বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বার্ন ইউনিটে ভর্তি সেই তামান্না

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২২, ১২:৩০ এএম

যশোরের দুই হাত এক পাবিহীন জন্ম নেয়া তামান্না আক্তার নুরাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার তামান্নাকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
পরে সংবাদ সম্মেলনে ওই ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, যশোরের তামান্না আমাদের হাসপাতালে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তামান্নার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন ও চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তিনি বলেন, দুইজন বিদেশি চিকিৎসকসহ আমরা তামান্নাকে দেখেছি। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তবে, কতটুকু আমরা সফল হতে পারবো এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব না।
অধ্যাপক ডা. আর আর কৈরী বলেন, তামান্নার এক্সরেসহ অনেক পরীক্ষা করতে হবে। আগে দেখতে হবে তার ভালো পা ঠিক আছে কিনা। ওই পায়ে ভর দিয়ে যদি দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকে, তাহলে অন্য আর্টিফিসিয়াল পা লাগানো যাবে। আবার দেখতে হবে হাতের জয়েন ঠিক আছে কিনা! এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে এখনি কিছু বলা সম্ভব না।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তামান্না বলেন, আমি অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য তা হয়নি। ৮ মার্চ নারী দিবস। এ দিবস একটি দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কোন বিষয়েই নারীরা আজ পিছিয়ে নেই। নারীরা আজ বিমান চালাচ্ছে। আমাদের বাংলাদেশেও আজ নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে। আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, শিক্ষামন্ত্রী নারী। কোন ক্ষেত্রেই নারীরা আজ পিছিয়ে নেই। আজ অনেক নারীরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠছে। আমার জীবনও পাহাড়ের চূড়ায় উঠার মতো। অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। তাই এখন স্বপ্ন দেখছি সরকারি কোন কর্মকর্তা হবো। আমি খুবই আশাবাদী হই স্টিফেন হকিং কে দেখে। তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকতেও তিনি একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হয়েছেন।
তামান্না যশোর জেলার ঝিকরগাছার বাঁকড়া আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীনের মেয়ে। তামান্না ঝিকরগাছার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ৫ ও ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ৫ পেয়েছিলেন। তামান্নার বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তামান্না সবার বড়। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
বাবা রওশন আলী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমার মেয়ে তামন্নার হাত-পা লাগানোর বিষয়ে হাসপাতালে এসেছি। চিকিৎসকরা আমার মেয়ের প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তা দেখে আমি অভিভূত। আজ অনেক খটখোড় পুড়ে এখানে এসেছি। আমার মেয়ে জন্মের পর কোন আত্মীয়-স্বজন আমাদের দেখেনি। কারো কাছ থেকে সহযোগিতা পায়নি। ওর মায়ের জন্য আজ তামান্না এত দূর এসেছে। আজ তামান্নার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
তামান্নার মা খাদিজা বেগম বলেন, ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তামান্নার জন্ম। ওর জন্মের পর কষ্ট পেয়েছিলাম। ছয় বছর বয়সে ওর পায়ে কাঠি দিয়ে লেখানোর চেষ্টা করলাম। কলম দিলাম। কাজ হলো না। এরপর মুখে কলম দিলাম, তাতেও কাজ হলো না। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, ওকে পা দিয়েই লেখাতে হবে। এরপর বাঁকড়া আজমাইন এডাস স্কুলে ভর্তি করালাম। দুই মাসের মাথায় ও পা দিয়ে লিখতে শুরু করলো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Belal ১০ মার্চ, ২০২২, ৫:৪৫ পিএম says : 0
Oh my almighty Allah, Long Live The mother of humanity, our Honorable Prime Minister, Like our mother
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন