হিমেল হাওয়া ও বর্ষণ : বন্দরে সঙ্কেত : শ্রীমঙ্গলে ১৩৬ মি.মি. বৃষ্টিপাত
চট্টগ্রাম ব্যুরো : উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি গতকাল (রোববার) সকাল ৬টায় চট্টগ্রামের সীতাকু- উপকূল অতিক্রম করে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় হিমেল দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে মাঝারি থেকে ভারীবর্ষণ হয়েছে দেশের উপকূলভাগে। সেই সাথে স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে ৩/৪ ফুট উঁচু বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় নড়বড়ে ও বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যন্ত চর, উপকূল ও দ্বীপাঞ্চল। গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আগেই দুর্বল হয়ে কেটে যাওয়ার ফলে উপকূলবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। ফের স্বাভাবিক হয়ে এসেছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম। তবে বহির্নোঙর এলাকায় সাগর এখনও উত্তাল থাকায় জাহাজের পণ্যসামগ্রীর লাইটারিং খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল উত্তরাঞ্চল ছাড়া প্রায় সারা দেশে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। হিমেল হাওয়ার কাঁপুনিসহ কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। হিমেল হাওয়ার কারণে শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের দুর্ভোগ অনেক বেড়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ১৩৬, সন্দ্বীপ ও হাতিয়ায় ১৩৫ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ১৫, চট্টগ্রামে ৪০, কুমিল্লায় ১১৭, সিলেটে ৬৯, খুলনায় ২৯ ও বরিশালে ৩৯ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তেঁতুলিয়ায় ১৬.৭ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪.২ ও ১৯.৩ ডিগ্রি সে.।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরো উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল সকালে সীতাকু-ের নিকট দিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে এবং বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। নিম্নচাপটির প্রভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারীবর্ষণসহ দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এটি বর্তমানে সীতাকু- ও এর সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি আরো বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে এসব এলাকার কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারীবর্ষণ হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা ১ বা ২ ডিগ্রি সে. বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার উন্নতি হতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে ১১ ট্রলারডুবি ৩০ জেলে সাগরে ভাসছে
পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, গত শনিবার ৫ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে সুন্দরবনের কচিখালী থেকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পরে ১১টি মাছধরা ট্রলার ডুবির খবর পাওয়া গেছে। ট্রলারগুলো হল এফ.বি ভাই ভাই, এফ.বি নাজমুল, এফ.বি শুকতারা, এফ.বি মায়ের দোয়া, এফবি মা-বাবা দোয়া, এফবি, জলিল, এফ.বি, হাবিব, এফ.বি, মোশারেফ, এফ.বি মায়ের দোয়াসহ ১১টি ট্রলার। ট্রলারগুলোর মধ্যে ৯টি ট্রলারের ১৩৫ জেলেকে গত শনিবার ৫ নভেম্বর ও পরের দিন ৬ নভেম্বর পাথরঘাটা কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন মাধ্যমে উদ্ধার করা সম্ভাব হলেও এখনও ২টি ট্রলারের অন্ততঃ ৩০ জেলে গভীর সাগরে ফ্লোট হাতে ধরে ভাসছে বলে বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতি সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান গত শনিবার ৫ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে আকস্মিক ঝড়ের কবলে পরে ১১টি মাছধরা ট্রলার ডুবির ঘটনায় ৯টি ট্রলারের জেলেদের উদ্ধার করা সম্ভাব হলেও এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি আলিপুরের ইউসুফ কোম্পানীর মালিকানাধিন এফবি মোশারেফ নামক ট্রলারের ১৮ জেলেকে। জানা গেছে, ওই ট্রলারটি ৫ নভেম্বর কুয়াকাটার পায়রা বন্দর নামক স্থানের কাছাকাছি বসে তুফানে ফেটে তলিয়ে যায় পরে জেলেরা জালের ফেøাট হাতে ধরে ভাসতে থাকে।
পাঁচটি ট্রলারসহ ৬৫ জেলে নিখোঁজ
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা : কুয়াকাটা সংলগ্ন গভীর বঙ্গোপসাগরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পরে মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুরের ৬৫ জেলে নিখোঁজ থাকার খবর পাওয়া গেছে। রোববার শেষ বিকেল পর্যন্ত জেলেদের বরাদ দিয়ে মহিপুর আড়দদার সমিতির সভাপতি ফজলু গাজী জানিয়েছেন, পাঁচটি মাছ ধরার ট্রলারে নিখোঁজ জেলে বাষট্টি এবং শনিবার দু’টি মাছধরা ট্রলার ডুবির ঘটনায় তিন জেলে নিখোঁজ থাকায় এ অঞ্চলে পয়ষট্টি জেলে নিখোঁজ রয়েছে। সমুদ্র থেকে ফিরে আসা জেলেদের কাছে নিখোঁজ ওইসব জেলে পল্লীর স্বজনরা ভিড় করছেন।
উপজেলা ফিশিং ট্রলার মাঝি সমিতির সূত্রে জানা গেছে, প্রজনন মৌসুমের পর কয়েক হাজার জেলে এক সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়ে গভীর সমুদ্রে যায়। আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়ে মৎস্য বন্দর আলীপুরের ইউসুফ কোম্পানির মালিকানাধীন এফবি তামান্না ট্রলারের ১৮ জেলে, মহিপুর আড়দের জয়দেব বাবুর মালিকাধীন এফবি মা-বাবা ট্রলারের ২০ জেলে, এফবি তোতা ট্রলারের ১৪ জেলে, নামবিহীন দুটি ট্রলারের ১০ জেলেসহ ৫টি মাছ ধরার ট্রলারসহ বাষট্টি জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন