শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আগুন সন্ত্রাসীদের জনগণই প্রতিহত করবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:২৪ পিএম, ৩ নভেম্বর, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যারাই জনগণকে পোড়াবে জনগণই তাদেরকে প্রতিহত করবে।
২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ সরকার পতনের আন্দোলনের নামে টানা ৯২ দিন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন বেগম জিয়া বলেছিলেন, সরকার উৎখাত না করে নাকি ঘরে ফিরবেন না- সরকার উৎখাত করতে পারেনি। জনগণই ঠেকিয়েছিল তাদেরকে। যারাই জনগণকে পোড়াবে জনগণই তাদেরকে প্রতিহত করবে। ভবিষ্যতেও তাদেরকে জনগণই ঠেকাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা কথায়ই বিশ্বাস করি- আমরা স্বাধীনতা এনেছি। এই স্বাধীনতাকে আমাদের অর্থবহ করতে হবে। জাতির পিতাকে হত্যা করে, জাতীয় চারনেতাকে হত্যা করে, হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে হত্যা করে তারা ভেবেছিল আওয়ামী লীগের নাম-নিশানা মুছে দেবে। কিন্তু এদেশের মাটি ও মানুষের কথা বলার মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সংগঠনটা চলে ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় সভাপতির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র উদ্দেশে বলেন, তারা ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে এবং খালেদা জিয়া নিজেই নির্বাচনে আসে নাই। রাজনীতিতে ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত তাদেরকেই দিতে হয়। অথচ খালেদা জিয়া তার ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতিশোধ নিতে গেল জনগণের ওপর। জনগণ কেন ভুলের খেসারত দেবে, প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিতে ভয় পান উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জানেন, আদালতে হাজিরা দিলে শাস্তি পাবেন, এ জন্য আদালতে হাজিরা দিতে ভয় পান। যদি সততা থাকত, বুকে সাহস থাকত যে অন্যায় করিনি, তাহলে তো মামলা মোকাবিলায় ভয় পাওয়ার কথা নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমার নামে মামলা দিয়েছিল, আমি তখন আমেরিকায় ছিলাম। আমি তখন এসে তা মোকাবিলা করেছি। কিন্তু তিনি কেন ভয় পাচ্ছেন, বোঝেন না? ওই এতিমের টাকা মেরে খেয়ে এখন পালাই পালাই ভাব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতারা যখন গুম-খুনের কথা বলেন, তখন মনে হয় তারা নিজেদের চেহারাটা আয়নায় দেখেন না। আয়নায় চেহারাটা দেখা মানে শুধু মেকআপ করা না, নিজেদের আসল চেহারা, রূপটা দেখা।
শেখ হাসিনা বলেন, খুনি মোশতাক ক্ষমতা দখল করেই সেনাপ্রধান করল জিয়াউর রহমানকে। তার মানে এটাই স্পষ্ট যে, ১৫ আগস্টের ওই ঘটনার সঙ্গে খুনি মোশতাকের সঙ্গে জিয়াও যে জড়িত ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর সে কথাটা আত্মস্বীকৃত খুনি, যাদের আমরা বিচার করেছি, যাদের অনেকের ফাঁসি হয়েছে, তারা বিবিসিতে সাক্ষাৎকারে নিজের মুখে স্বীকার করেছে, জিয়ার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল, তাদের ইশারা দিয়েছিল এবং সমর্থন দিয়েছিল, এটা স্পষ্ট। অতএব, মোশতাক তাকে বানাল সেনাপ্রধান।
স্মরণ সভায় জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি ম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতি ম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও ড. আব্দুর রাজ্জাক বক্তৃতা করেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের পরিচালনায় স্মরণ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন- আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এমপি এবং মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও সাদেক খান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৫ আগস্টের শহীদ, মরহুম জাতীয় চারনেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করব, এই স্বাধীনতার ইতিহাস, আমাদের অর্জনের ইতিহাস, গৌরবের ইতিহাস, বিজয়ের ইতিহাস- যে ইতিহাসকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল তা আগামী প্রজন্মের সবাই যেন জানতে পারে। নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারে। সেইভাবেই আমাদেরকে কাজ করে যেতে হবে। জাতির পিতা এই দেশ দিয়ে গেছেন আমরা বিশ্ব সভায় এই দেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী যে চেতনা জেগে উঠেছে তাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি তার জঙ্গিবিরোধী অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দেশে কোন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থাকতে দেব না এবং তাদের মদদকারীরাও সাজা পাবে।
 প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় চার নেতার হত্যাকা- নিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোনোমতেই যেন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি উঠে দাঁড়াতে না পারে। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ এখন যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিয়ে তা মোকাবিলা করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় আমাদের উন্নয়নের কর্মকা-ের ধারাবাহিকতা রয়েছে। আজকে কারও কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষমতা বাংলাদেশ রাখে। কেউ অপবাদ দিলেই মাথা পেতে নিই না, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিই। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি যে হ্যাঁ, বাংলাদেশ পারে। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি। তাই পদ্মা সেতু নিয়ে যখন আমাদের অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হলোÑ আমরা যখন এর প্রতিবাদ করে দাঁড়ালাম; আজকে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি। এই ক্ষমতাটুকু আজকে বাংলাদেশের হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। সরকারের ধারাবাহিকতা ছিল বলেই আমরা এই উন্নয়ন করতে পারছি। ভবিষ্যতে আরও উন্নয়ন করতে পারব। প্রত্যেক খাতে আমরা উন্নয়ন করতে পারছি। বিশ্বসভায় আজকে আমরা উন্নয়নের রোল মডেল।
আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী সংগঠন ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। এর জন্য আপনারা সহযোগিতা করছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে পারি, সেটা তো ইংল্যান্ডকে দেখালাম। মাত্র তিন দিনের মাথায় টেস্ট ক্রিকেটের ১ নম্বর দেশ ইংল্যান্ডকে আমরা হারালাম। তারাও দেখল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগাররা কীভাবে হুংকার দিতে পারে, আর বিজয় আনতে পারে। আমরা যে পারি, এটাও একটা নমুনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ উড়ে এসে জুড়ে বসা বা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর দল নয়। আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলার মাটিতে গভীরভাবে প্রোথিত। আওয়ামী লীগকে কেউ নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। ভবিষ্যতেও পারবে না। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বংশপরম্পরায় সবাই যেন জানতে পারে, সেভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন