বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য হু হু করে বেড়েই চলছে। তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। গত বছরের শেষের দিকে সরকার ডিজেলের দাম বাড়ানোর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যেরই দামই সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর বিদ্যুতেরও দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে গরিবের ভর্তুকির টাকা যাচ্ছে ধনীদের কাছে। এসব টাকা যাতে ধনীরা না পায়, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বিদ্যুতের একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। সবার আগে হয়তো বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়তে পারে। এর পরে পানির দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনায় নতুন পারদ যুক্ত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কায় পণ্যটির দাম আরও বেড়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাাদিমির পুতিন গত সোমবার রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন। পরে সেখানে সেনা পাঠানোরও নির্দেশ দেন তিনি। তাতে গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের আগাম কেনাবেচায় এরই মধ্যে ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের প্রতি ব্যারেলের (৪২ মার্কিন গ্যালন বা ১৫৯ ব্রিটিশ লিটার) দাম বেড়ে ৯৮ দশমিক ২১ মার্কিন ডলারে উঠে গেছে, যা বিগত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড অয়েলের দামও প্রতি ব্যারেল ৯৬ দশমিক ৮২ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের আমদানিনির্ভর জ্বালানি খাতে বর্তমানে প্রচুর ভর্তুকির প্রয়োজন। শুধু বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারেই ভর্তুকি গুণতে হবে ৭০ হাজার কোটি টাকা। এ খাতে সরকারের এখন পর্যন্ত বরাদ্দ রয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। বাকি বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দিতে সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াতে চায়। এ নিয়ে কাজ চলছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়ানোর আবেদন তৈরি করেছে। শিগগিরই তা জমা পড়বে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অবশ্য সারের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। যদিও গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে সারের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এদিকে ঢাকায় সরবরাহ করা পানির দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। সরকারের অনুমতি পেলে ১ জুলাই থেকে বাড়তি দাম কার্যকর হবে। ওয়াসা বলছে, ভর্তুকি কমাতে হলে পানির দাম বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। তিনি বলেন, আমারা ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়ায় সরকার বিপাকে পড়েছে। আমদানি করা গ্যাস দিয়ে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, যাতে মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পায়। বাংলাদেশের মানুষের বড় অংশ দরিদ্র। ফলে এখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দরকার নেই। প্রয়োজনে লোডশেডিং করা হোক, তবুও বিদ্যুতের দাম না বাড়ানো হোক।
দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ জ্বালানি সহকারী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ম তামিম বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজির) দাম বেড়েছে তাতে সরকারের বড় ভর্তুকি যাচ্ছে, এ গ্যাস আমদানি করতে গিয়ে। ফলে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু মনে রাখা দরকার, কতটুকু বাড়াতে পারবে সরকার। গোটা লোকসান জনগণের কাছ থেকে নেওয়া যাবে না। এ খাতে অবশ্য ভর্তুকি থাকতে হবে। এ দুটি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অধিক হারে বাড়লে তা জনগণের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় জানানো হয়, সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের জন্য চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) ৭০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন। এই ভর্তুকির বিপরীতে সরকারের চলতি বছরের বাজেটে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ২ হাজার কোটি টাকা জ্বালানি বিভাগকে দিয়েছে। এলএনজি আমদানি করতে সরকারের এখনই দরকার ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু এই বরাদ্দও যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে জ্বালানি বিভাগ। সে কারণে গত নভেম্বরে অর্থ বিভাগের কাছে ৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার ভর্তুকি চেয়ে চিঠি দিয়েছে তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি হাজার ঘনফুট এলএনজির দাম গত বছরের আগস্টের আগে ছিল ১০ ডলার। সেটি বেড়ে এখন ৪৫ ডলার হয়েছে। সাড়ে চারগুণ দাম বেড়েছে এলএনজির স্পট মার্কেটে। দেশে এখন গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৪২০ কোটি ঘনফুট। সরবরাহ হচ্ছে ৩০০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে সরকার। অর্থাৎ সরবরাহকৃত গ্যাসের তিন ভাগের একভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এ বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানির কারণে গ্যাস খাতে ভর্তুকি বেড়েছে। গ্যাসের দাম বাড়লে বিদ্যুতেরও দাম বাড়বে। কারণ দেশের প্রায় ৭০ ভাগ বিদ্যুৎ আসে গ্যাস থেকে, বাকি বিদ্যুতের বড় অংশ আসে তেল থেকে। এর আগে সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে ২৩ ভাগ। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ঘাটতি মেটাতে এই প্রয়োজনীয় দুটি পণ্যের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়াতে চায়।
দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে একমাত্র পাইকারি বিদ্যুৎ কেনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সেই পাইকারি বিদ্যুৎ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসহ (আরইবি) দেশের ছয়টি বিতরণ কোম্পানির মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে বিতরণ করা হয়। আর সঞ্চালন করে থাকে একমাত্র পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। পিডিবি সম্প্রতি পাইকারি বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে কী পরিমাণ লোকসানের মুখে পড়ছে তার একটা হিসাব করেছে। এখন প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসির কাছে আবেদন করবে। পিডিবির আবেদন করার পরই গ্রাহক পর্যায় বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো বিইআরসির কাছে দাম বাড়ানোর আবেদন করবে।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়লে খুচরা পর্যায়ের দাম বাড়াতেই হবে। আমরা অপেক্ষা করছি পিডিবির পাইকারি প্রস্তাবের ওপর। তারপর আমাদের পক্ষ থেকে গ্রাহক পর্যায় খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করা হবে।
গত বছরের নভেম্বরে খুচরা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। তখন সরকারের দাবি ছিল, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ডিজেলে লিটার ১৩ দশমিক শূন্য ১ টাকা এবং ফার্নেস অয়েলে লিটার প্রতি ৬ দশমিক ২১ টাকা কমে বিক্রি করায় প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। গত অক্টোবর মাসেই ৭২৬ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালের এপ্রিলে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সারা দেশে এ নিয়ে হইচই শুরু হয়। এরমধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ালে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। ফলে বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে শিল্পের গ্যাসের দাম বাড়লে পণ্যের দামও বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।
গত বছরে অক্টোবরে জরুরিভিত্তিতে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে তিন জাহাজ এলএনজি কিনতে গিয়ে ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বাড়ার নেপথ্যে রয়েছে চীনের ভূমিকা।
চীন আগামী ১০ বছরের এলএনজি আগাম ক্রয় করছে। এতে বিশ্ববাজারে বড় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যও বিদ্যুৎ সংকটে পড়েছে। এ জন্য দেশটির সরকার শিল্প খাতে বিদ্যুৎ রেশনিং করা শুরু করেছে। বিশ্বজুড়ে জ্বালানির এই সংকট এলএনজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কোভিড ১৯ মহামারির সঙ্কট কাটিয়ে উঠে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ফের চালু হওয়ায় গত দেড় বছরের মধ্যে বর্তমানে জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে। দেশে দুটি এলএনজি টার্মিনাল বছরে ৭০ লাখ টন এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন (প্রক্রিয়াকরণ) করতে পারে। কিন্তু কাতার এবং ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে ৪০ লাখ টন এলএনজির সংস্থান রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়া দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে যে পরিমাণ এলএনজি আসত তার ৭০ ভাগ কমে গেছে। তারা এখন চুক্তির সর্বনিম্ন এলএনজি সরবরাহ করছে বাংলাদেশকে। এ মুহূর্তে সরকার আমদানির ৭০ ভাগ এলএনজি কিনছে স্পট মার্কেট থেকে।
গত বছরের জানুয়ারিতে প্রতি এমএমবিটিইউ (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) বা প্রতি ইউনিট স্পট এলএনজির দাম গড়ে ১০ ডলার ছিল। বর্তমানে এটির দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৪৫ ডলারের হয়ে গেছে। জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের সামিট ও টোটাল গ্যাস দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি বিক্রির আগ্রহ জানিয়ে সরকারকে চিঠি দিয়েছে। শিগগিরই সামিটের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। গ্যাস সঙ্কট সমাধানে এরই মধ্যে এলএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস রেশনিং শুরু হয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি সমাধান নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, প্রতি বছর দেশে গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে গড়ে ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) বা ১০০ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) থেকে ১ দশমিক ১ টিসিএফ গ্যাস। এর মধ্যে বিদ্যুতে ব্যবহার হয় ৪৩ দশমিক ২৮ শতাংশ, শিল্পকারখানায় ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ, বাসা-বাড়িতে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, শিল্প-কারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সিএনজি দশমিক ১৬ শতাংশ, বাণিজ্যিক দশমিক ৭৬ শতাংশ ও চা বাগানে দশমিক ১০ শতাংশ। আর এ মুহূর্তে গ্যাসের অভাবে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা প্রফেসর এম শামসুল আলম বলেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় মানুষ যেমন আধপেটা খেয়েছিল, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজন হলে মানুষ অন্ধকারে থাকবে, লোডশেডিং মেনে নেবে কয়েক ঘণ্টা। কিন্তু এলএনজি দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যদি বিদ্যুতের ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়, তার ফলে গোটা অর্থনীতি তছনছ হয়ে যাবে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে, দ্রব্যমূল্য বাড়বে, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মানুষের সম্পদ কমে যাবে, আয় কমে যাবে। এটা হতে পারে না। প্রয়োজনে বিদ্যুতের রেশনিং করা হোক, তবুও দাম বৃদ্ধি নয়। তিনি আরও বলেন, যে এলএনজি আমদানি করতে গিয়ে এত বিপত্তি তার আমদানি বন্ধ রাখা হোক, তা না হলে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে সরকার মনোযোগী হবে না। মানুষ কম দামে গ্যাস পাবে না। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করে বিইআরসি, যা ওই বছর ১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর খুচরা বিদ্যুতের দাম ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হলেও পাইকারি মূল্য বাড়ানো হয়নি। বর্ধিত মূল্য ওই বছরের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। গত ২০১৫ সালে পাইকারি বিদ্যুতের মূল্য ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বাড়ানো হয়।
ওয়াসার এমডি তাসকিম এ খান বলেন, এখন এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে খরচ হয় ২৫ টাকা। এই পানি ১৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। আইন অনুযায়ী, ওয়াসা পানির দাম বছরে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বাড়াতে পারে। কিন্তু এটা পর্যাপ্ত মনে না করায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় ওয়াসা। পানির দাম ও উৎপাদন খরচের ফারাক সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ভিক্ষা করে একটি সরকারি সংস্থা চলতে পারে না। প্রতি হাজার লিটারে সরকারকে ১০ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন