বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চোখের আলো নিভলেও মনের আলোই শক্তি

সান্তাহারের সজীব অন্যদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

মো. মনসুর আলী, আদমদীঘি (বগুড়া) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

পৃথিবীতে আসার আগে মায়ের গর্ভে অন্ধকারেই ছিল। জন্মের পর এক চোখে অন্ধকার ও আলো কোনো কিছুই দেখার সৌভাগ্য হয়নি। মাত্র ১০ বছর বয়সে দ্বিতীয় চোখে নেমে আসে অন্ধকার। সেই অন্ধকারের মধ্যেই বড় হয়েছেন বগুড়ার সান্তাহারের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সজীব। কিন্তু সে অপরের বোঝা হয়ে বাঁচার পক্ষে নয়।
সজিবের দৃঢ় মনোবল তাকে নিজের পায়ে চলতে শিখিয়েছে। প্রতিদিন দোকানে বসে অন্যদের মতোই কাজ করছেন। কাজের দক্ষতা দেখে বুঝার উপায় নেই যে চির অন্ধ। চোখে দেখতে না পেলেও অনায়াসে করতে পারেন কম্পিউটারের কাজ। চালাতে পারেন স্মার্টফোনও।

সান্তাহারের একটি মাল্টিমিডিয়ার দোকান দিয়ে নিয়মিত কাজ করছেন। এই দোকানের আয়ে চালাচ্ছেন সংসার। শহরের নতুন বাজার এলাকার রেজাউল করিমের বড় ছেলে শাহারিয়ার ইসলাম সজীব। বাবা মা ভাইবোন নিয়ে একসাথে বসবাস। একটি চোখ অন্ধ অবস্থায় সজীবের জন্ম। অপর চোখের আলোয় পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া। একদিন ক্রিকেট খেলতে গেলে বল লেগে ভালো চোখের আলো চিরতরে নিভে যায়।
দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও থেমে যায়নি সজীবের পথচলা। অদম্য ইচ্ছে শক্তির জোরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সান্তাহার ডিজিটাল পোস্ট অফিসে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ নেন। মা তাসছিলা বানু নিজের জমি বিক্রি করে ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। সেই টাকায় সজীবের মাল্টিমিডিয়ার দোকান।

যারা দুই চোখে দেখতে পান তাদের মতোই অনায়াসে কম্পিউটারে টাইপিং, স্মাট ফোনে বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন ও ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা করছেন। সজীবের ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন ও কম্পিউটার যান্ত্রিক কণ্ঠের মাধ্যমে তাকে তার কাজের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে পারে।
অনলাইনে চাকরির আবেদনসহ নানা কাজ করে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে সংসার চালিয়ে আসছেন সজীব। প্রতিবেশী একাধিক দোকানীর কথা, সজীব চোখে দেখতে না পেলেও অন্ধকারেই নিজের মেধা শক্তিতে বিভিন্ন পরিচিত জনের মোবাইল কল রিসিভ এবং কল দিতে পারেন। কারো কারো কণ্ঠ একটু শুনেই ওই ব্যক্তির নাম বলে দিতে পারেন। এছাড়া কারো সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তায় চলাফেরা করেন। মসজিদে গিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করেন।

সজীব জানান, চোখ নষ্ট হওয়ার পর থেকেই তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারতেন। সেই ইচ্ছে শক্তির জোরেই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে দোকান দিয়েছেন। সরকারি বা বেসরকারি অনুদান পেলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে আরও বড় করার স্বপ্ন রয়েছে।

সান্তাহার ডিজিটাল পোস্ট অফিসের ট্রেইনার মিজানুর রহমান বলেন, ডিজিটাল পোস্ট অফিসে সজীবসহ আরও প্রায় ৩ হাজার লোককে কম্পিউটার ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক প্রতিবন্ধী ছিল। আমরা প্রতিবন্ধীদের আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেই যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:২১ পিএম says : 0
May Allah return his eye sight. Ameen
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন