রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় নতুন রূপে সাজবে শিশুপার্ক। নতুন রাইড, ডিজিটাল টিকেটিংসহ ব্যবস্থা থাকবে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার। বিনোদনসেবা বাড়ানোর মাধ্যমে শিশু-কিশোরসহ জনগণের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি, শিশু-কিশোরসহ জনগণের উন্নতমানের বিনোদন সেবার সুযোগ তৈরি করা। ১৫টি বিভিন্ন ধরনের রাইড কেনা ও স্থাপন, ডিজিটাল টিকিট সিস্টেম, সেন্ট্রাল সাউন্ড সিস্টেমসহ এলইডি স্ক্রিন স্থাপন, গ্যালারি, এম্ফিথিয়েটার, সীমানাপ্রাচীর, ড্রেন, ভবন নির্মাণ, দর্শনার্থীদের জন্য শেড নির্মাণ, বৃক্ষরোপণসহ সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হবে।
কেন্দ্রীয় শিশুপার্কটি ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে দৈনিক সাত থেকে আট হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটতো। তাছাড়া বিভিন্ন উৎসব যেমন- ঈদ, নববর্ষ, দুর্গাপূজাসহ জাতীয় দিবসগুলোতে ভিড় হতো ৫০-৬০ হাজার দর্শনার্থীর। কিন্তু দীর্ঘদিনের পুরোনো ও সীমিত রাইডস দিয়ে কাঙ্খিত বিনোদন সেবা দেয়া যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় শিশুপার্কে আধুনিক ও যুগোপযোগী রাইডস স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেয়া হয়।
জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে সামনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করবে পরিকল্পনা কমিশন। তবে গৃহীত প্রকল্পে বেশকিছু অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পে প্রতিটি টিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি টাকা। এছাড়াও ছয়টি টয়লেট স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রশ্ন উঠেছে আরও কিছু খাতে ব্যয় নিয়ে। তবে প্রস্তাবনাকারী সংস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বলছে, প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়। ফলে অনেক খাতে ব্যয় পুননির্ধারণ করা হবে।
প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ৬১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের পর চার বছরে বাস্তবায়ন হবে। এ প্রকল্পের অন্য খাতের ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। প্রকল্পে অটোমেটিক ওয়েভ বেজড টিকেটিং সিস্টেম বাবদ ১০ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা সভায় আলোচনা করা হবে। এছাড়া চারটি এলইডি স্ক্রিন বাবদ চার কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অত্যধিক বলে মত দিয়েছে কমিশন। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মূল্যায়নে অভ্যন্তরীণ ফেরতের হার (আইআরআর) ২১ দশমিক ৮৪ শতাংশ, যা অস্বাভাবিক। এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রাক্কলন সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে। এছাড়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা সঠিকভাবে প্রণয়ন করা হয়নি। প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা অংশে চার-পাঁচটি বুলেট পয়েন্টে এর প্রধান প্রধান কার্যক্রমের পরিমাণগত তথ্যসহ সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, শিশুপার্কের রাইডসমূহ অত্যাধুনিক ও সার্বিক দিক দিয়ে গুণগত মানসম্পন্ন হতে হবে। কোনোভাবেই যাতে নিম্নমানের রাইড সংগ্রহ করার সুযোগ না থাকে সেভাবে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়ন করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সভায় আলোচনা হতে পারে। এছাড়া রাইডসমূহের ব্যয় ও ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি কী তা সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। প্রস্তাবিত রাইডসমূহের প্রাক্কলন সংগ্রহ করা হয়েছে তিনটি কোম্পানির কাছ থেকে। তিনটি কোম্পানি আলাদা আলাদা রাইডের প্রাক্কলন দিয়েছে। ফলে এখান থেকে বের করা যাচ্ছে না গড়মূল্য। অর্থাৎ কোম্পানির ধরা মূল্যই প্রাক্কলন বলে হিসাব করা হয়েছে। প্রায় ১৫৭ কোটি টাকার পূর্ত কাজে ভবন নির্মাণসহ ১৭টি কাজ একটি প্যাকেজের আওতায় রাখা হয়েছে। প্রতিটি কাজের বিস্তারিত ব্যয় প্রাক্কলন পিইসি সভায় উপস্থাপন করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক প্রকৌশলী জানান, প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অনেক কিছুর ব্যয় যুক্তিযুক্ত নির্ধারণ করা হবে। কিছু কিছু ব্যয় বাদ যাবে আবার যুক্ত হবে নতুন কিছু। এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে আসেনি অনেককিছু।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের (সচিব) সদস্য মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক আধুনিকীকরণ প্রকল্পে গভীর নলকূপ ও টয়লেট নির্মাণে বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। অন্য প্রকল্পের সঙ্গে মিল রেখে তুলনা করবো, এর পরই সিদ্ধান্ত দেবো। প্রতিটি খাত ধরে ধরে বিশ্লেষণ করবো। এমনকি ডিজাইনও (প্রকল্পের নকশা) দেখবো। ###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন