শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

প্রচলিত কিছু বিদআত

প্রকাশের সময় : ৮ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুফতি ইবরাহীম আনোয়ারী

বিদ’আত শব্দের আভিধানিক অর্থ, অতিরিক্ত, নতুন উদ্ভাবন, সুন্নাতের বিপরীত ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ, পূর্ব নমুনা ব্যতিরেকে নতুনভাবে কোন বস্তু বা বিষয় উদ্ভাবন করা, অনেক হক্কানি আলেমদের মতে বিদ’আত কেবল মন্দ বিষয়ের জন্যে ব্যবহার হয়। মোট কথা কুরান হাদিস ইজমা কিয়াসে কোন একটিতেও বিদ’আতের পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায় না, বরং মানুষ ইবাদত মনে করে সওয়াব পাওয়ার আশায় আমল করাকে বিদ’আত বলে।
মানুষের ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা ও কর্মকা-ের আলোকে বিদ’আতকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমত : ই’তিকাদী ও বিশ্বাসগত বিদ’আত অর্থাৎ কোরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী নতুন ধ্যান-ধারণা ও বিশ্বাস, যেগুলো বিরোধিতা কিংবা কুফরীর ভিত্তিতে নয় বরং অতিমাত্রায় ভক্তি ও বিশ্বাস কিংবা সন্দেহ বা অজ্ঞতবশত ইসলামের মধ্যে নতুনভাবে অনুপ্রবেশ করেছে। যেমন- বিশ্বজগত পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অলী-দরবেশ ও নবী-রাসুলগণকে আল্লাহ তা’আলার শরীক মনে করা অথবা আল্লাহ তা’আলার প্রতিভূ হিসেবে তাদেরকে বিশ্বজগত পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাপ্রাপ্ত মনে করা, গুণে ও বৈশিষ্ট্যে রাসূল (সা.) কে আল্লাহ তা’আলার সমকক্ষ বা কাছাকাছি মনে করা। মানব রচিত আইনগুলোতে ইসলামী আইনের চেয়ে অধিকতর উপকারী ও যুগোপযোগী মনে করা এবং আল্লাহ তা’আলার পরিবর্তেন জনগণকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী মনে করা প্রভৃতি ই’তিকাদী ও বিশ্বাসগত বিদ’আত। শী’আ, বাতিনিয়্যাহ, মুষাব্বিহা, মুজাস্সিমাহ, জাবরিয়্যাহ, কাদরিয়্যাহ, মুরজিয়্যাহ, হাশবিয়্যাহ, র্কারামিয়্যাহ, কাদিয়ানিয়্যাহ ও বাহাইয়্যাহ প্রভৃতি দলগুলোর
ভ্রান্তচিন্তা ধারাগুলোও এ প্রকারের বিদ’আতের অর্šÍভুক্ত। উল্লেখ্য যে, এ ধরনের বিশ্বাসগত বিদ’আত ‘আমলী বিদ’আতের চাইতে অধিকতর জঘন্য ও ইসলামের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর’।
দ্বিতীয়ত : আমলী বা কর্মকা-ে বিদ’আত. পূর্ব থেকে চালু হয়ে আসেনি বা কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে যে সব কাজের ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না সে সবই হল ‘আমালী বিদ’আত। যেমন- বুযুর্গ লোকদের কবরের উপর গৃহ ও গম্বুজ তৈরি করা, দরগাহ বা কাবরের পাশে গরু ছাগল ইত্যাদি যবেহ করা ও খাবার বিতরণ করা, মৃত ব্যক্তির ইছালে ছাওয়াব এর উদ্দেশ্যে চারদিনা, চলিশদিনা ও বার্ষিকীর আয়োজন করা, ওরশ করা। এক মিনিট নিরবতা পালন করা, মাসজিদে হারাম ও মসজিদে নববী থেকে, অনুরূপভাবে কাবরস্থান থেকে পশ্চাত দিক হয়ে বের হয়ে আসা, মৃত্যুর পর কবর পাহারা দেয়া, কবরে মশারি দেয়া। রাসূল (সা.)-এর নাম শুনলে চোখে বৃদ্ধাঙ্গুল বুলানো। মসজিদ বা মাজার দেখলে হিন্দুদের মত হাত মুখে ও কপালে লাগানো। একামতের সময় আশহাদু আন্না মুহাম্মাদর রাসূল্ল্লুাহ বলা পর্যন্ত বসে থাকা। এবং কবরে ধূপ, আগরবাতি ও মোমবাতি জ্বালানো প্রভৃতি আমলী বা কর্মকা-ে বিদ’আত।
তৃতীয়ত : কওলী বা বাচনিক বিদ’আত. কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে ভিত্তি নেই এ ধরনের যে কোনো বাচনিক যিকির, দু’আ ও ‘ইবাদাত হল কওলী বা কথা-বার্তায় বিদ’আত। যেমন-ফরয নামাযের পর নিয়মিত সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা, সম্মিলিতভাবে সমস্বরে যিকির করা, আযানের আগে বা পরে জোরে জোরে রাসূল (সা.)-এর প্রতি সালাত ও সালাম প্রেরণ করা, জানাযার নামায শেষে দাফনের পূর্বে মুনাজাত করা এবং মৃত ব্যক্তিটি কেমন ছিল প্রশ্ন করা। নামায ও রোযার নিয়ত মুখে শব্দ করে উচ্চারণ করা, মৃতের কুলখানি, বাদ্যোদ্যমে সিমা এবং কোরআন ও হাদীসে প্রমাণ নেই এ ধরনের যে কোনো যিকির ও খতম ইত্যাদিকে। বুখারী শরিফে উল্লিখিত, হযরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন: “তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন খ্রিস্টানরা র্মাইয়াম ও হযরত ‘ঈসা (আ.)-এর প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে। জেনে রেখো, আমি হলাম কেবল তাঁর বান্দা। তোমরা আমার পরিচয় দিতে গিয়ে বলবে: আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল।” আল্লাহ তায়ালা সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং তার মনোনীত ও শান্তির ধর্ম ইসলামকে সকল প্রকার বিদ’আতের হাত থেকে হেফাজত করুনু।
লেখক : খতিব, বাইতুল করিম জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন