দমকা হাওয়াসহ বর্ষণ : বন্দরে ৪নং হুঁশিয়ারি : জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা : শীতের আগমনী বার্তা
শফিউল আলম : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত ও জোরদার হয়ে গতকাল (শনিবার) দুপুর নাগাদ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আজ (রোববার) সকালের দিকে চট্টগ্রাম-বরিশাল উপকূলভাগ অতিক্রম করতে পারে। এ সময় দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সাথে দেশের সমুদ্র উপকূল, প্রত্যন্ত চর ও দ্বীপাঞ্চলে স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে ৩/৪ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে। সাগর খুবই উত্তাল-অশান্ত থাকায় সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪নং হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের সক্রিয় ও বর্ধিত প্রভাবে বৃহত্তর উপকূলসহ দেশের অনেক জায়গায় হিমেল দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা অনেকটা কমে গেছে।
গভীর নিম্নচাপটি কেটে যাওয়ার পর শীতের আগমনী আবহ শুরু হতে পারে। টানা তৃতীয় দিনের মতো গতকাল চট্টগ্রামে বর্ষণ ও হিমেল দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ায় স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙরে আমদানি-রফতানি পণ্য ওঠানামা ব্যাহত হয়। বিকেল থেকে মাঝারি ও ভারী বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পানিবদ্ধতায় বর্ষাকালীন অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে করে অফিসযাত্রী ও শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
বিরাজমান গভীর নিম্নচাপের কারণে বন্দরসমূহকে ৪নং হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখানোর প্রেক্ষিতে গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ জানমালের নিরাপত্তাসহ জরুরি করণীয় নির্ধারণের জন্য পৃথক সভা করেছে। বন্দর চ্যানেল, যান্ত্রিক সরঞ্জাম, কন্টেইনার ও জেটি-বার্থের নিরাপত্তামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে গভীর সমুদ্র থেকে শত শত মাছ শিকারি ট্রলার নৌযান পোতাশ্রয়ে ফিরে এসেছে। সাগরে মাছ শিকার গত ৪ দিন ধরে কার্যত বন্ধ রয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে জানা গেছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (১৮.৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) গভীর নি¤œচাপে পরিণত হয়েছে। এটি গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কি.মি. পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫০০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ শনিবার সকাল নাগাদ বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৫০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩নং সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৪নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৫০ থেকে ৬০ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
সর্বোচ্চ বৃষ্টি ১২৭ মি.মি.
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে খেপুপাড়ায় ১২৭ মিলিমিটার। এ সময় ভোলায় ১১৪, ঢাকায় ৭, চট্টগ্রামে ৪২, খুলনায় ৩১, বরিশালে ৪৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ৩১ ও সর্বনি¤œ তেঁতুলিয়ায় ১৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনে আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন