ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলাধীন ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের পীর ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের আমীর শাহ সূফী আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমাদ মামুন আল হোসাইনী আখেরী মোনাজাতের বয়ানে বলেন, শরীয়তের হুকুম আহক্বাম মেনে চলতে হবে। শিরক কুফর থেকে বাচঁতে হবে। হালাল খাদ্য ভক্ষণ করতে হবে এবং হারাম বর্জন করতে হবে। তিনি বলেন, নারীদের বেপর্দা চলাচলা ফেরার কারণে দেশে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং ও অনৈসলামিক কার্যকলাপ মারাত্বক বৃদ্ধি পেয়েছে। আল্লাহপাক স্বয়ং নারী পুরুষের পর্দা ফরজ করে দিয়েছেন। অবশ্যই সবাইকে পর্দার হুকুর মানতে হবে। আদর্শ সমাজ গঠনের পর্দার কোন বিকল্প নেই। সন্তানদের মা-বাবার খেদমত ও সেবাযতœ করতে হবে। নিজে নামাজ পড়তে হবে এবং পরিবার পরিজনের মাঝে নামাজ কায়েম করতে হবে। নবীজিকে নিজের জানের চেয়েও বেশি মহব্বত না করলে প্রকৃত মুমিন হওয়া সম্ভব নয়। নবীজীকে মা-বাবা,ভাই-বোন,স্ত্রী-পুত্র, ধন-সম্পদ এমনকি নিজের জানের চেয়েও বেশি মহব্বত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তরিকা ‘তারিকুন’ শব্দ উৎপত্তি। এর অর্থ পথ বা রাস্তা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে পাওয়ার একটি সহজ ও সঠিক পথ হচ্ছে তরিকত। তরিকা আসছে নবীজির কদম মোবারক থেকে । ধর্ম ও নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত বর্তমান সমাজের দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি সমাজ,রাষ্ট্র ও সারা বিশ্বে ইলমে তাসাউফ চর্চার বিকল্প নেই। ইলমে তাসাউফ চার্চার মাধ্যমে মানুষ আত্বশুদ্ধি ও আল্লাহর প্রেম ভালবাসা অর্জন করতে পারে। যার অন্তরে ্আল্লাহর প্রেম জাগ্রত থাকবে সে কখনও কোন সৃষ্টির কোন ক্ষতি পারে না। আল্লাহকে ভয় করার মতন ভয় করতে হবে। সত্যিকারের আল্লাহর খাটিঁ বান্দা হতে হলে শরীয়তের পাশাপাশি ইলমে তাসাউফের চার্চ শিক্ষা নিতে হবে। আর ইলমে তাসাউফের শিক্ষা অর্জনের জন্য কামিল পীরের সাহচর্চ লাভ করতে হবে। কামিল পীরের সঙ্গ লাভ ছা[া ইলমে তাসাউফের জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহর জমিনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য যুগ যুগ ধরে আল্লাহর অলি আউলিয়ারা মাঠে ময়দানে কঠোর সাধনা ও পরিশ্রম করে গেছেন। তাই বেশি বেশি করে নবীজির উপর দুরুদ সালাম পড়তে হবে। আওলিয়ায়ে ক্বেরাম যে পথ অবলম্বন করে আল্লাহ ও তার রাসূলে রেজামন্দি লাভ করেছেন আমাদেরকেও সেই পথ অবলম্বন করতে হবে।
ঐতিহ্যবাহী ফান্দাউক দরবার শরীফের দুই দিন ব্যাপী কেন্দ্রীয় বার্ষিক ইছালে ছাওয়াব মাহফিলের প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিন তরিকার তালিম ও তারবিয়াত প্রদান পূর্বক দরবারের বর্তমান পীর ও বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের আমীর আলহাজ্ব মাওলানা মুফতি সৈয়দ সালেহ আহমাদ মামুন আল-হোসাইনী আগত লাখো লাখো মুরিদ ও ভক্তবৃন্দের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন। ১১ মার্চ বাদ জুমা পবিত্র ফাতেহা শরীফ পাঠ করার মাধ্যমে মাহফিলের কার্যক্রম শুরু হয়।
উক্ত মাহফিলে উভয়দিন আলোচনা করেন, দেশ বরণ্যেও হক্কানী উলামায়ে ক্বেরাম ও পীর মাশায়েখ। মাহফিলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, বাংলাদেশ আঞ্জুমানে খাদিমুল ইসলামের নায়েবে আমীর পীরজাদা আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতি শাহ সূফী সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমাদ আল হোসাইনী এবং পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, বাংলাদেশ আঞ্জুমানে ইসলামী ছাত্রমহলে কেন্দ্রীয় সভাপতি পীরজাদা আলহাজ্ব মাওঃ সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক আল হোসাইনী ও ছাত্রমহলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি পীরজাদা আলহাজ্ব সৈয়দ বাকের মস্তোফা আল-হোসাইনী।
ফান্দাউক দরবার শরীফ কর্তৃক আয়োজিত দুইদিন ব্যাপী ইছালে ছাওয়াব মাহফিল ঘিরে দেশের পূর্বাঞ্চল বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও বৃহত্তর কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা নাসিরনগর উপজেলা সহ ফান্দাউকের সভায় সর্বত্র উৎসব মূখর হয়ে উঠে। দূর-দূরান্ত থেকে লাখো মুরিদান, আশেকান, ও ভক্তবৃন্দ মাহফিলের অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে পূণ্যভূমি ফান্দাউক অলি-আউলিয়া প্রেমিক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেও ধর্মীয় এই মিলনমেলায় এক অভূতপূর্ব ভাবগাম্ভি^র্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মাহফিলের শুরুতে শুক্রবার বাদ জুম্মা ফাতেহা শরীফ, খতমে কোরআন, খতমে বোখারী, মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। আখেরী মোনাজাতে দরবার শরীফের সার্বিক উন্নতি, সাফল্য, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি, দেশের কল্যাণ, মঙ্গল এবং মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, শান্তি কামনা করে পীর সাহেব সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট মোনাজাত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন