স্টাফ রিপোর্টার : জাসদের ভুল রাজনীতির কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বর্তমান সরকারের শরিক জাসদের পঁচাত্তরের ভূমিকার সমালোচনা করার পাশাপাশি তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- এবং ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহের জন্য বাংলাদেশে ‘একদিন’ জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার হবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে ০৭ নভেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা ও সৈনিক হত্যা দিবস’ উপলক্ষে স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীরউত্তম স্মৃতি পরিষদ এ স্মরণসভার আয়োজন করে।
মোজাম্মেল হক বলেন, জাসদের ভুল রাজনীতির কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। অবশ্য পরে জাসদ এ ভুল স্বীকার করেছে। এই সুযোগ নিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। সেজন্য বাংলার মাটিতে জিয়ার মরণোত্তর বিচার করা হবে।
জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের খলনায়ক উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের ৯ মাসে তিনি একদিনও মুক্তিযুদ্ধ করেননি। জিয়া ছিলেন ‘বাইচান্স’ মুক্তযোদ্ধা। বরং দেশকে স্বাধীন করেছিলেন খালেদ মোশারফের মতো দেশপ্রেমিকরা। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জিয়া মুজিবনগর সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। তাকে জোর করে সেক্টরে বসিয়ে দেয়া হয়েছিলো। জিয়া স্বাধীনতা চাননি। কর্নেল তাহেরদের ভুলের কারণেই বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। আর এর সুযোগ নিয়েছিলেন খলনায়ক জিয়া।
মোজাম্মেল বলেন, এই জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনী। সে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে জড়িত। অনেক তথ্যাদি আছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা, ৭ নভেম্বরের ঘটনায় জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার ইনশাল্লাহ বাংলাদেশের মাটিতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ এর নভেম্বর সেনাবাহিনীতে কর্নেল তাহেরের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা যে লিফলেট ছাড়ল, যে বিভ্রান্তিকর কাজগুলো হয়েছিল, সেই সময় জাসদের যে ভূমিকা ছিল, সেই ভূমিকার কারণেই এ অবস্থা হয়েছিল। যেহেতু তারা পরে এ কথা স্বীকার করেছে যে তাদের সেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। একটা দল যখন স্বীকার করে, তখন অন্যদের বলার কিছু থাকে না।
জাসদের সেই ‘ভুল সিদ্ধান্তের কারণে’ জিয়াউর রহমান ‘সুযোগ পেয়েছিলেন’ বলেও মন্তব্য করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী। তিনি বলেন, একটা ছোট্ট ভুলও অনেক সময় দেশের জন্য ক্ষতিকর। সেনাবাহিনীতে যে সব নিয়ম কানুন, তাতে ক্ষমা করতে নেই। জিয়াউর রহমানকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন হত্যা করাই ছিলো স্বাভাবিক নিয়ম। আমি জানি না, কোন স্ট্রাটেজিতে তারা তা করে নাই। তাকে গৃহবন্দি রেখে পরবর্তী পাল্টা ক্যু’র সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মত। এগুলো হয় না। জিয়া কিন্তু পাল্টা ‘ক্যু’ করে প্রতিশোধ নিতে এক মুহুর্ত দেরি করেন নাই। যেটা খালেদ মোশাররফরা প্রতিবিপ্লবীদের ছাড় দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এই ‘কৌশলগত ভুলের’ জন্য খালেদ মোশাররফের সমালোচনা করলেও তিনি ‘শেষ পর্যন্ত দেশপ্রেমিক’ ছিলেন। খালেদ মোশাররফ জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, তিনি দেশকে ভালোবাসেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর পঁচাত্তর পরবর্তী ভূমিকার সমালোচনা করে আ ক ম মোজাম্মেল খালেদ মোশাররফকে সেনাপ্রধান হিসাবে স্বীকৃতি দিতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সেদিন খালেদ মোশাররফ প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাকে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ কথা আমরা কেউ আজ লিখি না। যত স্বল্প সময়ের জন্যই হোক, সেটা একদিনের জন্যই হোক, আর চারদিনের জন্যই হোক। তিনি কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি হয়েছিলেন। মেজর জেনারেল হয়েছিলেন। আমি সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করব সেই ইতিহাসটুকু সংরক্ষণের জন্য।
জেনারেল ওসামনীর সমালোচনা করে মোজাম্মেল বলেন, খুনী মোশতাককে বাঁচাতে গিয়ে জেনারেল ওসমানী সাহেব তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ডোন্ট শুট হিম, কিল মি ফার্স্ট, দেন কিল হিম। ১৫ আগস্টের পর তার ওই আড়াই মাসের ভূমিকা যদি আমরা পর্যালোচনা করি, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ৭ নভেম্বর পর্যন্ত, তিনি কিন্তু খুনীদের উপদেষ্টা হয়ে এ সব দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই ইতিহাসও আসবে। ইতিহাসের স্বার্থে সব সত্য কথাই মানুষের সামনে আসবে। একদিনের হিরো চিরদিনের হিরো থাকে না।
খালেদ মোশাররফের স্ত্রী সালমা খালেদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ, খালেদ মোশাররফের মেয়ে মাহজাবিন খালেদ, এসপি মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, মেজর (অব.) নাসির উদ্দিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন