রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কিভাবে কাজ করে মেকানিক্যাল হার্ট

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রতিস্থাপণ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২২, ১২:১৩ এএম

‘মেকানিকাল হার্ট’, যা রক্তমাংসের হৃদপিণ্ডের বদলে, রক্ত সঞ্চালনের কাজটি করে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখার একটি যন্ত্র। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সফলভাবে এরকম একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে মানবদেহে।
৪২ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে মার্চের দুই তারিখ বুধবার ‘মেকানিকাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট’ করেছেন ঢাকার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল। চার ঘণ্টা সময় নিয়ে অস্ত্রোপচারটি করা হয়েছে। যন্ত্রটির দাম সহ সবমিলিয়ে এটি স্থাপনের খরচ হয়েছে সোয়া এক কোটি টাকার মত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যায় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণে। কিন্তু অঙ্গ প্রতিস্থাপনে দেশে ব্যাপক জটিলতা রয়েছে।
এই অস্ত্রোপচারে অংশ নিয়েছেন কার্ডিয়াক সার্জন ডা. আরিফ আহমেদ মহিউদ্দিন। তিনি বলছিলেন, ‘হৃদযন্ত্রের কাজ হচ্ছে বিরতিহীনভাবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত সঞ্চালন করা। শরীরের সকল অঙ্গের সুস্থতার জন্য হৃদযন্ত্রের সুস্থতা খুবই জরুরী। হৃদযন্ত্রের ক্ষতি যে পর্যায়ে গেলে এই কাজটি আর করতে পারে না সেই কাজটি করে দেয় এই যন্ত্র। সোজা ভাষায় বলতে গেলে এটি একটি রক্ত পাম্প করার বা হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনের যন্ত্র। এতে করে হৃদযন্ত্র বিশ্রাম পায় এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে আসে।’ এটি ব্যাটারি চালিত যা রীতিমতো মোবাইল ফোনের ব্যাটারির মতো চার্জ দিতে হয়। যে যন্ত্রটি বাংলাদেশে বসানো হয়েছে সেটি ‘হার্টমেট-থ্রি’। ডা. মহিউদ্দিন বলেন, এর ব্যাটারির চার্জ থাকে ছয় সাত ঘণ্টার মতো। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাম্প করার অংশটি বাসানো হয় হার্টের নিচে বাঁদিকের অংশে। হৃদপিণ্ডের সাথে যন্ত্রটিকে টিউব দিয়ে সংযোগ করে দেয়া হয়। এক ধরনের চুম্বক শক্তি দিয়ে যন্ত্রটি পাম্প করে।
পেটে ফুটো করে তার মাধ্যমে শরীরের বাইরের দিকে তার দিয়ে ব্যাটারি ও মনিটরের সাথে সংযোগ করে দেয়া থাকে। এই অংশ স্ট্র্যাপ দিয়ে একটি ব্যাগে ভরে দেয়া থাকে যা সারাক্ষণ বহন করতে হয়। সবমিলিয়ে এর বহনযোগ্য অংশের ওজন দেড় কেজির মতো। মনিটর দিয়ে ব্যাটারির চার্জ ও যন্ত্রের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। সাধারণত হৃদযন্ত্র পুরোপুরি বিকল হয়ে গেলে প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়। সেটিই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। কিন্তু হৃদযন্ত্র দ্রুত মারাত্মক অবনতির দিকে গেলে, কোনভাবেই আর ঔষধে কাজ না হলে, সুস্থ হৃদযন্ত্র পাওয়া না গেলে বা পেতে দেরি হলে এই যন্ত্রটি লাগানো হয়।
ডা. আরিফ আহমেদ মহিউদ্দিন বলছেন, ‘এই মডেলটি বাজারে এসেছে ২০১৭ সালে। এটি লেটেস্ট মডেলগুলোর একটি। আপনি কতদিন বাঁচবেন সেটিতো একদম হিসেব করে বলা মুশকিল। তবে এর ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফল থেকে দেখা যাচ্ছে সাধারণত পাঁচ বছরের বেশি সময় সুস্থভাবে বাঁচা যায়। যন্ত্রটির স্থায়িত্ব আট থেকে দশ বছর।’ তিনি বলছেন, অস্ত্রোপচার করে যন্ত্রটি বসানোর পর হাসপাতালে থাকতে হয় তিন থেকে চার সপ্তাহ। এরপর তিনমাসের মতো সময় লাগতে পারে শরীরের সবকিছুর সাথে অভ্যস্ত হতে। ‘এটা এমন নয় যে একটি যন্ত্র বসিয়ে দিলাম আর সবকিছু ঠিক হয়ে গেল। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রিহ্যাবিলিটেশনের বিষয়।’
বাড়তি কি সতর্কতা নিতে হয়? ডা. মহিউদ্দিন জানান, যন্ত্রটি বসিয়ে দিলেও রোগীকে ঔষধ দেয়া হয়। বিশেষ করে রক্ত পাতলা রাখার ঔষধ খুবই জরুরী। যার শরীরে যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়েছে তিন চার মাসের মধ্যে একশ ভাগ না হলেও তিনি মোটামুটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। ‘স্বাভাবিক কাজ যেমন বাইরে কোথাও যাওয়া, বাজার করা, অফিসিয়াল কাজ সবই সে স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে। এই যন্ত্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন হার্টের রোগীকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করা। পশ্চিমা বিশ্বে এই যন্ত্র লাগিয়ে খেলাধুলা, বাইসাইকেল চালানো এমনকি বডি বিল্ডিং করার পর্যন্ত নজির আছে।’
তবে কিছু সাবধানতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। যেমন ব্যাটারি বা মনিটর পুরোপুরি পানিতে ডোবানো যাবে না, সাতার কাটা যাবে না। যেহেতু যন্ত্রটির সংযোগ থাকবে শরীরের একটি অংশে ফুটোর মাধ্যমে, তাই সেখানে যাতে ঘা না হয় সেব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রোগীর শারীরিক অবস্থা, চিকিৎসকের পরামর্শ সঠিকভাবে মেনে চলা, সঠিকভাবে ঔষধ সেবন, সুসম খাদ্যাভ্যাস এই সবকিছুর উপর অনেকাংশেই নির্ভর করে রোগী কতদিন সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।
ঝুঁকি আছে কোন? কোন কিছুই ঝুঁকি বিহীন নয়। যেকোনো অস্ত্রোপচারের সাথে রক্তপাতে ঝুঁকি রয়েছে, এক্ষেত্রেও তাই। যেহেতু যন্ত্রটির কিছু অংশ শরীরের বাইরে থাকে, পেটে ফুটো করে সেটি বাইরে রাখা হয়, তাই জীবাণু দ্বারা ইনফেকশনের ঝুঁকি রয়েছে। হৃদযন্ত্রের বাঁদিকে যন্ত্রটি বসানো থাকে। ফলে হৃদযন্ত্রের ডানদিকে অংশ দুর্বল হয় যেতে পারে। অনেক সময় স্ট্রোক হতে পারে। থ্রমবোসিস বা রক্ত জমাট বাধার সমস্যা হতে পারে। যন্ত্রটিতে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে যে হাসপাতালে যন্ত্রটি বসানো হয়েছে সেখানে এই ব্যাপারে সহায়তার ব্যবস্থা থাকে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন