প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে বন্ধ আবাসিক গ্যাস সংযোগ লাইন। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাধে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। অবৈধ গ্যাসের সংযোগ দেয়ার সঙ্গে জড়িত থাকা তিতাসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা জড়িত থাকলেও তাদের কিছু করা হয়নি। রাজধানীর কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করা হয়েছে। যা লোক দেখানো অভিযান বলে জানা গেছে। এবার গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জোনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নজরদারিতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
অবৈধ লাইন কেটে আসার পর আবার যদি জুড়ে দেয়া হয় তাহলে ওই এলাকার ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিল করে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তাদের জবাবদিহি ছাড়া অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট জোনের কর্মকর্তাদের নজরে রাখতে হবে। যদি কেউ অবৈধ সংযোগগুলো আবার জুড়ে দেয় তা ওইদিনই অবহিত করতে হবে। গত ১৬ ফেব্রæয়ারি গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা তিতাসের চলমান অভিযানে বিচ্ছিন্ন করা হয় অবৈধ এসব সংযোগ। আবার করা হয় জরিমানা। কিন্তু এসব অবৈধ সংযোগ লাগানোর সঙ্গে জড়িত তিতাসের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৬০৭টি আবাসিক, ৩৬টি বাণিজ্যিক, ১৬টি শিল্প কারখানা এবং ৬টি ক্যাপটিভ শ্রেণির গ্রাহকের অবৈধ সংগোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। রাজধানীর ডেমরা ও মাতুয়াইলসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি করা হয় জরিমানা। দশ তলা ভবনের ৭২টি ফ্ল্যাটেই গ্যাসের অবৈধ সংযোগ, আর এর প্রতিটিই বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। অভিযোগে বলা হয়, অভিযান চালিয়ে গ্যাসের অবৈধ লাইন কেটে দেয়ার পর রাতারাতি আবার সেই লাইন জুড়ে দেয় গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মচারীরাই। সংশ্লিষ্ট এলাকার ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশে দিনের পর দিন এই কাজ চলে আসছে। একদিকে লাইন কেটে এলে আরেকদিন থেকে জুড়ে দেয়ায় অবৈধ ব্যবহারকারীরা আরো উৎসাহিত হতো। কিন্তু এবার কঠোর হচ্ছে জ্বালানি বিভাগ। বলা হচ্ছে, অবৈধ লাইন কাটার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জোনের কর্মচারী-কর্মকর্তারাও থাকবেন নজরদারিতে। জ্বালানি বিভাগের এক সভায় বিষয়টি আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সভায় জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট জোনের কর্মকর্তাদের নজরে রাখতে হবে। যদি কেউ অবৈধ সংযোগগুলো আবার জুড়ে দেয় তা ওইদিনই অবহিত করতে হবে।
জ্বালানি বিভাগ থেকে সভায় বলা হয়, অবৈধ লাইন কেটে আসার পর আবার যদি জুড়ে দেয়া হয় তাহলে ওই এলাকার ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিল করে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। পেট্রোবাংলা থেকে বলছে, বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির পর বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে যদি আবার চুরি হয় তাহলে সেই বিল আর রাজস্ব খাতে জমা হয় না। এক্ষেত্রে পেট্রোবাংলাকে আরো লোকসান গুনতে হয়। এ প্রেক্ষিতে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ওপর জোর দেয়া হয়। কিন্তু অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এগুলো একটা একটা করে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে দেশের গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে এখন ২ হাজার ২৮৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তোলা হচ্ছে। এর বাইরে থেকে আমদানি করে আনা হয় ৭৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা হচ্ছে। গত মাসে গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা তিতাসের চলমান অভিযানে বিচ্ছিন্ন করা হয় অবৈধ এসব সংযোগ। করা হয় জরিমানাও। এ সময় একটি বৈধ সংযোগ থেকে ১৪টি লাইন নেয়ায় বাড়ির মালিককে নগদ ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। মালিককে পাইনি। এ বিষয়ে আমরা নিয়মিত মামলা করব।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লা ইনকিলাবে বলেন, গত জানুয়ারি মাসে মোট অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ৩১টি, মোট স্পট ছিল ১০৪টি। ১৮ কিলোমিটার অবৈধ বিতরণ লাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। বিচ্ছিন্নকৃত বার্নারের সংখ্যা ১৮ হাজার ২১১টি। বিচ্ছিন্ন করা বাণিজ্যিক সংযোগ ২০টি, শিল্প সংযোগ ২১টি এবং ক্যাপটিভ সংযোগ ৫টি। জানুয়ারি মাসে গ্যাস বিক্রি ১ হাজার ৫২৫ কোটি টাকার বিপরীতে ১ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন