পরিবেশ দূষণের দায়ে সাভারের চামড়া শিল্পনগরী (ট্যানারি) বন্ধ করতে যাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশে শিগগিরই ট্যানারি শিল্প বন্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে অধিদপ্তর। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শিগগিরই ট্যানারি শিল্প বন্ধ করা হবে। সংসদ ভবনে গতকাল অনুষ্ঠিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাফর আলম, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এবং মো. শাহীন চাকলাদার অংশ নেন।
বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ট্যানারি শিল্প কেন বন্ধ করা হবে না এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা ওই নোটিশের জবাব দিয়েছে এবং কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। তাদের ওই জবাব আমাদের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি। এজন্য আমরা ট্যানারি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছি। পরিবেশ মন্ত্রী এ বিষয়ে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। এটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে না হলেও সিদ্ধান্তটি জানিয়ে রাখবেন। এরপর পরিবেশ অধিদপ্তর ট্যানারি শিল্প বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এটা চলতে পারে না (ইট কান্ট কন্টিনিউ)। এখন যেভাবে আছে তা চলতে দেওয়া যাবে না। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে সলিড ওয়েস্টটের। সেখানে এটা ট্রিটমেন্টের কোনো ধরনের সুযোগসুবিধা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে প্রায় ১২৫টি ইউনিট আছে, এর মধ্যে ২৪টি ইউনিট ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করেছে। তারা জানিয়েছে তাদের ট্রিটমেন্ট ফ্যাসিলিটি আছে। সেটা আমরা দেখবো। সেগুলো নিয়মের মধ্যে পড়লে সেগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তর তার বিদ্যমান আইনের অধীনে সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ট্যানারি শিল্প বন্ধ করবে বলে তিনি জানান।
এর আাগে গত ২৩ আগস্ট সংসদীয় কমিটি পরিবেশ দূষণের দায়ে ট্যানারি শিল্প বন্ধের সুপারিশ করে। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে তাদের চিঠি দিয়ে কারণ দর্শানো হয়। তবে ওই চিঠির জবাব সন্তোষজনক হয়নি বলে গতকালের বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি জানান।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ দূষণরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমপ্লায়েন্স অর্জন না করা পর্যন্ত সাভারের চামড়া শিল্পনগরী বন্ধ রাখার সুপারিশ বাস্তবায়ন না করায় কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা বন্ধ করার জন্য কমিটি আবারও সুপারিশ করে।
এ ছাড়া বৈঠকে বায়ুর মানবিষয়ক প্রতিনিয়ত পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রতিনিয়ত হেলথ অ্যালার্ট জারির ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কিমিটি। এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, আমাদের যে প্রযুক্তি আছে তাতে আজকের বায়ুর মানের পরিসংখ্যক আগামীকাল জানাতে পারি। এটা কোনো কাজে আসে না। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মনিটরিং করা এবং মানুষকে যেন বিষয়টি তাৎক্ষণিক জানাতে পারি। যার জন্য আমরা এটাকে দুই-তিন মাসের মধ্যে লাইভ করতে বলেছি। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছি।
তিনি বলেন, এটা সম্ভব হলে আমরা হেলথ অ্যালার্ট দিতে পারবো। এতে করে মানুষ বাসা থেকে বের হবে কি-না বা কোন এলাকায় তারা যাওয়া থেকে বিরত থাকবে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ হেলথ অ্যালার্ট দেওয়া নেতিবাচক কিছু নয়। পৃথিবীর সব দেশেই এটা হয়। এটা হলে মানুষ তার মুভমেন্টে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এ ছাড়া বেদখলে থাকা বনের ৭ হাজার ৩৯৫ একর জমি উদ্ধার হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটিকে জানানো হয়েছে। কমিটি আগামী জুনের মধ্যে ১০ হাজার একর জমি উদ্ধারের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে বলেছে বলে কমিটির সভাপতি জানান। বন বিভাগের জমির মধ্যে প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার একর বেদখলে ছিল। এর মধ্যে গত বছর আগস্ট পর্যন্ত মাসে ৫ হাজার ৬৩৯ একর ভূমি উদ্ধার হয়েছিল। গত ৬ মাসে আরও প্রায় দুই হাজার একর উদ্ধার হয়েছে।
আগামী ১ মার্চ থেকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন বিভাগের কার্যালয়ে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক পণ্য যেমন প্লাস্টিকের কাপ, কাটা চামচ, প্লেট ইত্যাদি ব্যবহার করবে না বলে সংসদীয় কমিটিকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, কোনো ধরনের সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক তারা ব্যবহার করবে না। এগুলো যেহেতু নিজস্ব অফিস, এখান থেকেই শুরু হোক সেটা চাই। আমরা চাইবো পরবর্তীতে এটা বড় পরিসরে চালু হবে। যেমন আমাদের লক্ষ্য আছে এটা সংসদ ভবনেও বাস্তবায়ন করার। এজন্য আমরা স্পিকারকে অনুরোধ করব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন