সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদত

তাওসীফ আহমাদ | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৯ এএম

হক আরবি শব্দ। এর অন্যতম একটি অর্থ হলো অধিকার, দাবি, পাওনা। ইসলামে হককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদ। হাক্কুল্লাহ হলো মহান আল্লাহর হক এবং হাক্কুল্লাহ ইবাদ হলো বান্দার হক। এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আমি গাধার ওপর নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে সওয়ার ছিলাম। তিনি বললেন, হে মুআয! তুমি কি জানো, বান্দার ওপর আল্লাহর হক কী এবং আল্লাহর ওপর বান্দার হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই অধিক জানেন। তিনি বললেন, বান্দার ওপর আল্লাহর হক এই যে, সে তার ইবাদত করবে, এতে তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর ওপর বান্দার হক এই যে, যে ব্যক্তি তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না, তিনি তাকে আজাব দেবেন না। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কী লোকদের (এ) সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন, তাদের সুসংবাদ দিয়ো না। কেননা, তারা (এরই ওপর) ভরসা করে বসবে। (সহিহ্ বোখারি : ২৮৫৬)।
মহান আল্লাহর প্রতি মানুষের হক, তার দেওয়া আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। তার সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। তার ইবাদত করা। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না, তাদের যারা দাম্ভিক, অহংকারী।’ (সুরা আন নিসা : ৩৬)।
কোরআন মজিদে আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করবেন না, আর এছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করল অবশ্যই সে চরম ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হলো।’ (সুরা আন-নিসা : ১১৬)। মানুষের অধিকার হলো, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ভালোবাসা, সবার সেবা করা, সাহায্য-সহযোগিতা করা। একজন মুসলিম অপর মুসলিমের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্র যে হক আদায় করতে হয়, তা হচ্ছে সালাম বিনিময় করা। সালাম বিনিময় শুধু একজন মুসলিমের সঙ্গে অপর মুসলিমের হক আদায় নয়, এর মাধ্যমে সম্প্রীতি বাড়ে, শত্রুতা কমে। পরস্পরের জন্য কল্যাণের দোয়া করা হয়।
পরিবার, সমাজ ও মানবসেবাও হলো হাক্কুল ইবাদের অন্যতম দিক। হাদিস শরিফে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (সহিহ্ মুসলিম : ২৫৬৬)।
অভাবী মানুষকে সহায়তা করা, তাদের তরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া, বস্ত্রহীনকে পোশাক-আশাক দিয়ে সহায়তা করাও সওয়াবের কাজ।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় বস্ত্র দিলে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরাবেন।’ (সুনানে তিরমিজি : ২৮৩৫)। হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন, খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৭৫২)।
অন্নহীনকে খাবার দেওয়াও হাক্কুল ইবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হাদিসে এ প্রসঙ্গে ইরশাত হয়েছে, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করে দাও।’ (সহিহ্ বোখারি : ২৪১৭)। হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ক্ষুধার্তকে খাবার দান করতে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ভিক্ষুক (ক্ষুধার্তকে) কিছু না কিছু দাও, আগুনে পোড়া একটি খুর হলেও।’ (আহমাদ : ১৬৬৯৯)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন