শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠে ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : এখনো অগ্রহায়ণ আসতে আরো বেশ ক’টা দিন বাকি থাকলেও বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠে মাঠে ধানের শীষে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন দুলছে। মাঠজুড়ে সোনালি স্বপ্নের ছড়াছড়ি।  
শুরু হয়েছে রোপা আমন ধান কাটা মাড়াইয়ের উৎসব। আগাম লাগানো ধান বেশ ক’দিন আগে থেকে কাটা শুরু হয়েছে। ধান উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে খ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় মাঠে মাঠে কৃষকের ব্যস্ততা। জোতদারদেও খৈলানগুলো
ধান ঝাড়াই মাড়াইয়ের জন্য প্রস্তৃত করা হয়েছে। অনেক স্থানে মাঠে ধান মাড়াই করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ধান মাড়াই যন্ত্রের ব্যবহারও নজর এড়ায় না। শুরুতে ধানের উৎপাদন নিয়ে খুশির খবর জানা গেল আবাদকারীদের কাছ থেকে। এবার সময়মত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সেচ খরচ তেমন লাগেইনি। আবার আবহাওয়া অনুকূলেই ছিল। আর আতঙ্ক কাঠ ও বাদামি ফড়িং ও রোগ বালাই তেমন জ্বালাতন না করায় উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে কিছুটা কম হয়েছে। আবার ধানের ফলন মোটামুটি ভালো হওয়ায় লাভের স্বপ্ন দেখছে। যদি এখন ধানের বাজার নির্ভর করছে ফড়িয়া দালালদের উপর। এবার রাজশাহী অঞ্চলের চারজেলা রাজশাহী চাঁপাইবাবগঞ্জ নওগাঁ নাটোরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিভাগ তিন লাখ বাহাত্তর হাজার তিনশ’ ত্রিশ হেক্টর জমিতে।
কিন্তু আবহাওয়া পক্ষে থাকায় আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে হয় তিনলাখ পঁচানব্বই হাজার ত্রিশ হেক্টর জমিতে। যা থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় দশ লাখ মে. টন চাল। কৃষি বিভাগ আশা করছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবার। মাঠ পর্যায়ে একজন কৃষি কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে বলেন বিঘাপ্রতি এখনই আঠারো মন ধান পাওয়া যাচ্ছে। আরো বেশি মিলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা জানান সবেমাত্র ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে কাটা হয়েছে। এতেই দেখা যাচ্ছে হেক্টরপ্রতি তিন দশমিক শূন্য সাত মে. টন ধান উৎপাদন হচ্ছে। পোকা দমানোর জন্য পারচিং লাইন এবং ধনচা লাগিয়ে ভালো ফল পাওয়া গেছে। বিগত বছরগুলোয় বাদামি গাছ ফড়িং নামে এক ধরনের পোকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। কিন্তু এবার আগেভাগেই কৃষকদের সচেতন করায় ধান রক্ষা পেয়েছে। ফলে এবার বিঘাপ্রতি কুড়িমণ ধান হবে। তানোর এলাকায় মাঠে ধান কাটার সময় কৃষক জুলফিকার জানান, এবার এখানে স্বর্ণা জাতের ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সুমন স্বর্ণা, গুটিস্বর্ণা ও সাদা স্বর্ণা জাতের। ফলন বিঘাপ্রতি আঠারো কুড়িমণ হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় চার পাঁচমণ বেশি। এবার শুরুতে দাম রয়েছে সাড়ে ছয় হতে সাড়ে সাতশ’ টাকা। তবে পুরোদমে ধান ওঠা শুরু করলে ধানের দাম কমবে। ধান কাটার মওসুম শুরু হওয়ায় বিভিন্ন কাজে যাওয়া শ্রমজীবী মানুষ গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে।
বিভিন্ন স্থান থেকে  ধানকাটা শ্রমিকরা  আসছে। স্থানীয় উপজাতি সাঁওতালরা ধান কাটাই মাড়াইয়ে ভীষণ ব্যস্ত। যারা আগাম ধান লাগিয়ে ইতোমধ্যে কেটে ঘরে নিয়েছে তারা ব্যস্ত এসব জমিতে আলুসহ শীতকালীন শাক-সবজির আবাদের জন্য। আগাম লাগানো শীতকালীন শাক-সবজির ক্ষেত নজর কাড়ছে। বড় আকারের ফুলকপি বাঁধাকপি বাজারে পাঠানোর জন্য তৈরি হয়ে গেছে। লালশাক পালংশাক আর মুলা তোলার দৃশ্য চোখে পড়ে। বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষি আবাদের খবর নিতে গিয়ে এবারের রোপা আমন নিয়ে কৃষকের চোখে মুখে বেশ কিছুটা হাসির ঝিলিক দেখা যায়। তারা লাভের স্বপ্ন দেখছে। এখন যা দাম সেটি থাকলে অন্তত অন্যবারের মতো চোখের পানি ঝরানো হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন