নানা আয়োজনে সারা দেশে উদযাপিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতি আয়োজনেই ছিলো নারীর প্রতি সহিংসতার বন্ধের দাবি। একই সঙ্গে ছিলো সমতার দাবিও। গতকাল মঙ্গলবার দিবসটি উপলক্ষে সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত নারী দিবসের অনুষ্ঠন অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়নে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএন উইমেন’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি গিতাঞ্জলি সিং। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদা পারভিন। অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ৫ জন জয়িতাকে সম্মাননা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নারী উন্নয়নে এখন সারাবিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল। উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রা যেনো থেমে না যায় তাই কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আমাদের ছিল সময়োচিত, সমন্বিত বহুমুখী উদ্যোগ। শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহন বাড়ার চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী জানান গত ২৮ বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মেয়েদের পাসের হার বেড়েছে আড়াই গুণ।
‘নারী- পুরুষের সমতা, টেকসই আগামীর মূলকথা’- প্রতিপাদ্যের আলোকে নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতা বন্ধ করো, সম্পদ- সম্পত্তিতে সমান অধিকার ও সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিত করো- শ্লোগান নিয়ে দিবসটি উদযাপন করেছে ৬৬ টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি। বিকালে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সমাবেশে ঘোষণা পাঠ করেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার রেহেনা বেগম। ঘোষণা পত্রে যে দাবিগুলো উত্থাপন করা হয় সেগুলো হলো-সংবিধানে প্রদত্ত সমঅধিকার বাস্তবায়নের জন্য আইনগত পদক্ষেপে নেয়া এবং প্রতিষ্ঠানিক ভিত্তি গড়ে তোলা; সম্পদ- সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকান ও সম অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা; নারী ও কন্যার প্রতি নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়, প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করা; ধর্ষণের মামলার দ্রæতবিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করা; পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইন, ২০১২ এর বাস্তবায়ন করা; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় নারীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন পরিবর্তন করে সব নাগরিকের সমঅধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করা উল্লেখযোগ্য। সমাবেশ শেষে একটি র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। র্যালীটি শহীদ মিনার চত্বর থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি’র সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
দিবসটি উপলক্ষে অনলাইন প্লাটফর্মে ওয়েবিনারের আয়োজন করে ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ নামক একটি উন্নয়নসহযোগী সংগঠন। ফ্রেন্ডশিপ বেলজিয়ামের চেয়ার প্রিন্সেস এসমেরালডা ডি রেথি, ফ্রেন্ডশিপ নেদারল্যান্ডস চেয়ার ডরোথী টের কুলভ এবং ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ চেয়ার মার্ক এলভিনগার, সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রুনা খান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বলেন, টেকসই ভবিষ্যতের জন্য নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ চেষ্টা করে যাচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ।
র্যালি, বিশেষ সংকলন ‘কণ্ঠস্বর’ এর মোড়ক উন্মোচন ও কেক কাটার মধ্য দিয়ে উৎসবমূখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুর নেতৃত্বে র্যালিটি দুপুর ১২টায় ডিআরইউ চত্বর থেকে শুরু হয়ে বারডেম-২ হাসপাতাল হয়ে পুনরায় ডিআরইউতে এসে শেষ হয়। র্যালি শেষে নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখির পরিচালনায় ডিআরইউ নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিশেষ সংকলন ‘কণ্ঠস্বর’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয় ও কেক কাটা হয়। এসময় ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ বিশেষ প্রার্থনা ও কেক কেটে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নারীরা যাতে তাদের সম অধিকার সমমর্যাদা পায় সেই দাবি জানানো হয়। এছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাব দিবসটি উপলক্ষে এক আলোচনার সভার আয়োজন করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন