জিএম মুজিবুর রহমান : মানুষকে আল্লাহ ভালো-মন্দ, সুন্দর-অসুন্দর, কল্যাণ-অকল্যাণ বুঝবার জন্য একটি ক্বলব বা অন্তর দিয়েছেন। যার মাধ্যমে মানুষ তার চলার পথ বেছে নিতে পারে। মানুষ দেহসর্বস্ব কোন জীব নয়। সে অন্তর দ্বারা চিন্তা-ভাবনা করে তার অন্য অঙ্গের মাধ্যমে ভালো বা মন্দ কাজ সম্পাদন করে থাকে। ক্বলব বা অন্তরকে ভালো রাখা মানুষের জন্য খুবই প্রয়োজন। কেননা, অন্তর ভালো না থাকলে কাজ ভালো হয় না। পাপ-পঙ্কিলতা থেকে অন্তরকে মুক্ত রাখা ও অসুস্থতা থেকে নিরাপদ রাখা নিতান্ত জরুরি। অন্তরে রোগ হলে, অসুস্থতা দেখা দিলে চিকিৎসা দেয়া দরকার। রাসূল (সা.) বলেছেন, “জেনে রেখো! শরীরের মধ্যে এমন এক টুকরো গোশত রয়েছে, যা সুস্থ থাকলে সারা শরীর সুস্থ থাকে, আর এটা অসুস্থ হলে সারা শরীরই অসুস্থ হয়ে যায়। জেনে রেখো, আর এটাই হলো ক্বলব বা অন্তর।” (বুখারী, হা/৫২)।
মানুষের অন্তর ভালো থাকলে কাজ ভালো হয়, অন্তর খারাপ হলে কাজে মনোযোগ থাকে না। কাজ অগোছালো হয়ে যায়। অন্তরকে ভালো রাখতে হবে, মসৃণ রাখতে হবে, রোগমুক্ত রাখতে হবে। পবিত্র অন্তরে পাপ ঢুকতে পারে না। শয়তানের অসওয়াসা থেকে মুক্ত থাকে। অন্তরকে কুচিন্তা-কুবুদ্ধির হাত থেকে রক্ষা করা যায়। অন্যথা হলে অন্তর কঠিন হয়ে যায়। স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, “হৃদয় এবং মস্তিষ্কের মধ্যে যখন দ্বন্দ্ব জাগে, তখন তুমি হৃদয়কেই গ্রহণ কর। কারণ বুদ্ধিমান মানুষের চেয়ে হৃদয়বান মানুষ অনেক শ্রেয়। বুদ্ধিমান বুদ্ধি দিয়ে ভালোও করতে পারে, মন্দও করতে পারে, কিন্তু হৃদয়বান কেবল ভালোই করবে।”
মন্দ বা পাপ কাজ, মন্দ চিন্তা ও শয়তানি কর্মকা- জীবনকে গ্রাস করে ফেলে। অন্তর কঠিন হলে মানুষ আল্লাহর আজাব ও জাহান্নামের শাস্তির কথা শুনলে মন কাঁদে না, ভয়ভীতির উদ্রেক হয় না। আর তখন মানুষের ইহলৌকিক জীবনে অমানিশা নেমে আসে এবং পারলৌকিক জীবনে মুক্তির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, “ক্বিয়ামতের দিন কোন অর্থ-সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি কারো কোন উপকারে আসবে না। একমাত্র সে ব্যক্তি মুক্তি পাবে, যে সুস্থ ক্বলব বা অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছবে।” (সূরা শু’আরা/৮৮-৮৯)।
ক্বলব সুস্থ রাখার জন্য প্রত্যেক মানুষের সুদৃঢ় প্রচেষ্টা থাকা দরকার। কেননা ক্বলব অসুস্থ হয়ে পড়লে মানুষের অন্তর কঠিন হয়ে যায়; আর কঠিন অন্তরে আল্লাহর আনুগত্যে ও ভালোকাজে অলসতা জন্মায়। ইবাদতে মনোযোগ হারিয়ে যায়। লোক দেখানো ইবাদত করা হয়। মন্দ কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। মুনাফেকি চরিত্র ফুটে ওঠে। সালাত পড়বেন কিন্তু অন্তরে আল্লাহভীতি থাকবে না। সালাতে নফল ও সুন্নাত আদায়ের পরিমাণ কমে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, “যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন তারা অলসভাবে দাঁড়ায়।” (সূরা নিসা/১৪২)।
তিনি অন্যত্র বলেন, “তারা সালাতে আসে অলসতার সাথে আর ব্যয় করে সংকুচিত মনে।” (সূরা তওবা/৫৪)। পক্ষান্তরে অন্তর সুস্থ থাকলে লোভ-লালসা, কামনা-বাসনা দূরীভূত হয়ে যায়। দুনিয়াবী মায়া-মমতা, হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা, কৃপণতা, অহমিকা থাকে না। আল্লহর প্রতি ভালোবাসা, রাসূলের (সা.) প্রতি আনুগত্য এবং ইসলামের বিধি-নিষেধের প্রতি আগ্রহ প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্তরকে সুস্থ রাখার জন্য সুন্নত ও বিদআত থেকে দূরে থাকতে হবে।
আল্লাহর নির্দেশ পরিপন্থী কামনা-বাসনা পরিহার করতে হবে। ইবাদতে ও ভালো কাজে অলসতা বর্জন এবং কুপ্রবৃত্তি হতে মুক্ত থাকতে হবে। আর আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে এমন কাজের প্রতি আগ্রহ ও প্রচেষ্টা থাকলে আল্লাহ তাদের প্রতি সদয় থাকবেন। আল্লাহ বলেন, “পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যে সৎকর্ম করে সে মুমিন, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের জন্য প্রাপ্য পুরস্কার দেব যা তারা করতো।” (সূরা নহল/৯৭)।
অন্তরকে সুস্থ রাখতে আমাদেরকে পরিকল্পনা করা দরকার। এজন্য দুনিয়ার কাজ থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকতে হবে। দুনিয়ার ভালোবাসা আখেরাতের ভালোবাসা থেকে প্রাধান্য পেলে অন্তরকে সুস্থ রাখা সম্ভব নয়। দুনিয়ার স্বার্থে বিভোর হয়ে গেলে ভালো পরিবেশ থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে হয়। খারাপ প্রবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ততা আকৃষ্ট করে। অসৎ সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠতে থাকে। ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্যি সম্পর্কে ভাববার অবকাশ থাকে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন