বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

গ্যাসের দাম বাড়ালে হরতাল

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকবৃন্দ

প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে না এলে হরতালের হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। আর অন্যান্য আলোচকবৃন্দ অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেছেন, রান্নার কাজে গ্যাসের ব্যবহার পুরোটাই অপচয়; তার এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যে নাগরিক সমাজ মর্মাহত। তারা বলেন, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও নীতির অপব্যহারের কারণে জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় বাড়ছে। তাই দাম না বাড়িয়ে সরকারের উচিত এসব দিকে নজর দেয়া।
গতকাল (রোববার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত গ্যাস খাতের উন্নয়ন শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকবৃন্দ এসব কথা বলেন। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে জনস্বার্থবিরোধী হিসেবে মন্তব্য করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, যেদিন দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসবে, সেদিনই হরতাল ডাকা হবে। হালুয়া রুটি মার্কা হরতাল নয়, এই কর্মসূচি হবে জনগণের জন্য। গোলটেবিল বৈঠকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের নামের জনগণের অর্থের অপচয় করছে। এই অতিরিক্ত ব্যয় বহনের জন্য ট্যাক্স-ভ্যাট বৃদ্ধি করছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপরও অতিরিক্ত কর আরোপ করছে।
শামসুল আলম জানান, প্রতিটি গ্যাস কোম্পানি লাভজনক। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। আর বারবার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। এর ফলে নি¤œ আয়ের মানুষ বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। রাজস্ব বোর্ডের দাবিকৃত অতিরিক্ত কর পরিশোধের জন্যই গ্যাস কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সিএনজিসহ অন্যান্য খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়বে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমবে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, প্রত্যক্ষ কর আদায়ের পরিমাণ কমে যাওয়ায়, বিভিন্ন অপ্রত্যক্ষ কর আদায়ের দিকে ঝুঁকছে সরকার। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা খাতে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায়, গ্যাসের মতো খাত থেকেও সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। বিদেশে যে টাকা পাচার হচ্ছে তা করের আওতায় এলে বছরে সরকার ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় সম্ভব ছিল বলেও মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি-বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রত্যেক গণশুনানিতে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এবার নাগরিক সমাজের উচিত হবে গ্যাসের দাম কমানোর যৌক্তিকতা নিয়ে নিজেরাই একটি শুনানির আয়োজন করা, যেখানে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে দাওয়াত দেওয়া হবে। এরমাধ্যমে জনগণের মতামত তুলে ধরা হবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্র্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, গ্যাস জাতীয় সম্পদ। গ্যাসের মালিক হচ্ছে জনগণ। তাই গ্যাসের ব্যবহার জনস্বার্থে হবে। দুর্নীতিবাজদের স্বার্থ রক্ষায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির উদ্যোগের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন রান্নার কাজে গ্যাসের ব্যবহার পুরোটাই অপচয়। তার এ ধরনের দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্যে নাগরিক সমাজ মর্মাহত। তিনি বলেন, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও নীতির অপব্যহারের কারণে জ্বালানির সরবরাহ ব্যয় বাড়ছে। তাই দাম না বাড়িয়ে সরকারের উচিত এসব দিকে নজর দেয়া।
আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, সিএনজি ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন