। কিন্তু এসপিএলসি’র ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের লেখকরা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করেন না, এমন অন্তত একজন বিশিষ্ট আমেরিকান শে^তাঙ্গ-আধিপত্যবাদীকে খুঁজে পেতে ব্যাপক সংগ্রাম করেছেন। উগ্রপন্থার সাথে সংশ্লিষ্ট থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ-এর টিম স্কুইরেল বিশ্বাস করে যে, এদের বেশিরভাগই বিকেন্দ্রীকরণ প্রচেষ্টার সাথে সম্পর্কিত। যারা প্রচলিত অর্থ লেনদেনের প্ল্যাটফর্মগুলোর নজরদারির কারণে বিতাড়িত, তাদের কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি অনন্য সুবিধা।
তবে, এসব চরমপন্থীদের জন্য বিটকয়েন একসময় কোনও সমাধান ছিল না। বিটকয়েন ব্লকচেনের যেকোনো লেনদেন সর্বজনীন ও স্বচ্ছ ছিল এবং যখন একবার কোনো বেনামি ওয়ালেটকে চরমপন্থী গোষ্ঠীর অন্তর্গত হিসাবে চিহ্নিত করা হতো, গবেষকরা দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যক্তিদের লেনদেন নিরীক্ষণ করতে সক্ষম হতেন। সাইবার হুমকি বিশেষজ্ঞ জন ব্যাম্বেনেকের তৈরি টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘নিওনাজি বিটকয়েন ট্র্যাকার’ গত তিন বছর ধরে ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছে যে, তখন থেকেই লেনদেন লুকাতে ক্রিপ্টোতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে ‘মনোরো’র মতো গোপনীয়তা অবলম্বনের টোকেন তৈরি হয়েছে। এই টোকেনের মাধ্যমে চরমপন্থী দলগুলো সম্ভবত সহিংস বর্ণবাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
ক্রিপ্টো বর্তমানে সহিংস বর্ণবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত হলেও, এটি মূলত ঐতিহ্যবাহী ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার বিরোধীদের প্ল্যাটফর্ম। তবে, এটি ইহুদিদেরও প্ল্যাটফর্ম, যারা বিশ্বাস করে যে, ব্যাঙ্কগুলো খুব বেশি ক্ষমতা ধরে রাখে, কারণ তারা ব্যবসার উপর ইহুদি নিয়ন্ত্রণের ভয় পায়। এরা সবাই একটি স্বাধীন বা বিকেন্দ্রীকৃত আর্থিক ব্যবস্থার ধারণায় প্রলুব্ধ। তাই চরমপন্থীদের কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি দরকারী অর্থ ভান্ডার হয়ে উঠেছে, যা অভিজাত ও ব্যাঙ্কারদের থেকে তাদের অর্থকে নিরাপদে রাখে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির ধারণাটি এখন প্রযুক্তির মতো অন্যান্য খাতেও প্রসারিত হতে শুরু করেছে, যেখানে নজরদারির মাধ্যমে সাদা আধিপত্যবাদীদের বিরত রাখার চেষ্টা করা হতো। তবে, বিটকয়েন এবং এর সমগোত্রীয় ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ হলে চরমপন্থীরা সেগুলো স্বাধীনভাবে ব্যবহার করার ক্ষমতা পাবে। স্কুইরেল বলেছেন, ‘চরমপন্থ’ীদের স্বপ্নগুলোর মধ্যে অন্যতম হ’ল, শুধুমাত্র একটি ব্লকচেন ক্রিপ্টোকারেন্সি নয়, বরং একটি বিকেন্দ্রীভূত ভবিষ্যৎ যেখানে তাদের মূলধারার অবকাঠামোর উপর নির্ভর করতে হবে না।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন