শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নিয়ন্ত্রণহীন ভোজ্যতেলের বাজার

বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নাকচ করেছে সরকার : ব্যবসায়ীরা সিণ্ডিকেট করে সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়েছে : ভুক্তোভোগীদের অভিযোন বাজারে সরকারের তদারকির অভাব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০১ এএম

বাণিজ্যমন্ত্রী ২ মার্চ ঘোষণা দিয়েছেন ভোগ্যতেলের দাম বাড়বে না; ব্যবসায়ীদের দাম বৃদ্ধির দাবি সরকার নাকচ করে দিয়েছে। কিন্তু বাজারে দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই সিন্ডিকেট করে সরবরাহ কমিয়ে ভোগ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি এলাকায় ভোগ্যতেলের দাম বেড়েছে।

মূলত পবিত্র রমজান মাস আসন্ন হওয়ায় বাজারে বেশ কিছুদিন ধরে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দামামা এবং আসন্ন রমজান ঘিরে অসাধু ব্যবসায়ীরা তেল মজুতের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। তাদের অতিমুনাফার লোভে তেলের দামও বাড়ছে হু-হু করে। ভুক্তোভোগীরা বলছেন, বাজারে সরকারের তেমন নজরদারী নেই। মাঝেমধ্যে কোথাও কোথাও ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে দু’চারজনের জরিমানা করে মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। বাস্তবে কোথাও তদারকী নেই।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে দেশি রিফাইনারি কোম্পানিগুলো হঠাৎ করেই তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। কোম্পানি থেকে ডিলার ও পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। বোতলজাত তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ২ ও ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বাজার থেকে প্রায় উধাও হয়ে গেছে।

সরবরাহ সংকটের কারণে গত বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম গড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। হাতিরপুল ও নিউমার্কেটে প্রতি লিটার ১৮৫ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২ লিটারের দাম ৩৩৫ থেকে ৩৪০ এবং ৫ লিটারের দাম ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকা। তারপরও অনেক দোকানে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রাবাড়ি, ফকিরের পুল বাজারে একই চিত্র। দোকানের সেলফে তেল না থাকা প্রসঙ্গে নিউমার্কেটের হোসেন স্টোরের বিক্রয়কর্মী মো. আরিফ বলেন, কোম্পানিগুলো চাহিদা মতো তেল দিচ্ছেন না, তাই দোকানে তেল নেই। প্রতিদিন ১, ২ ও ৫ লিটার মিলিয়ে ৮০০ থেকে হাজার লিটারের চাহিদা থাকলেও কোম্পানি থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ লিটারের বেশি দিচ্ছে না। একই দোকানে সদাই করতে আসা সাইদুল নামের একজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, তেল লুকিয়ে রাখা হয়েছে বাড়তি দামে বিক্রির আশায়। ফলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

শনির আখড়ার মসজিদ রোডের মনির স্টরের মালিক মো. মনির হোসেন বলেন, হঠাৎ করে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় পণ্য কম থাকলে দাম বাড়বেই। পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও কমানো নির্ভর করে মোকামে কেমন দাম তার উপর।

জানা গেছে, রমজান আসছে সে কারণে কয়েকদিন ধরে সয়াবিন তেলের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ও পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ঊর্ধ্বমুখী। অথচ এসব বাজারে তেলের সরবরাহে কোনো কমতি নেই।
এদিকে ঢাকার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তারা প্রতি টন ১ হাজার ৭৩০ ডলারে কিনছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনার মূল্যের পার্থক্য হচ্ছে ২৪৮ ডলার।

গত বুধবার বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের জানান, তার মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য আছে, মধ্যস্বত্বভোগীরা ভোজ্যতেলের মজুত গড়েছেন। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। সরকারি একাধিক সংস্থা তদারকিতে নেমেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে রিফাইনারি কোম্পানিগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটারে খোলা সয়াবিনের দাম ৭ টাকা এবং বোতলজাত তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়ানো হয়। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে তারা ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে প্রতি লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়ানের প্রস্তাব করে। বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়।

তবে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি লিটার তেলে ৮টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দর নির্ধারণ করা হয় ১৪৩ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন ১৬৮ টাকা ও বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন ৭৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গত দুতিন দিন থেকে আরো বাড়তি দামে ক্রেতাদের ভোগ্যতেল কিনতে হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Md Akther Uzzaman ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪১ এএম says : 0
শুধু সয়াবিন না চাল,ডাল আটা ময়দা,চিনি প্রতিটি দ্রব্য মুল্যের দাম বেড়েছে। আসলে মুল কারনটা কি বানিজ্য মন্ত্রী বলে মজুদ পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে। ৬মাস আমদানি না করলেও দাম বাড়ার কথা না।তাহলে সমস্যা কোথায় সিন্ডিকেট, অসাধু ব্যাসায়ী,মন্ত্রীর দুর্বলতা কোথায় শক্ত হাতে কেন পদক্ষেপ নিতে পারে না। কমিশন বানিজ্য, না তার সক্ষমতা।জনগণের মনে এমন কৌতুহল।কারন কারও বেতন ও ইনকাম ১ টাকাও বাড়ে নাই কিন্তু বাজার দাম দ্বিগুণ হয়েছে মানুষ আজ অসহায়।
Total Reply(0)
Pranto Dutta ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪২ এএম says : 0
এই সিন্ডিকেট অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।
Total Reply(0)
Tareq Anam ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪২ এএম says : 0
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগ খুঁজে কি ভাবে দ্রব্যমূল্যে বাড়ানো যায়। দ্রব্যমূল্যের সাথে যুদ্ধ করে সাধারণ মানুষ দিশেহার।
Total Reply(0)
Shamsul Momanin Khan ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৩ এএম says : 0
নিত্যপন্য দ্রব্যের মূল্য অসহনীয়, যা সিমীত আয়ের মানুষের জন্যে খুবই কস্টকর এবং সাধারন মানুষের জীবন যাপন অত্যন্ত কস্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে সংশিষ্ট সকলের সচেতনতা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
Total Reply(0)
MD Nuruzzaman ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৪ এএম says : 0
সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে দফায় দফায় সরকারের এইদিকে খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। আসলে এইগুলো সরকারের মন্ত্রী এমপিদের ব্যাবসায়িক ধান্দা
Total Reply(0)
Sharmin Chowdhury ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৪ এএম says : 0
আমাদের দ্রব্যমূল্যের যুদ্ধ অনেক আগেই শুরু হয়েগেছে এই যুদ্ধে বেশি কিছু হবেনা।যদি ৩য় বিশ্ব যুদ্ধও হয় তাতেও প্রভাব পরবেনা।কারণ আমরা সারা বিশ্বের মডেল!!!!!!!!!!!!!!!!
Total Reply(0)
MD Helal Miazi ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৫ এএম says : 0
দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সুফল পাচ্ছে জণগণ.......
Total Reply(0)
Khan Ashik Bin Islam ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৬ এএম says : 0
বিশ্বের একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যেখানে প্রতি দিনে জিনিস এর দাম বাড়ে
Total Reply(0)
জসিম ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৬ এএম says : 0
দাম কমাও, দেশ বাঁচাও
Total Reply(0)
Mozidul Islam Sabuj ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৬ এএম says : 0
রমজান মাস আসলেই এই সব সিন্ডিকেট মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।। দেখার কেই নেই
Total Reply(0)
Mijanur Rahman ৪ মার্চ, ২০২২, ৪:৪৯ এএম says : 0
নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটা জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। আমরা যারা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ তাদের জন্য বাজার করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম কমানোর ব্যাপারে সরকার উদাসীন, তারা এখন তাদের আখের গোছাতে ব্যস্ত।
Total Reply(0)
বশির আহাম্মদ ৪ মার্চ, ২০২২, ৮:৪৬ এএম says : 0
রমজান মাসে অধিক মুনাফার লোভে অতি মুনাফাখোর অসাধু মধ্যসত্বভোগী তেলের কারবারিরা সিন্ডিকেট করে বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। অধিক মুনাফা করবে রমজানে বাজারজাত করে। এদের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া জনকল্যানে আবশ্যক।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন