বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। শুরু থেকে দুপুর ২টা থেকে শুরু হলেও ১ মার্চ থেকে মেলা শুরু হচ্ছে বেলা ৩টা থেকে এবং শেষ হচ্ছে যথারীতি রাত ৯টায়। তবে বেলা ৩টা থেকেই জমে উঠছে না মেলা। দুপুরের রোদের তীব্রতা কমে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই জমজমাট হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গণ। দর্শনার্থী আর আর লেখক প্রকাশকদের আনাগোনায় প্রাণ ফিরে পায় মেলা। সাধারণত দিনের বেলা সবারই কিছু না কিছু কর্ম ব্যস্ততা থাকে। তাই সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে অবসর সময়ে মেলায় আসেন লেখক প্রকাশক ও পাঠকরা। লেখক- প্রকাশক ও পাঠকদের সম্মিলিত পদচারণায় সন্ধ্যায় জমজমাট হয়ে উঠে গ্রন্থমেলা।
বুধবার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মেলা ঘিরে জমে ওঠে আড্ডা খোশগল্প। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। লেখক পাঠকদের মধ্যেও জমে উঠে আড্ডা খোশগল্প। মেলা ঘুরে দেখা যায় বরাবরের মতো অন্যপ্রকাশ, তাম্রলিপি, ঐতিহ্য, মাওলা ব্রাদার্স, আগামী প্রকাশনী এরকম পরিচিত প্রকাশনীগুলোর স্টলগুলোতে সন্ধ্যায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।
রাজধানীর ডেমরার দারুন নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার আলিম ১ম বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন এসেছেন বইমেলায়। কিনেছেন তরুণ ইসলামিক লেখক আরিফ আজাদের লিখা তিনটি বই। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরিফ আজাদের লিখা আমার অনেক ভালো লাগে। তাই তিনটাই কিনে নিলাম। মেলায় কখন এসেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাদিন ক্লাস ছিল। আসরের পর রওয়ানা দিয়েছিলাম, মাগরিবের পূর্বে মেলায় এসে পৌঁছলাম। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে হতে পাঠকদের আনাগোনাও ক্রমান্বয়ে বাড়ে বলে জানান সালাহউদ্দীন।
অবসর প্রকাশনীর একাউন্ট ম্যানেজার মাসুদ বলেন, সন্ধ্যার আগে অনেক রোদ থাকে সেজন্য মানুষ তখন মেলায় আসতে চায় না। এবং পাঠকদের মাঝে সংখ্যাগরিষ্ঠই যেহেতু তরুণ সে কারণেও সন্ধ্যার আগে মেলা ততটা জমে উঠে না। কারণ তরুণদের মাঝে প্রায় সবাই দিনের বেলা কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকেন।
বিক্রয়কর্মী ইসরাফিল বলেন, অনেকে জব করেন যারা বিকেল পাঁচটার পর অবসর পান। তাই তারা চাইলেও বেলা দুই কিংবা তিনটায় মেলায় আসতে পারেন না।
অনুপম প্রকাশনীর ব্যাবস্থাপক শাহিন বলেন, সন্ধ্যার সময়টাই হচ্ছে মেলার জন্য বেটার টাইম। কারণ মোটামুটি সবাই এ সময় একটু অবসর টাইম পায়। তাই সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে মানুষ বইয়ের ঘ্রাণ নিতে এসময়টাতেই মেলায় এসে হাজির হয়।
হুমায়ূন আহমেদের যখন নামিবে আঁধার বইটি হাতে নিয়ে মেলায় ঘুরছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলে মেলায় আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালে ২ আর বিকেলে ১ টা ক্লাস ছিল। ক্লাস শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েছি হলে গিয়ে। রোদের তীব্রতা কমে সন্ধ্যা হলে বান্ধবীদের নিয়ে মেলায় আসলাম। যেহেতু নয়টা পর্যন্ত মেলা চলবে তাই নিশ্চিন্তে দেখে দেখে পছন্দের বইগুলো কিনতেছি।
অন্য প্রকাশের স্ট ইনচার্জ তাওহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে মোটামুটি সবসময়ই ক্রেতাদের ভিড় থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় সন্ধ্যায়। এসময় ক্রেতাদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে মেলা প্রাঙ্গণ। আমরা যারা স্টলের দায়িত্বে রয়েছি সবাই বই দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ কোনো উৎসবে যেতে সন্ধ্যার সময়টাকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আর বইমেলাও যেহেতু একটা উৎসব তাই এখানেও এর ব্যতিক্রম হয় না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন