অর্থনৈতিক রিপোর্টার : প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে নিম্নগতি দেখা দিলেও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে এই অক্টোবরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ সাড়ে ১৪ শতাংশ বেশি বিদেশি মুদ্রা আয় করেছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) হিসাবে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এই সময়ে ১৫ শতাংশের বেশি রেমিট্যান্স কমলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, যার জন্য রপ্তানি বৃদ্ধিকেই মুখ্য কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের পাশপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত মাছ, ওষুধসহ অন্যান্য খাতে সুবাতাস বইছে। এর জন্য দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকাকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন অর্থনীতির গবেষক ও রপ্তানিকারকরা।
গত রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চতুর্থ মাস অক্টোবরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ২৭১ কোটি ২৮ লাখ (২ দশমিক ৭১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। এটা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ৩ শতাংশ বেশি। পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন বলছেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় রপ্তানি আয় বাড়ছে।
আগামী মাসগুলোতেও এ ‘ধারা’ অব্যাহত থাকার প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, বছর শেষে গত অর্থবছরের মতো চলতি বছরেও রপ্তানি আয়ে ১০ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হবে। তবে বিশ্ববাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের দাম কমে যাওয়ায় তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বেশি পণ্য রপ্তানি করে কম আয় হচ্ছে।
গত জুলাইয়ে গুলশানে জঙ্গি হামলার পর ক্রেতাদের মধ্যে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল তা কেটে গেছে বলেও মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত। তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে আর কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি। সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বায়ারদের মধ্যে যে শঙ্কা ছিল সেটা কেটে গেছে। রাজনীতিতেও স্থিতিশীলতা রয়েছে। এ সব কিছুরই ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রপ্তানি আয়ে।
ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে এক হাজার ৭৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার (১০ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এরমধ্যে ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে।
এই চার মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে, ৪৫৩ কোটি ৫১ লাখ (৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন) ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে উভেন পোশাক। এই খাত থেকে আয় হয়েছে ৪২৮ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। এখানে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। মূলত তৈরি পোশাকের উপর ভর করেই জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি আয়ে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে নিট পোশাকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় ২ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়লেও উভেন পোশাকে ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৩ কোটি (১০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন) ডলার।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, বাংলাদেশ যতো কম দামে ভালো মানের পোশাক রপ্তানি করে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ তা পারে না। সে কারণে যতো বাধা-বিপত্তিই আসুক না কেন আমাদের রপ্তানি আয় বাড়বেই। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ তিন হাজার ৪২৫ কোটি ৭২ লাখ (৩৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরে চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরা হয় ৩৭ বিলিয়ন ডলার।
অন্যান্য খাতের আয়
তৈরি পোশাকের মতো চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে, ১৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। জুলাই-অক্টোবর সময়ে এই খাত থেকে মোট আয় হয়েছে ৩৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। জুতা রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ২০ শতাংশ। তবে ফিনিশড লেদার রপ্তানি কমেছে দশমিক ৩২ শতাংশ।
হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৯ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। এই অর্থ আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। জুলাই-অগাস্ট সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ২৯ কোটি ৬২ লাখ ডলার আয় হয়েছে। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। এই চার মাসে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন