শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নাসিরনগরে গ্রেফতার আরো ৩৩ প্রশাসনের দফায় দফায় বৈঠক

প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা : জেলার নাসিরনগরে ভাংচুর, হামলা ঘটনায় আরো ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শুক্রবার আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। পুলিশ বলছে, তাদের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হলো। গতকাল শনিবার দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, নাসিরনগরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পেশার লোকজনের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বৈঠকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ রুহুল আমিন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোঃ রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান আলেম সমাজ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মোবারক উল্লাহ, মাওলানা আব্দুর রহিম কাশেমী আল্লামা মনিরুজ্জামান সিরাজী, মাওলানা সাজিদুর রহমান প্রমুখ। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দেন। এটা রামুর পুনরাবৃত্তি Ñশাহরিয়ার কবির ঃ
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, রামুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে নাসিরনগরে। রামুতে প্রশাসন যতটা তৎপর ছিল এখানে তেমনটা নেই। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিয়েছেন নাসিরনগরে প্রশাসনের তেমন কোন গাফিলতি নেই। তাই আমরা প্রশাসনের তদন্তে ভরসা রাখতে পারিনা। আমরা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক তা-বের ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গৌর মন্দিরে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তার নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রসরাজের বাড়ি ও ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেন।
এ সময় তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ঘটনার তিনদিন পর এলাকায় এসে যা বলেছেন তাতে ঘটনা আরো বেড়েছে। তার কথায় সংখ্যালঘুরা আশ্বস্ত হতে পারেনি। মানুষ মহাজোট সরকারের আমলে এমন ঘটনা দেখতে চায় না। মানুষ নিরাপত্তা চায়, আশ্বাস চায়। কিন্তু প্রশাসন তাদের সে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রসরাজের বাড়িতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি সে স্বল্প শিক্ষিত। ফলে রসরাজের ফটোশপে ছবি এডিট করা সম্ভব নয়। তার বাড়িঘর দেখে আমাদের মনে হয়েছে সে সংস্কৃতি মনষ্ক মানুষ। সে এমন কাজ করতে পারে না। এসময় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দেয়ার আগে রসরাজকে যাতে আইনজীবীর সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়। তা করা না হলে হামলাকারীরা উৎসাহিত হবে।
এসময় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, সদস্য এরোমা দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বিকেলে নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি ভাংচুর কবলিত স্থান মন্দিরগুলো দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ ধরনের হামলা কারো কাম্য নয় বলে কাম্য করেন। তিনি জানান, তাদের সাথে সারা দেশের মানুষ রয়েছে। এসময় প্রেস কাউন্সিলের সদস্য আকরাম হোসেন খান, প্রেস কাউন্সিলের সচিব শ্যামল কুমার কর্মকার উপস্থিত ছিলেন।
‘জেলা আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্ব নয়’
নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্বের যে কথা নিয়ে সর্বত্র যে আলোচনা হচ্ছে সে টাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরি। শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজে প্রেস কাউন্সিল আয়োজিত সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে, কেউ এ কথার প্রমান করতে পারলে ক্ষমা চেয়ে রাজনীতি ছেড়ে দিবেন বলে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এ ঘটনার সাথে দলীয় লোকজনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠায় দলের তিনজনকে বহিস্কার করা হয়েছে’। উপজেলা বিএনপি’র এক নেতার নেতৃত্বেও রবিবারের মিছিলে লাঠিসোটা নিয়ে লোকজন আসে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
নেত্রকোনায় কালীমূর্তিতে আগুন, আটক ১
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা ঃ নেত্রকোনা পৌরসভার সাতপাই নদীর পাড় এলাকায় গতকাল শনিবার ভোরে একতা সংঘের কালীমূর্তিতে আগুন দেয়ার অভিযোগে স্থানীয় জনতা এক দুর্বৃত্তকে আটক করেছে। সাতপাই একতা সংঘের সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ সরকার যিশু জানান, শনিবার ভোরে দুর্বৃত্তরা একতা সংঘের কালি মূর্তিতে আগুন দেয়ার সময় কোচিংয়ে যাওয়ার পথে এক ছাত্র তা দেখে তাকে জানালে সে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে এক দুর্বৃত্তকে আটক করেছি। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এর আগেও এখানে দুর্বৃত্তরা প্রতিমা ভাংচুর করেছিল।
নেত্রকোনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের দেওয়ান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আটককৃত ব্যক্তির নাম সুমন ইসলাম (৩৮)। পিতার নাম মোঃ নূরুল ইসলাম। তার বাড়ী নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার সিংরাপুর গ্রামে। আটককৃত সুমনকে থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ড. মোঃ মুশফিকুর রহমান জানান, আটককৃত ব্যাক্তিটিকে প্রাথমিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে মনে হচ্ছে, সে কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। সে এর আগেও পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছিল।
বানারীপাড়ায় প্রতিমা ভাংচুরকারী গ্রেফতার
বানারীপাড়া (বরিশাল) উপজেলা সংবাদদাতা : বানারীপাড়া পৌর শহরের কেন্দ্রীয় বাজার হরি সভা মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরকারী বাবুল হাওলাদারকে বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মন্দিরে স্থাপিত সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মিলে যাওয়ায় বানারীপাড়া থানার ওসি নিশ্চিত হয়েই বাবুলকে ঘটনাস্থল থেকে দু’কিলো মিটার দূরে নরোত্তমপুর গ্রামের তার ভাই সরোয়ার হাওলাদারের বাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে বলে ওসি জিয়াউল আহসান জানান। তার বাবা মৃত আঃ হাকিম হাওলাদার। বাবুল গ্রেফতার হওয়ার পর শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বানারীপাড়ায় বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার এস এম আক্তারুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বাবুল শনিবার খুব সকালে বানারীপাড়া উত্তরপাড় বাজারের কুন্ড পাড়ার মেইন রাস্তা দিয়ে উদম শরীর লুিঙ্গ পরা হাতে খোন্তা গলায় গামছাসহ মন্দিরের দিকে যেতে দেখে। এর আধা ঘন্টা পরে একই পথে মন্দিরের মূর্তি ভাংগার কথা বলতে বলতে চলে যায়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর সে ঘটনা স্বীকার করে। সকাল থেকে বাবুল অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে। কেন মন্দিরে হামলা করলো বা কে করালো বাবুল সে সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়নি। তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা দায়ের করা হবে এবং রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাবুল গ্রেফতারের পূর্ব থেকেই এলাকায় একজন মানসিক ভারসাম্যহীন, ভবঘুরে, মাদকাসক্ত এবং ঠুন্ডা বাবুল নামে পরিচিত। এলাকাবাসীরা জানায় বাবুলের পরিবারের লোক কেউই স্বাভাবিক নয়।
বানারীপাড়া পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীকে পুরস্কার প্রদান ঃ
এদিকে মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরকারী বাবুলকে ত্বরিৎ গ্রেফতারে সাফল্য অর্জনে বানরীপাড়া থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যদের পুলিশ সুপার আকতারুজ্জামানের পক্ষ থেকে ১০ হাজার এবং প্রত্যক্ষদর্শী মাছ ব্যবসায়ী সালাম বাহাদুর ও সহিদুল ইসলাম প্রত্যেককে এক হাজার টাকা পুরস্কার প্রদান করেন।
মাধবপুরে মন্দির ভাংচুর ও বাড়িতে হামলায় গ্রেফতার ২
মাধবপুর উপজেলা সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সদরসহ কয়েকটি গ্রামে মন্দির ভাংচুর ও হিন্দু বাড়ি-ঘর হামলার ঘটনায় পুলিশ জড়িত থাকার অভিযোগে আরো ২ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ শনিবার ভোর রাতে হরিশ্যামা গ্রাম থেকে শুক্কর আলী (৩০) এবং সুন্দাদিল গ্রাম থেকে জিলু মিয়াকে গ্রেফতার করে। এর আগে পুলিশ এ ঘটনায় আরো ৪ জনকে গ্রেফতার কারাগারে পাঠিয়েছে। উল্লেখ্য গত ৩০ অক্টোবর একটি নাসিরনগরে একটি ফেইজবুকের পোষ্টকে কেন্দ্র করে মাধবপুরে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক মাধবপুর বাজার ঝুলন মন্দির, হরিশ্যামা পালপাড়া, সুন্দাদিল, খিলগাঁও, ঘিলাতলী আখড়া, কাশিমপুরসহ কয়েকটি গ্রামে মন্দিরে ভাংচুর ও হিন্দু বাড়ি ঘরে হামলা করে। মাধবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজেদুল ইসলাম পলাশ জানান, এ ঘটনায় মাধবপুর থানায় পৃথক ৪টি মামলা হয়েছে। আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোকলেছুর রহমান জানান, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির সতর্ক প্রহরা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
kmriazuddin@gmail.com ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ৬:৪৬ পিএম says : 0
ধন্যবাদ
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন