ইনকিলাব শুধুমাত্র একটি নাম নয়, এটি একটি আদর্শ ও চেতনার ধারক ও বাহক। এদেশের ইসলামী তমদ্দুন ও সংস্কৃতির বিকাশে ইনকিলাব অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে। আমি বিশ্বাস করি এখনো চেষ্টা করলে ইনকিলাব তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তাই আমরা করব। ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর তার ৯৪তম জন্মদিনে সহকর্মীদের কাছে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুরের গতকাল ছিল ৯৪তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে দৈনিক ইনকিলাবের পক্ষ থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। অধ্যাপক গফুরের যাত্রাবাড়ির কোনাপাড়ায় নিজ বাসভবন একতা টাওয়ারে ইনকিলাব সম্পাদকের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে, কেক কেটে এবং তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় মোনাজাতের মাধ্যমে জন্মদিন উদযাপন করা হয়। ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (বাণিজ্য ও প্রশাসন) মো. আব্দুল কাদের, সহকারী সম্পাদক মুনশী আবদুল মান্নান, সহকারী সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশ, বিশেষ সংবাদদাতা রফিক মুহাম্মদ, ফটো সাংবাদিক মতিউর সেন্টু, সহসম্পাদক সৈয়দ ইবনে রহমত প্রমুখ।
জন্মদিনে ইনকিলাব পরিবারকে কাছে পেয়ে অসুস্থ অধ্যাপক আবদুল গফুর অত্যন্ত খুশি হন। দীর্ঘদিনের সহকর্মীদের দেখে তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি তখন সহকর্মীদের সাথে স্মৃতিচারণ শুরু করেন। স্মৃতিচারণে তিনি ইনকিলাবে প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) কথা স্মরণ করেন এবং তিনি কিভাবে তাকে পত্রিকায় এনেছিলেন সে কথাও তুলে ধরেন। তিনি ইনকিলাব সম্পাদকের ভূয়শীপ্রশংসা করেন এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক আবদুল গফুর বলেন, একটি মহান লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে হযরত মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ইনকিলাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন আপনার লেখা একটি বই কতজন পাঠক পড়ে। আমি বলেছিলাম পাঁচশ’ থেকে সর্বোচ্চ হাজার লোকে পড়ে। তখন তিনি বললেন, আমরা যদি এমন কিছু করি যে আপনার একটি লেখা প্রকাশের পর লাখ লাখ পাঠক পড়বে। তার এ কথায় আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। কিন্তু পরে যখন ইনকিলাব প্রকাশিত হলো তখন সত্যি তা লাখ লাখ পাঠকের হাতে চলে গেল। ইনকিলাবের এত পাঠকপ্রিয়তা দেখে অন্য অনেক পত্রিকার মালিক তখন বলতো আমাকে ইনকিলাবের মতো একটা পত্রিকা বের করে দেন। তিনি বলেন ইনকিলাব শুধুমাত্র একটি পত্রিকা নয় এটি একটি আদর্শ ও চেতনার নাম। এদেশের ইসলামী তমুদ্দুন ও সংস্কৃতির বিকাশে ইনকিলাব অসামান্য ভূমিকা রেখে চলেছে। আমি বিশ্বাস করি এখনো চেষ্টা করলে ইনকিলাব তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তাই আমরা করব। আমাদের সম্পাদক অত্যন্ত যোগ্য এবং আন্তরিক। আমি দোয়া করি তিনি যেন সুস্থ থাকেন এবং ইনকিলাব যেন আগের মতো পাঠক প্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যায়।
বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর ১৯২৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বৃহত্তর ফরিদপুর (বর্তমান রাজবাড়ি) জেলার পাংশা থানার দাদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম হাজী হাবিল উদ্দিন মুন্সী এবং মাতা মরহুমা শুকুরুন্নেসা খাতুন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আবদুল গফুর তার সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবনে নিজেকে একাধারে শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী এই সৈনিক পরবর্তীতে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৭ সালে সাংবাদিকতা শুরু করা অধ্যাপক আবদুল গফুর একমাত্র ব্যক্তি যিনি এখনো এই পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন এবং তার লেখনীর মাধ্যমে সর্বদা দেশকে দিয়ে যাচ্ছেন সঠিক পথের দিশা। বর্তমানে তিনি দৈনিক ইনকিলাবের ফিচার সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন