গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি আজিজুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি। ওই মামলার রায়ে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ছিলেন আজিজুল। তিনি দীর্ঘ ২১ বছর নানা পেশায় ছদ্মবেশ ধারণ করে আত্মগোপনে ছিলেন। অত্যন্ত গোপনে চালিয়ে আসছিলেন সাংগঠনিক কার্যক্রমও।
আজিজুল নিজেকে লুকিয়ে রাখতে টেইলারিং, মুদি দোকানদার, বই বিক্রেতা, গাড়ি চালক এবং সবশেষ প্রিন্টিং ও স্ট্যাম্প প্যাড বানানোর কাজ করে আসছিলেন। কখনো রুমান, কখনো শাহনেয়াজ নামে নিজের পরিচয় দিতেন তিনি। গতকাল বুধবার ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিসিটিসি প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাজধানীর খিলক্ষেত বাজারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে একটি মসজিদের সামনে থেকে আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমানকে (৪৪) গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় জিহাদি বই, ২টি মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ ও কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক। আজিজুল হক রানার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০০০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে অবস্থিত সভামঞ্চের পাশে মাটির নিচে একটি ৪০ কেজি ওজনের বোমা এবং হেলিপ্যাডের (ডহর পাড়া) পাশে মাটির নিচে একটি ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। মুফতি হান্নানের সঙ্গে বোমা পুঁতে রাখার দায়িত্বে ছিলেন আজিজুল। ঘটনাটি প্রকাশ পেলে বোমা দুইটি উদ্ধারের পর আজিজুল হক ওরফে শাহনেওয়াজ কোটালীপাড়া থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল সিটিটিসিকে জানিয়েছেন, তিনি ১৯৮৭ সালে হরকাতুল জিহাদের সক্রিয় সদস্য মুফতি হান্নানের অনুসারী মাওলানা আমিরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসেন। আমিরুল ইসলাম তাকে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করেন।
এরপর চট্টগ্রামে গিয়ে সংগঠনের তালিম শেষে বোমা তৈরি, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। মুফতি হান্নান সংগঠনের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য জিহাদি বিশ্বস্ত কয়েকজন লোকের একজন হলেন আজিজুল হককে নির্বাচন করেন।
মুফতি হান্নান তাকে সংগঠনের নিয়মকানুন সম্পর্কে বুঝিয়ে দেন এবং আজিজুল হকের নাম পরিবর্তন করে ছদ্মনাম ‘শাহনেওয়াজ’ দেন। আজিজুল হক নতুন নাম শাহনেওয়াজ পরিচয়ে ১৫ দিন মোমবাতি প্যাকিংয়ের কাজ করেন। বিশ্বস্ততা অর্জন করলে কারখানার পেছনে একটি কক্ষে গোপন বৈঠকে উপস্থিত থাকার অনুমতি পান। গোপালগঞ্জের বিসিক এলাকায় কারখানায় মোমবাতি ও সাবান তৈরির আড়ালে বোমা তৈরির কাজ চলত। বোমা তৈরির কাজে আজিজুল হকসহ মো. ইউসুফ ওরফে মোসহাব, মেহেদী হাসান ওরফে আব্দুল ওয়াদুদ, ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক হোসেন, মহিবুল ওরফে মফিজুর রহমান, শেখ এনামুল হক, আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিসসহ আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন।
দীর্ঘ ২১ বছর একটি চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি জঙ্গি সদস্য কীভাবে পালিয়ে থাকতে সক্ষম হলেন, এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা কি না? এমন প্রশ্নে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, এটা ব্যর্থতা নয়, সফলতা। ছদ্মবেশ ধারণ করে নিজেকে আত্মগোপনে রেখেছিলেন তিনি। আজিজুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নতুন মামলায় আদালতের কাছে রিমান্ড চাওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন