শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অবৈধ প্রেম পরকীয়া-ব্যভিচার থেকে বাঁচুন

খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৮ এএম

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস একটি অবৈধ প্রেম, পরকীয়া, যিনা-ব্যভিচার প্রদর্শনীর ধ্বংসাত্মক খেলা। ভালোবাসা দিবসের কার্যক্রম শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। এগুলো থেকে বেঁচে থাকা মুসলমান নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী সকলের জন্য অপরিহার্য। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।

ঢাকা শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহ মানব ও জিন জাতিকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছন। এর দ্বারা তিনি তাদেরকে ঈমানদার এবং সৎ চরিত্রবান বানিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাতে চান। পক্ষান্তরে ইবলিস এবং তার দোসর একদল দুষ্ট লোক মানুষদেরকে বেইমান এবং চরিত্রহীন বানিয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করাতে চায়। যুগে যুগে মানবজাতিকে চরিত্রহীন করার জন্য ইবলিস এবং তার দোসররা বিভিন্ন দিবস আবিষ্কার করেছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এটি একটি অবৈধ প্রেম, পরকিয়া, যিনা-ব্যভিচার প্রদর্শনীর ধ্বংসাত্মক খেলা। শরীয়তের দৃষ্টিতে এ দিবসের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হারাম। এগুলো থেকে বেঁচে থাকা মুসলমান নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী সকলের জন্য অপরিহার্য।

হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা মাতা, সন্তানাদি এবং গোটা মানবজাতি থেকে প্রিয় না হবো।’ (বুখারি ও মুসলিম)। সুতরাং, আল্লাহ, রাসূল এবং ইসলামের আদেশাবলি পালনের তুলনায় অন্য কোনো জিনিসের ভালোবাসা বেশি থাকলে সে শাস্তির উপযুক্ত হবে, জান্নাত লাভ করতে পারবে না। আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের ছহি বুঝ দান করুন। আমিন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকী গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, রজব মহিমান্বিত মাসের মধ্যে একটি মাস। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘যখন আকাশ ও জমিনকে তিনি সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই তিনি বারটি মাসের গণনার বিধান করেন। তারমধ্যে চারটি মাস মহিমান্বিত মাস। এটাই প্রতিষ্ঠিত বিধান। এতে তোমরা নিজেদের ওপর জুলুম করো না।’ সূরা তাওবা, আয়াত-৩৪। এই মাসগুলো হলো জিলক্বাদ, জিলহজ্জ, মুহাররম ও রজব। এই মাস আমাদেরকে রমজানের ইবাদতের জন্য প্রস্তুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসূলে পাক (সা.)-কে রজব ও শাবন মাসে এতবেশি রোজা রাখতে দেখেছি, রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত রোজা রাখতে দেখিনি। স্রষ্টার পরে মাখলুকের মধ্যে রাসূলে পাক (সা.) এর প্রথম স্থান হওয়ার পরেও তিনি রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে রজব মাস থেকে রোজা রাখা শুরু করতেন। খতিব বলেন, নবী করীম (সা.) রজব মাস শুরু হলে এ দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতেন ’হে আল্লাহ্! রজব আর শাবান মাসে আমাদেরকে বরকত দান করে রমজান পর্যন্ত আমাদের জীবন দীর্ঘ করে দাও। অতএব, রজব এবং শাবান মাসে এ দোয়াটি আমাদেরও বেশি বেশি পাঠ করা উচিত এবং রজব মাসে রোজা, নামজ বিভিন্নমুখী ইবাদতের মাধ্যমে রমজানের জন্য প্রন্তুতি নিতে হবে। রজব মাসের শিক্ষা নিয়ে ঈমানের বলে বলিয়ান হওয়ার, শিরক বর্জন করার আল্লাহ্ তায়ালা যেন তৌফিক দান করেন। আমিন।

ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম খুৎবা-পূর্ব জুমার বয়ানে বলেন, কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে মা বাবার আনুগত্য ও খেদমত করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফরজে আইন ইবাদত। আধুনিক সভ্যতায় ব্যক্তি ও স্ত্রী সন্তান কেন্দ্রিক জীবনে মা বাবার প্রতি মানুষের অবহেলা সীমাহীন। অথচ এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ মহান স্রষ্টার পরে তার অস্তিত্বের জন্য তার মা বাবার নিকট ঋণী। এই ঋণ পরিশোধযোগ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না এবং মা বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। মা বাবা উভয়ে বা তাদের একজন যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে তাদেরকে ‘উফ’ বলবে না, (তাদের প্রতি সামান্যতম বিরক্তি প্রকাশ করবে না) তাদেরকে ধমক দিবে না এবং তাদের সাথে সম্মানজনক বিনম্র কথা বলবে। মমতাবশে তাদের জন্য নম্রতার পক্ষ পুট অবনমিত করে রাখবে এবং বলবে হে আমার রব, আপনি তাদেরকে দয়া করুন যেমনভাবে তারা শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছেন। তোমাদের অন্তরে কি আছে তা তোমাদের রব্ব ভালো জানেন। তোমরা যদি সৎকর্মশীল হয় তবে তিনি আল্লাহ মুখীদের ক্ষমাকারী।’ (সূরা বানী ইসরাইল : ২৩-২৪)। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে মা বাবার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা, সর্বোচ্চ ভক্তি ও সর্বোচ্চ খেদমত করা, বিশেষ করে বৃদ্ধকালে মা বাবার প্রতি খুবই যত্নবান হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন।

মীরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদ এর খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী গতকাল খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, ইসলামে তথাকথিত দিবস পালনের কোনো স্থান নেই। মুসলমানের জীবনের সবটুকু সময়ই আল্লাহর ইবাদাতে ব্যয় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কারণ মানুষের সৃষ্টিই আল্লাহর ইবাদাতের লক্ষ্যে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমি জ্বীন এবং ইনসান (মানব জাতিকে) কেবল আমার ইবাদাতের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। (সূরা যারিয়াত, আয়াত নং ৫৬)। ইসলামে যে সব দিবস বা রাতের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া আছে তার সবগুলোই ইবাদারে সাথে সংশ্লিষ্ট। বর্তমানে তথাকথিত যেসব দিবসসমূহ পালিত হয় তার অধিকাংশই কোনো না কোনো গুনাহের কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট। নাচ-গান অশ্লীলতা-বেহয়াপনা চরিত্র বিধ্বংসী কার্যকালাপে জর্জরিত। বিধায় ঐসব দিবস পালন ও তার কার্জসমূহও ইসলামে নিষিদ্ধ ও হারাম। কিছু কিছু বিষয় শিরকের অন্তর্ভুক্ত বড় গুনাহের কাজ। যেমন ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভ্যালেন্টাইন দিবস’ যা আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবস নামে পরিচিত। এ দিবসে আমাদের দেশের এক শ্রেণির তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী এমনকি বুড়া-বুড়িরা পর্যন্ত কেউ কেউ নাচতে শুরু করে! তারা পাঁচতারা হোটেল পার্ক, উদ্যান, লেকপাড়, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসে ভালোবাসা বিলাতে। অথচ তাদের নিজেদের ঘর সংসারে ভালোবাসা নেই। এ ধরনের অবৈধ ভালোবাসা শরীয়ত বহির্ভূত প্রেম বিনিময় সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ সবাইকে সকল প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
জহির ইসলাম ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:২৮ পিএম says : 0
আমি এক মত
Total Reply(0)
jack ali ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:১০ পিএম says : 0
In Islam is action. Prophet SAW] and his Sahabah never give lip service then went to action. If do not rule by Qur'an then situation will be more worse.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন