সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মশার কামড়ে জীবন বিপন্ন

মশা নিধনে কদম গাছ : ডিএসসিসি মেয়র পূর্ণাঙ্গ মশা ও লার্ভা দমনে জরুরি ভিত্তিতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম করে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২২, ১২:১৩ এএম

রাজধানীতে হঠাৎ বেড়েছে মশার উপদ্রব। এখন মশা থেকে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। মশার উপদ্রবে আতঙ্কিত নগরবাসী। সবচেয়ে বেশি অতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন ছোট শিশুদের অভিভাবকরা। মশার কামড়ে ডেঙ্গু, মেলেরিয়া, ফাইলেরিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্তের কথা বিবেচনা করে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন তারা। মশা নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা নেই। নিয়মিত ছিটানো হয় না মশানিরোধ ওষুধ। সিটি করপোরেশনের সেবা অ্যাপস থাকলেও অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার মিলছে না এমন অভিযোগ তাদের। নগরবাসীর পক্ষে কোনটি এডিস আর কোনটি কিউলেক্স মশা তা শনাক্ত করা সম্ভব না। ফলে ডেঙ্গু ও অন্যান্য রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি রয়েই যাচ্ছে। মশক নিধনে কদম গাছ রোপণের জন্য বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
ইতোমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মশার লার্ভা নিধনে ঝিল, লেক ও পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং তেলাপিয়া মাছ ছাড়ে। কয়েক হাজার ব্যাঙ ছেড়েছে। ব্যাঙ দিয়ে মশা নিধনের প্রক্রিয়া সফল হয়নি। তারপর ডিএসসিসি মশা নিধনে গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়। তবে এসবের কোন ব্যবস্থায়ই কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরোনো খালগুলোতে পানি বদ্ধ অবস্থায় থাকতে থাকতে পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে কালো হয়ে গেছে। বেশিরভাগ এলাকায়ই ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশে বা নর্দমায়। এতে বিভিন্ন এলাকার নর্দমার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পানি এক জায়গায় থাকতে থাকতে মশার লার্ভা সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর শনির আখড়া এলাকায় শনির আখড়া থেকে মৃধাবাড়ি সংযোগ খালের পানিতে সৃষ্টি হয়েছে মশার লার্ভা। খালের পানি চলাচলের মুখ স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মশার অতঙ্কে আমরা অতিষ্ট। সিটি করপোরেশনের মশার ওষুধ ছিটানোর লোক মাঝে মাঝে এসে ওষুধ দিয়ে যায়। কিন্তু তাদের ওষুধে কোন কাজ হয় না। তারা আসল না নকল ওষুধ দেয় তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। এছাড়াও পুরান ঢাকার বংশাল, লালবাগ, নবাবপুর, টিকাটুলী, ওয়ারী, কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন এলাকর অবস্থা একই। তাছাড়া খিলগাঁও, বাসাবো, মাদরটেক, নন্দীপাড়া, গোড়ান, বনশ্রী এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে একই অবস্থা জানা যায়।
খিলগাঁও গোড়ানের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, হঠাৎ করেই যেন মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। সন্ধ্যা নামতেই বাড়তে থাকে উপদ্রব। কোথাও দাঁড়ানো বা বসা যায় না। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড় দেয়। কানের কাছে এস বন বন করে। মাঝে মাঝে মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ দিলেও মনে হয় এ ওষুধে কোন কাজ হয় না।
কীটতত্ত্ববিদরা জানান, ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় মশার ঘনত্ব দ্রুত বাড়ছে। ডিসেম্বর, জানুয়ারিতে যেসব এলাকায় মশার ঘনত্ব ছিল দুই গুণ। মার্চে এসে তা আরও বাড়ছে। যা বেড়ে চার গুণে দাঁড়াবে। মশা নিধন করতে হলে মশার জীবন চক্র বুঝতে হবে। বদ্ধ পানিতে মশার জন্ম হয়। সেখানে মাছ ছাড়তে হবে। এর মাধ্যমে হয়তো ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পেস্টিসাইড ছিটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে আরও ৪০ শতাংশ। এরপর বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানি ও নালা-নর্দমা পরিষ্কার রেখে বাকি ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে মশাবাহী রোগ দমন করা যাবে। মশা নিধনে যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো প্রয়োগমাত্রা অনুযায়ী ব্যবহার করলে কোনো মশা মরে না। মশার খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় ড্রেন, নর্দমার পচা পানি। যখন শীতের পরে তাপমাত্রা বাড়ে, মশার জীবচক্রের গতিশীলতা বেড়ে যায়। এই সময়ে মশা ডিম বেশি পাড়ে। পূর্ণাঙ্গ মশা এবং লার্ভা দমনে জরুরি ভিত্তিতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম করে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এ মুহূর্তে সিটি করপোরেশন এলাকায় যে সমস্ত নর্দমা খালগুলো রয়েছে, সেগুলো পরিষ্কার করে ওষুধ দিয়ে দেয়া। এছাড়াও বাসাবাড়ির আশপাশসহ মানুষের বসবাসের স্থানে প্রতিদিন মশা নিরোধ ওষুধ দিতে হবে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সারাদেশে ডেঙ্গু এবং মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন, অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সকল নাগরিককে ভূমিকা পালন করতে হবে। বাড়ি-ঘর, অফিস আদালত, রাস্তা-ঘাট, ড্রেন, খাল-নালা সব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এডিসসহ অন্যান্য মশা প্রজনন বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। মশার কোনো বর্ডার নেই। মশা নিধন করতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চলতি মাসে মশার ঘনত্ব চরমে পৌঁছাবে। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে তা চারগুণ বেড়ে যাবে। তার গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার উত্তরা, গুলশান, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, কাঠালবাগান ও পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় গড় ঘনত্বে প্রতি ডিপে (মশার ঘনত্ব বের করার পরিমাপক) ৬০টির বেশি মশা পাওয়া গেছে। যেখানে অন্যান্য সময় এসব এলাকায় ১৫ থেকে ২০টি মশা পাওয়া যেতো। এই মশাগুলোর বেশিরভাগই কিউলেক্স মশা। তবে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এসব এলাকায় এক শতাংশেরও কম।
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সারা দেশে ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর ও সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য ২০২২ সালের প্রথম আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ডিএসসিসি মেয়র বলেন, এখানে সব সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আছেন। আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা যখন বিভিন্ন কর্মসূচিতে গাছ লাগাবেন তখন কদম গাছ লাগাবেন, এটা আমাদের জন্য সহায়ক হবে। কদম গাছে যে জৈব বিষয় আছে তা মশক নিয়ন্ত্রণ করে। কদম গাছে ফিঙে নামে একটি পাখি বসে এবং বাসা বাঁধে। ফিঙে পাখি মশকসহ অন্যান্য পোকামাকড় খায়। ফলে ওই পাখির মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তিনি বলেন, আমরা এ জৈব কার্যক্রমটা আরও জোরদার করতে চাই। কারণ দীর্ঘ মেয়াদে কীটনাশক ব্যবহার করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই আপনাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, আপনারা কদম গাছ যত বেশি লাগাবেন আমাদের জন্য সেটা সহায়ক হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন