সাদিক মামুন ও জসীম মোল্লা, কুমিল্লা থেকে : নদীবেষ্টিত উপজেলা কুমিল্লার তিতাস আবারও খুনের রাজনীতি শুরু হয়েছে। মুখোশধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হয়েছেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলা যুবলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসাইন। একই ঘটনায় তার এক সহযোগী নিহত হয়েছেন। আর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও দু’জন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিতাসের জিয়ারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসাইনের খুনের ঘটনায় জিয়ারকান্দিসহ কয়েকটি এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জিয়ারকান্দিতে চেয়ারম্যানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস। ঘটনাস্থলসহ জিয়ারকান্দিতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসাইন এবারের ইউপি নির্বাচনে জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গ্রামের লোকজনের কাছে খুব অল্প সময়েই মনির জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আর এ জনপ্রিয়তাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে চেয়ারম্যান মনির হোসাইন তার ১১ জন সহযোগী নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে একটি মামলার কাজে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওয়ানা হন। সকাল আটটার দিকে মাইক্রোবাসটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরীপুর-হোমনা সড়কের গৌরীপুর মোড় থেকে কুমিল্লামুখী হয়। এসময় মুখোশধারী একদল সন্ত্রাসী মাইক্রোবাসটির গতি রোধ করে দাঁড়ায়। ঘন কুয়াশায় চালক কিছু বুঝে ওঠতে পারেনি। আর তখনই পিস্তলের মুখে মাইক্রোবাসের সামনে বসা চেয়ারম্যান মনিরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মুখোশধারীরা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে তাকে গুলি করে। এসময় মনিরের সহযোগীরা গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে এলে তাদেরকে লক্ষ্য করে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে মহিউদ্দিন, সুমন আহম্মেদ ও ইসমাইল হোসেন নামে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়। সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। চেয়ারম্যানের অন্য সহযোগীরা গুলিবিদ্ধদের তাৎক্ষণিক দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় নেয়ার পথে চেয়ারম্যান মনির হোসাইন ও তার সহযোগী মহিউদ্দিন মারা যান। আহত দুইজনকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে চেয়ারম্যান মনির খুন হওয়ার খবর এলাকায় জানাজানি হলে গোটা জিয়ারকান্দিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকায় দেখা দেয় উত্তেজনা। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থল ও জিয়ারকান্দি গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। দুপুরে চেয়ারম্যান মনিরসহ দুইজনের লাশ ময়নাতদন্ত করা হয় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রাতে লাশ জিয়ারকান্দিকে পৌঁছে। এসময় চেয়ারম্যানের পরিবার, স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। নিহত চেয়ারম্যান মনিরের চৌদ্দ ও এগার বছর বয়সী দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে বিচার দাবি করেন।
দাউদকান্দি থানার ওসি আবদুস ছালাম মিয়া জানান, কারা এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদেরকে অবশ্যই খুঁজে বের করা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য হোমনা, তিতাস ও গৌরীপুর ফাঁড়ি থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন