অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বারবার নির্দেশনা দেয়া হলেও সারা দেশে পরিচালিত হচ্ছে ইটভাটা। পরিবেশ অধিদফতরের নাকের ডগায় পরিচালিত হচ্ছে ভাটাগুলো। পরিবেশবাদী সংগঠনের আইনি ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এর আগে বহুবার সংশ্লিষ্টদের আদেশ-নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থদণ্ডও করেছেন। তা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না ভাটাগুলো। এ প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা এবং সংলগ্ন ৫ জেলার সকল অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিতে।
গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম এবং বিচারপতি ইকবাল কবিরের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ সময় আদালত প্রশ্ন তুলে বলেন, পরিবেশ অধিদফতর কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করছে বায়ুদূষণ বন্ধে? সেমিনার করে ভালো ভালো কথা বললে হবে না। বায়ুদূষণ বন্ধে কার্য়কর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পরে আদালত ঢাকাসহ সংলগ্ন ৫ জেলায় স্থাপিত সব অবৈধ ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে গুঁড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেন আদালত। অন্য জেলাগুলো হচ্ছে, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ। এ সময় পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে অ্যাডভোকেট আমাতুল করিম, ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষে অ্যাভোকেট মো: শাহজাহান ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে সিনিয়র অ্যাভোকেট সাইদ আহেমেদ রাজা এবং ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকের পক্ষে অ্যাভোকেট মো: মনিরুজ্জামান শুনানিতে যুক্ত ছিলেন।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ’ দায়েরকৃত রিটের শুনানি শেষে উপরোক্ত আদেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ ৫ জেলার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিদর্শক সব অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস ও সেখানে নির্মিত স্থাপনা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ সময় আদালত বলেন, কেউ এখন জেগে ঘুমাতে পারবে না। কারণ, বায়ুদূষণের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়েছে। আদালত প্রশ্ন তুলে বলেছেন, পরিবেশ অধিদফতর কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করছে বায়ুদূষণ বন্ধে? সেমিনার করে ভালো ভালো কথা বললে হবে না। বায়ুদূষণ বন্ধে কার্য়কর পদক্ষেপ নিতে হবে। আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, বারবার আদেশ দেয়ার পরও কেন অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হচ্ছে না?
এর আগে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশর রিটের প্রেক্ষিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি একই আদালতে অবৈধ ইটভাটার তালিকা দাখিল করে পরিবেশ অধিদফতর। ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজধানীসহ দেশের ৫ জেলায় ৩১৮টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এবং মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত ৯৫টি অবৈধ ইটভাটা এরই মধ্যে বন্ধ করা হয়েছেÑ মর্মে দাবি করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকায় অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১১২টি। সংলগ্ন মানিকগঞ্জে ১১টি, মুন্সিগঞ্জে ২৬টি, গাজীপুরে ৪৬টি এবং নারায়ণগঞ্জে ১২৩টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। ঢাকা জেলা প্রশাসক মো: শহীদুল ইসলাম আদালতকে তখন জানান, এরই মধ্যে ঢাকায় ২৭টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে ১২৮টি চালু রয়েছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসক জানান, তার জেলায় এখন ৪৬টি অবৈধ ইটভাটা চালু আছে। আদালত তখন নথি আকারে তালিকা দাখিল করতে বলেন। এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে একাধিকবার নির্দেশনা দেয়ার পরও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো নিষ্ক্রিয় থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেন।
এরও আগে গতবছর ৩১ জানুয়ারি বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান এবং বিচারপতি মো: কামরুল হোসেন মোল্লার ডিভিশন বেঞ্চ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পক্ষে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর রিট করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রিটের শুনানি নিয়ে ৭ দিনের মধ্যে চট্টগ্রামে অবৈধভাবে পরিচালিত সকল ইটভাটা বন্ধ করতে নির্দেশসহ রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কাঠ ও পাহাড়ের মাটিকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে- এমন ইটভাটার তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে চট্টগ্রাম প্রশাসন কার্যক্রম শুরু করলেও লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলাসহ কিছু জায়গায় অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না করে শুধু জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু আদালতের আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করায় চট্টগ্রাম প্রশাসনের তৎকালিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমান ও এসএম আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। পরে পরিবেশ অধিদফতর ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা আদালতে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এছাড়া দ্রুত আদেশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। অবৈধ ইটভাট বন্ধে পুনরায় অভিযান শুরু হয়েছে বলেও আদালতকে জানান তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন