সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ে বাড়ছে গতি

ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস জটলা নিরসনে নির্বিকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিছুটা হলেও ফিরছে স্বস্তি

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৩ এএম

সউদীগামী কর্মীদের ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ে ধীরে ধীরে বাড়ছে গতি। এতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরছে। ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বর্তমানের প্রতি সপ্তাহে জমাকৃত ত্রিশটি পাসপোর্টের মধ্যে বিশটিতে ভিসা স্ট্যাম্পিং করে সরবরাহ করছে। পুরো ত্রিশটি পাসপোর্টে ভিসা স্ট্যাম্পিং না হওয়ায় এখনো রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোতে ভিসার জন্য পাসপোর্টের স্তূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির অফিসে সরেজমিন গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।

এত দিন কোনো কারণ ছাড়াই দূতাবাস কর্তৃপক্ষ সপ্তাহে একদিনে জমাকৃত পাসপোর্টের মধ্যে অর্ধেক ভিসা স্ট্যাম্পিং করে বাকি পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই ফেরত দিত। এতে সউদী গমনেচ্ছু হাজার হাজার কর্মী চরম ভোগান্তির শিকার হন। ফলে অনেক সউদীগামী কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়েই দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত দশ হাজার টাকা ব্যয় করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে পুনরায় ভিসার জন্য দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়। দূতাবাস থেকে চাহিদানুযায়ী ভিসা না পাওয়ায় সউদীতে কর্মী পাঠাতে না পেরে বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছে এজেন্সিগুলো। ফলে সউদী শ্রমবাজার নিয়ে নানা শঙ্কা দেখা দেয়।
কিন্তু কি কারণে দূতাবাসে জমাকৃত ত্রিশটি পাসপোর্টের সব ক’টিতে ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না তা জানা যায়নি। এ নিয়ে ভুক্তভোগী রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও বায়রার সাবেক নেতৃবৃন্দ দূতাবাস থেকে কম ভিসা ইস্যু এবং জমাকৃত পাসপোর্ট ভিসা না লাগিয়ে ফেরত দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দূতাবাসের সাথে আলোচনা করে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোনো সাড়া পাননি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নির্বিকার।

এদিকে টিকিট সঙ্কটের বেড়াজালে বিদেশগামীরা। এয়ারলাইন্সগুলো সিন্ডিকেট করে টিকিটের মূল্য তিন গুণ বৃদ্ধি করায় টিকিটের টাকা যোগাতে প্রবাসী কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। সউদী দূতাবাস থেকে যেসব ভিসা স্ট্যাম্পিং হয়ে এজেন্সির হাতে পৌঁছেছে সেসব যাত্রীর টিকিট সঙ্কটের দরুন দেশটিতে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বায়রার সাবেক ইসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহের শেষ দিকে ত্রিশটি পাসপোর্ট জমা নিয়ে বিশটিতে স্ট্যাম্পিং করে সরবরাহ করতে শুরু করেছে। এতে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরছে। তিনি সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রতি সপ্তাহে ত্রিশটি পাসপোর্টে ভিসা স্ট্যাম্পিং করার অনুরোধ জানান। বায়রার ওই সাবেক নেতা বলেন, সউদীগামী বিমানের টিকিট বর্তমানে ৮০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তিনি সিন্ডিকেট রোধ করে বিদেশগামী গরিব অভিবাসী কর্মীদের টিকিটের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণের জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বিএমইটির সূত্র জানায়, করোনা মহামারির পর ২০২১ সালে সউদী আরবসহ বিভিন্ন দেশে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন নারী-পুরুষ কর্মী কর্মসংস্থান লাভ করেছে। গত জানুয়ারি মাসে সউদীসহ বিভিন্ন দেশে ১ লাখ ৯ হাজার ১৪৮ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দু’দিনেই ১৭ হাজার কর্মী বিএমইটি থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র লাভ করেছে। কিন্তু বিমানের টিকিট সঙ্কটের দরুন এসব কর্মী স্ব-স্ব কর্মস্থলে যেতে পারছেন না।

জনশক্তি রফতানির সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সউদীতে বর্তমানে বিশ লক্ষাধিক বাংলাদেশি নারী-পুরুষ কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। সউদী নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে দ্রুত কর্মী পাঠাতে তাগিদ দিচ্ছে। যথাসময়ে কর্মী পাঠাতে না পারায় অনেক সউদী নিয়োগকর্তা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়েছে। কয়েক মাস আগে সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক সপ্তাহে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটি পাসপোর্টে ভিসা স্ট্যাম্পিং করে সরবরাহ করেছিল। তখন এজেন্সির মালিকদের মাঝে আনন্দের ঢেউ বয়ে যায়। গতকাল রাজধানীর নয়া পল্টনস্থ একটি রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী ইনকিলাবকে বলেন, মঙ্গলবার থেকে আমরা সউদী দূতাবাসে ত্রিশটি পাসপোর্ট জমা দিয়ে বিশটি ভিসা স্ট্যাম্পিং পেয়েছি। সউদী ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এটা একটি শুভ লক্ষণ। তিনি বলেন, যথাসময়ে চাহিদানুযায়ী ভিসা না পাওয়ায় গরিব কর্মীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের দুর্ভোগ লাঘবে তিনি প্রতি সপ্তাহে জমাকৃত ত্রিশটি পাসপোর্টেই ভিসা স্ট্যাম্পিং করার জোর দাবি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সউদী দূতাবাসের তালিকাভুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোতে এখনো বিপুল সংখ্যক পাসপোর্ট ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য পড়ে রয়েছে। অপেক্ষমাণ এসব পাসপোর্টে দ্রুত ভিসা লাগানো সম্ভব না হলে অনেক যাত্রীরই স্বাস্থ্য পরীক্ষার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। তিনি গরিব প্রবাসী কর্মী ও দেশের স্বার্থে এসব সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনের জোর দাবি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Mamunur Rashid ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
Very good news.
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
এয়ারলাইন্সগুলো সিন্ডিকেট করে টিকিটের মূল্য তিন গুণ বৃদ্ধি করায় টিকিটের টাকা যোগাতে প্রবাসী কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে
Total Reply(0)
Mamunur Rashid ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৮:০৫ এএম says : 0
দূতাবাসের সাথে আলোচনা করে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন