বাজারে ভোজ্যতেলের সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি লাভের আশায় অবৈধভাবে ৫১২ লিটার তেল মজুত করেন লায়েকুজ্জামান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক কর্মকর্তা গত ৬ দিনে ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে বাসায় এই তেল মজুত করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, রমজানে উচ্চমূল্যে বিক্রির জন্য তেল মজুত করেছিলেন তিনি। অবশেষে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানাধীন লালমাটিয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ওই বাসা থেকে ৫১২ লিটার তেল জব্দ করা হয়।
গতকাল নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, লালমাটিয়ার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা লায়েকুজ্জামান। এর পাশেই তার শ্বশুরের বাসাটিও তিনি দেখাশোনা করতেন। সেই বাসাতেই তিনি ৫১২ লিটার তেল মজুত করেন।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মনিরের নেতৃত্বে একটি টিম ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে সেই তেল জব্দসহ লায়েকুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লায়েকুজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি ব্যক্তিপর্যায়ে তেলগুলো কিনে মজুত করে রেখেছেন। তার কাছে এসব তেল কেনার রশিদ দেখতে চাইলে তিনি কৃষি মার্কেটের সূর্য এন্টারপ্রাইজের একটি রশিদ দেখান। পরে রশিদটি যাচাই করে দেখা গেছে সেখান থেকে ১৫৯ টাকা দরে মাত্র ৪০ লিটার তেল কিনেছেন। বাকিগুলো তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন। আর সূর্য এন্টারপ্রাইজের ওই রশিদের মাঝখানে নিজ হাতে বাকি তেলগুলোর পরিমাণ লিখে বিভিন্ন দাম বসিয়ে দিয়েছেন।
ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, গ্রেফতার লায়েকুজ্জামান মনে করেছেন যেহেতু বর্তমানে তেলের দাম বাড়তির দিকে, কয়েকদিন পর রমজানে আরও বাড়বে সে কারণে বাড়তি লাভের আশায় তিনি তেল কিনে মজুত করেছিলেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, লায়েকুজ্জামানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে। রিমান্ডে পেলে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে অতীতেও তিনি এমন কাজ করেছেন কি-না, কিংবা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, লায়েকুজ্জামান কোনো ব্যবসায়ী নন, ডিলারও নন। প্রাথমিকভাবে এটি তার ব্যক্তিগত অসৎ উদ্দেশ্য বলেই মনে হয়েছে। অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করতে তিনি তেল মজুত করেছেন। ৫১২ লিটার তেল মজুদ করা ফৌজদারি অপরাধ, এটি সঙ্কট সৃষ্টির অপপ্রয়াস।
৪০ লিটার তেল এক দোকান থেকে কিনেছেন, বাকিগুলো কোথা থেকে কীভাবে সরবরাহ করেছেন তা জিজ্ঞাসাবাদে স্পষ্ট হওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষি মার্কেটের ওই ব্যবসায়ী কেন একজনের কাছে একবারে ৪০ লিটার তেল বিক্রি করলেন এ বিষয়ে ব্যবসায়ীকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। এছাড়া ভোজ্যতেলের এই সঙ্কট সৃষ্টি করতে ব্যবসায়িক পর্যায়ে কেউ মজুতদারি করছে কিনা, প্রতিনিয়ত মনিটরিং করে যাচ্ছি। আমরা যখনই সংবাদ পাব অভিযান পরিচালনা করব।
গত ৬ মার্চ থেকে ৬ দিনে লায়েকুজ্জামান বিপুল পরিমাণ এই তেল মজুত করেছেন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ৪০ লিটারের বাইরে বাকি তেলগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন এ বিষয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। কারণ অন্য জায়গা থেকে কিনলে সেটার রশিদ থাকতো। জনসাধারণকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এ ধরনের মজুতদারি করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন