শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

গুলি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন গয়েশ্বর

নিত্যপণ্যের দাম কমানো ও মানুষের নিরাপত্তা দাবি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২২, ১২:১৩ এএম

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো এবং মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, সরকারকে বলব, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমান, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিন আমি গুলি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। মানুষ একবারই মরে। কেরানীগঞ্জে এসেছি মরার জন্য। আওয়ামী লীগ লোকজন অথবা পুলিশেরও কারো কারো খায়েশ থাকে শার্টের বোতামগুলো খুলে দিচ্ছি।

গতকাল শনিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এখানে যারা পুলিশ প্রশাসনের লোকজন আছেন, হয়তোবা তারাও আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে এসেছেন। কারণ আমাদের দাবিটা একটা মৌলিক বিষয়, এর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে। ঘুষ, দুর্নীতি আছে। সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পুলিশের নাম বেশি শোনা যায়। তারপরও কয়জন পুলিশ ঘুষ পায় বা খায়? ৯৭ ভাগ পুলিশই ঘুষ পান না। এই পুলিশের লোকজন বাজারে গেলে তাদের কাছ থেকে কম নেয় না। এমন তো না আমার কাছ থেকে বেশি নেয়, পুলিশের কাছ থেকে কম নেয়। সরকারকে বলব, মানুষ অভাবের কথা বলবে, তার সুযোগ কেন থাকবে না?

এদিন সকালে জিনজিনরায় দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থানীয় নেতা হাজী ওমর শাহ নেওয়াজ, আব্দুল মান্নান রতন, ইশা খান, যুবদলের মোকাররম হোসেন সাজ্জাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সোহেল রানা, মহিলা দলের নার্গিস হক, ছাত্রদলের পাভেল মোল্লা প্রমুখ।

নিপুণ রায় চৌধুরী জানান, শুক্রবার রাতে সমাবেশের জন্য জিনজিনরা পার্টি অফিসের পাশে একটি মঞ্চ করলে তা ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এ সময় সেখানে আমার সাথে দায়িত্বপালন করা নেতাকর্মীদেরও মারধর করা হয়। এতে ২৫ জনের মতো নেতাকর্মী আহত হয়। খবর পেয়ে রাত ১ টার দিকে ঘটনাস্থলে ছুটে যান আমাদের নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। রাতভর জিনজিনরা পার্টি অফিসে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করেন গয়েশ্বর।

কেরানীগঞ্জের ঘটনা তুলে ধরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সুস্থভাবে আমরা রাজনীতি করতে চাই। কেরানীগঞ্জের মানুষগুলো একসঙ্গে বসবাস করতে চাই। আমরা হিন্দু সম্প্রদায় যেমন পূজার সময় পূজা করি, তেমনি মুসলমানরা নামাজের সময় নামাজ পড়ে। রাজনীতিতেও আওয়ামী লীগের কথা থাকলে মিটিং করবে, আমাদের সমালোচনা করবে। আমরা তার প্রতিউত্তর দিব আরেকটি সভা করে। কিন্তু কারো সভা ভেঙ্গে নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, গণমাধ্যমসহ সবাই বলে বাংলাদেশ থেকে মাত্র দশ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। এই টাকা যদি পাচার না হতো, বাংলাদেশে বিনিয়োগ হতো। তাহলে অনেক শিল্পকলকারখানা হতো, কর্মসংস্থান হতো। আমাদের চাহিদা পূরনের পরও বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করতে পারতাম। আমাদের যুবক ভাইদের বৈধ অথবা অবৈধ উপায়ে বিদেশে যেতে হতো না। ভূমধ্যসাগরে পানিতে ডুবে মরতে হতো না। এই সরকারের নানা মানুষ নানা দায়িত্বে। কেউ সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে। যারা সীমান্তের দায়িত্বে তাদের কাছে অস্ত্র আছে, তারা অন্যায় দেখলেও গুলি করতে পারে না। অপরদিকে ভারতের বিএসএফ পাখির মতো আমাদের দেশের মানুষকে একের পর এক গুলি করে মারছে। সেক্ষেত্রে কিন্তু সরকারের কোনো প্রতিবাদ নেই।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরো বলেন, আমরা ফারাক্কার পানি অনেক আগে থেকে পাইনা। এমনকি তিস্তার পানিও আমরা পাচ্ছি না। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতে আমাদের ফেনী নদীর পানি মানবিক কারণে দেওয়া হচ্ছে। আমরা মানবিক কারণে পানি দিচ্ছি, যদিও আমাদের যথেষ্ট পানির অভাব রয়েছে। তাহলে ভারত থেকে পানি আনতে পারছি না কেন? এর জবাব কে দিবে?

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে ঘরে থাকলে মরতে হয়, বাইরে গেলে গুম হয়ে যেতে হয়। কখনো কখনো গুলি খেয়ে মরতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাষ্ট্রের অনেক টাকা ব্যয় হয়, অনেক লোক নিয়োগ করা হয়েছে। আগে থানাতে একটি জিপ ছিল না। এখন প্রায় সব থানার সাব ইন্সপেক্টরই গাড়িতে চড়ে। তাদের কাজ কী? জগণের নিরাপত্তা দেওয়া। তারা সরকারের লোকদের নিরাপত্তা দিতে দিতেই ব্যস্ত, সুতরাং জনগণ নিরাপত্তা পায় না। সে কারণে নারী শিশুসহ জনগনের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে পারে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এই কেরানীগঞ্জে কতটা মাদক স্পট আছে? নিশ্চয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জানেন। থানার কর্মকর্তাদেরও না জানার কথা না। কিন্তু মাদক ব্যবসা কিন্তু অহরহ চলছে।এদিকে একটু নজর দেন। তাতে কিছু যুব সমাজ বাঁচুক। একটি পরিবারের একজন মাদক গ্রহণ করলে সেই পরিবারটা ধ্বংস হয়ে যায়। সেদিকে একটু নজর দেন। তা দিবেন না। ভূমি দখল, জায়গা দখলের কোনো শেষ নেই। বৃহত্তর ঢাকা জেলার যে প্ল্যান আছে, সেখানে খাল বিল, নিচু জমি ও কৃষি জমি ভরাট করা নিষেধ। একটা শস্য শ্যামল এলাকা কেরানীগঞ্জ ছিল, আজকে বালুতে ঢাকা। কার জমিতে এই বালু কে ফেলে ভরাট করে? আবার বালু ভরাটের টাকা দিতে না পারলে জমি দিয়ে দিতে হয়। এতে করে কেরানীগঞ্জের মানুষ ভূমিহীন হচ্ছে। হাউজিং করে প্লট বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু জমির মালিকের কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছে কিনা সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। এসবের কোনো বিচার নেই। আইনশৃঙ্খলাসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেউই নজর দেন না। তিনি বলেন, এই জমি বিক্রি বা কেনা যে কত কঠিন সংশ্লিষ্ট ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারেন না। সরকারি রেজিস্ট্রি ফি’র বাইরেও কতটাকা দিতে হয় তার হিসাব নেই। ইশারা ছাড়া ইচ্ছে করলেই জমির মালিক জমি বিক্রি করতে পারেন না।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন