স্টালিন সরকার : মার্টিন লুথার কিং আর নীল আর্মস্ট্রংয়ের দেশে যেন ইতিহাসের ছড়াছড়ি। তরুণ বয়সে একজন সামান্য মানবাধিকারকর্মী মার্টিন লুথাং কিং বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নেন। নীল আর্মস্ট্রং প্রথম চাঁদে অবতরণ করে সৃষ্টি করেন আরেক ইতিহাস। কেনিয়ায় মুসলিম ঘরে জন্ম নেয়া বারাক হোসাইন ওবামা কালো হয়েও ৮ বছর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি বিশ্ববাসীর সামনে বিস্ময় সৃষ্টি করেন এবং হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করে নতুন ইতিহাস গড়েন। তেমনি নারী হয়ে হোয়াইট হাউজ দখলের দৌড়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকার আড়াইশ’ বছরের প্রথা ভেঙ্গে ইতিহাস সৃষ্টির পথে রয়েছেন হিলারি। এর আগে আমেরিকায় ৪৪ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলেও কোনো নারী নির্বাচিত হতে পারেননি। রয়টার্স জানায়, সর্বশেষ জরীপে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৯১ ভাগ। আর এ দৌড়ে যোজন যোজন মাইল দূরে রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কৌতূহল-ইতিহাস দু’টোই। দুনিয়া জুড়ে কৌতূহল কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করছেন। আর ইতিহাস! অবশ্যই। হিলারি ক্লিনটন বিজয়ী হলে তিনি হবেন বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট। আর ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তিনি হবেন প্রথম কোনো ক্যাসিনো ব্যবসায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গতকাল (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় (আমেরিকায় সকাল ৬ টায়) ভোট শুরু হয়ে গেছে। চলবে আজ সকাল (আমেরিকায় রাত ৮টা) পর্যন্ত। তবে আইওয়া এবং নর্থ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যে ভোট নেয়া হবে রাত ৯টা পর্যন্ত। ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ভোটার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন তাদের পছন্দের প্রেসিডেন্ট। কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোট গণনা শুরু হয়েছে। নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডিক্সভিল নচ, হার্ট’চ লোকেশন ও মিলসফি-ে নামের যে ৩টি কেন্দ্রের ভোট গণনা হয়েছে তার দু’টিতে হিলারিও একটিতে ট্রাম্প বিজয়ী হয়েছেন। যে ৪ কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন সেই ভোটারদের মধ্যে জরীপ করে দেখা গেছে হিলারি আছেন এগিয়ে। উল্লেখ শুধু জনগণের ভোট নয়; মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্টোরাল ভোটে প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসি মিলে মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮টি। নির্বাচনে প্রার্থীকে জিততে হলে এগুলোর অর্ধেকের চেয়ে একটি বেশি তথা ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হয়।
’৯০ দশকের প্রথম দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্ব একমাত্র মুরব্বি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জ্বরে গোটা বিশ্ব আক্রান্ত। ওই ভোট ইস্যুতে বিশ্বের সব কিছুই দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। কেউ ডেমোক্রেট হিলারির পক্ষে আবার কেউ রিপাবলিকান ট্রাম্পের সমর্থক। ‘ভোটব্যাংক’ শব্দটি এতোদিন এশিয়ার তথা বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শোনা যেত। বাংলাদেশে ‘হিন্দু ভোটব্যাংক’ এবং ভারতে ‘মুসলমান ভোটব্যাংক’ শব্দগুলো বহুল ব্যবহৃত। জাতি ও ধর্মগত ভোটব্যাংক শব্দগুলো এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে; প্রভাব ফেলছে। মুসলমান ভোটাররা হিলারির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আর হিন্দু ভোটারদের বড় অংশ গেছেন ট্রাম্পের পক্ষে।
বিশ্বশাসনের কৌশলের খেলায় প্রতিপক্ষ পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নকে খ--বিখ- করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া, সন্ত্রাস বন্ধের নামে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের দেশে দেশে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়া, শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ লুটে নেয়া সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনিদের ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচন’ নিয়ে সারা দুনিয়াতেই কৌতূহল। নানা গসিপ-কেচ্ছাকাহিনী। ১/১১-টুইন টাওয়ারে হামলার পর দুনিয়াজুড়ে হয়েছে মার্কিনীদের রাজত্ব কায়েম। ইসলাম বিদ্বেষে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তছনছ এবং বিশ্বজুড়ে রাজত্ব কায়েম করলেও নিজ দেশে রেখেছেন গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চা। গ্লাসনস্ত-প্রেরেস্ত্রোইকা নীতি গ্রহণে সোভিয়েত ইউনিয়ন খ- বিখ- হয়ে খর্বাকৃতির ভøাদিমির পুতিনের ‘রাশিয়া’ হওয়ার পর থেকে বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রই হলো ‘শেষ কথা’। মোড়ল তারাই। চীন অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে ব্যয়ে অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় এখন ‘ক্ষমতাশালীর’ আমেরিকায় ধরেছে ভাটার টান। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘সুপার পাওয়ার’। সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হচ্ছে। সবকিছু ছাপিয়ে এই নির্বাচন পেয়েছে কার্যত বৈশ্বিক রূপ। দুনিয়ার সর্বত্রই চলছে এ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজ নিজ ‘দেশের লাভক্ষতি’র হিসেব করছেন বাংলাদেশসহ দুনিয়ার প্রায় সব দেশ। তাই পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ সব প্রান্তের মানুষের দৃষ্টি এই নির্বাচনের দিকে।
নির্ধারিত দিন ভোট গ্রহণ শুরুর আগে আগাম ভোট দিয়েছে প্রায় ৪ কোটি ভোটার। আবার ভোট শুরুর পর সিএনএনের জরীপে বলা হয় হিলারি ৪৬ শতাংশ এবং ট্রাম্প ৪২ শতাংশ ভোট পাবেন। অন্যান্য সংস্থার জরীপগুলোতে বলা হয় ভোটের দিনই হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়িয়েছেন শতকরা ৯১ ভাগ। গত সপ্তাহে তার জয়ের সম্ভাবনা ছিল শতকরা ৭৮ ভাগ। আর ওই সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে এই সম্ভাবনা ছিল শতকরা ২৩ ভাগ। ট্রাম্পেটর সেই সম্ভাবনা এখন কমে দাঁড়িয়েছেন শতকরা মাত্র ৯ ভাগ। সিএনএনের সর্বশেষ পলিটিক্যাল পূর্বাভাসে বলা হয়, গত ২০ অক্টোবরে হিলারির বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল শতকরা ৯৫ ভাগ। অক্টোবর সারপ্রাইজ-এ নানা বিতর্কে ২৬ অক্টোবর তা নীচে নেমে দাঁড়ায় শতকরা ৯০ ভাগে। মার্কিন কংগ্রেসে এফবিআইয়ের চিঠি পাঠানোর পর থেকে ৩১ অক্টোবর তা ক্রমাগত কমতেই থাকে। নামতে নামতে এক পর্যায়ে তা কমে দাঁড়ায় শতকরা ৭৮ ভাগে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুটা এগিয়ে যান। প্রচার হয় দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। গত রোববার এফবিআই প্রধান জেমস কমি ঘোষণা দেন নতুন ওই ইমেইলে হিলারি ‘নির্দোষ’। অতঃপর হিলারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাবনার পারদ উপরে উঠতে থাকে। বর্তমানে সে সুযোগ শতকরা ৯১ ভাগে। উল্লেখ্য, সিএনএন-এর পলিটিক্যাল প্রেডিকশন মার্কেট একটি অনলাইন প্রশাসনিক বিষয়ক কোম্পানি পিভিট। এরা অনলাইন মার্কেট, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নির্বাচন নিয়ে পূর্বাভাস অনুমোদন করে। তবে প্রকৃত ভোটের সঙ্গে এই ভোটের হুবহু মিল নাও হতে পারে। দেখা যাচ্ছে হোয়াইট হাউজ প্রবেশের ভোটযুদ্ধের দৌড়ে হিলারি সব সূচকেই এগিয়ে। তারপরও রয়েছে ইলেক্টোরাল ভোটের ফ্যাকরা। প্রশ্ন হচ্ছে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করে কে হতে চলেছেন বিশ্ব মুরব্বি? হিলারি না ট্রাম্প। হিলারি জনপ্রিয় না হলেও ট্রাম্প ধিকৃত। ফলে মন্দের ভাল হিলারিই। নির্বাচনে যেই বিজয়ী হোক আমেরিকায় তৈরি হবে এক নতুন ইতিহাস। হিলারি নির্বাচিত হলে তিনি হবেন প্রথম নির্বাচিত মহিলা প্রেসিডেন্ট। আবার তিনি হবেন কোনো সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী জনগণের ভোটে যিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। কারণ তার স্বামী বিল ক্লিনটন সাবেক প্রেসিডেন্ট। আবার ইতিহাসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তিনি হবেন হোয়াইট হাউসের প্রথম বাসিন্দা, যার রাজনীতিতে প্রবেশের বয়স মাত্র ১৫ মাস।
মার্কিন দেশে গণতন্ত্রের মহত্তম উৎসব ভোট গ্রহণ চলছে। কয়েক ঘন্টা পর বদল হবে ইতিহাসের গতিধারা। কয়েক মাস ধরে চলছে নির্বাচনী প্রচারণার রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা। মুখোমুখি লড়াইয়ে দুই বিপরীত ধারার রাজনীতিবিদ। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমকালীন নির্বাচনে অতীতে কখনো দেখা যায়নি। একদিকে ক্যারিয়ার রাজনীতিবিদ হিলারি ক্লিনটন। সাবেক ফার্স্টলেডি, সাবেক সিনেটর এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প। হঠাৎ রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে তার আবির্ভাব। মূলত হাউজিং ব্যবসায়ী। জুয়া-ক্যাসিনো যার যাপিত জীবন। রিয়েলিটি শো তারকা। রিপাবলিকান দলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী দৌড়ে ইসলাম বিদ্বেষী এই ট্রাম্প সাবেক প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশের ছোট ছেলে ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশের ছোট ভাই সিনেটর জেব বুশকে পরাজিত করে দলীয় নমিনেশন নিশ্চিত করেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ জন সদস্য এবং উচ্চকক্ষ সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য নির্বাচনের ভোট হচ্ছে। ভোটাভুটি হচ্ছে স্থানীয় ও রাজ্যভিত্তিক কিছু কর্মকর্তা নির্বাচনেও। ভোটের ফলাফল আগে ঘোষণা করা হলেও ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি বিজয়ী প্রার্থী রাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করবেন।
নির্বাচনের ঠিক আগে কয়েকটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান তাদের সর্বশেষ জরিপ প্রকাশ করেছে। এনবিসি ও ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের চূড়ান্ত জরিপে জাতীয়ভাবে ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ৪ এগিয়ে আছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসির ট্র্যাকিং পোলে হিলারি এগিয়ে আছেন ৫ পয়েন্টে। মূলত সরাসরি জনগণের ভোটে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। দেশের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে জনসংখ্যার অনুপাতে ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। সবচেয়ে বড় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৫টি ইলেক্টোরাল ভোট। কম জনসংখ্যার ওয়াশিংটন ডিসি ও ওয়াওমিং অঙ্গরাজ্যের প্রত্যেকটির ভোট ৩টি করে। মোট ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসি মিলে মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮টি। নির্বাচনে জিততে হলে একজন প্রার্থীকে এগুলোর অর্ধেকের চেয়ে একটি বেশি তথা ২৭০টি ভোট জিততে হবে। প্রত্যেক রাজ্যের নির্ধারিত ইলেকটররা ভোট দিয়ে থাকেন। রাজ্য কর্মকর্তা বা জ্যেষ্ঠ দলীয় নেতাদের ইলেকটর বানানো হয়। মেইন ও নেব্রাস্কা ব্যতীত বাকি সকল রাজ্যে ‘উইনার টেকস অল’ পদ্ধতি প্রচলিত। উইনার টেকস অল হলো যে প্রার্থী রাজ্যের বেশির ভাগ ভোট পাবেন, তিনিই পাবেন রাজ্যটির সব ইলেক্টোরাল ভোট।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১২টি সুইং স্টেটের বাইরে অন্যান্য রাজ্যগুলোর ফলাফল প্রায় নির্ধারিত মনে করা হয়। অন্যান্য রাজ্যগুলো ডেমোক্রেটিক ঘেঁষা রাজ্য ও রিপাবলিকান সমর্থিত রাজ্য হিসেবে পরিচিত। এ জন্য ওই সব রাজ্যে প্রার্থীরা তেমন প্রচারণায় জোর দেন না। ডেমোক্রেট ঘেঁষা রাজ্যগুলো থেকে হিলারি পাবেন ২২৬টি ইলেক্টোরাল ভোট। অন্যদিকে রিপাবলিকান ঘেঁষা রাজ্যগুলো থেকে ট্রাম্পের নিশ্চিত ভোট ১৫৪টি। অর্থাৎ নির্বাচনে জিততে হলে হিলারির তুলনায় ট্রাম্পকে বেশি সুইং স্টেটে জিততে হবে। কলোরাডো, পেনসিলভানিয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার ও ভার্জিনিয়ায় জেতার সম্ভাবনা বেশি হিলারির। ফলাফলের পূর্বাভাস অনুযায়ী এটা হলে হিলারি পাবেন ইলেক্টোরাল ২৭২টি ভোট। অন্যদিকে ইলেক্টোরাল ভোটে ট্রাম্পের সমীকরণ কঠিন। তাকে শুধু রিপাবলিকান ঘেঁষা সব রাজ্য জিতলেই চলবে না; বরং ১২টি সুইং স্টেটের মধ্যে ফ্লোরিডা, ওহাইয়ো ও নর্থ ক্যারোলিনাসহ কমপক্ষে ৮টি রাজ্যে বিজয়ী হতে হবে। শুধু তাই নয় হিলারির মোটামুটি নিশ্চিত করায়ত্তে থাকা ৪টি রাজ্যের একটিতে জয় পেতেই হবে ট্রাম্পকে। যা পা দিয়ে পাহাড় ডিঙ্গানোর মতোই কঠিন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোটের নিয়ম থাকায় ইতিমধ্যে ৩৮টি অঙ্গরাজ্যে ৪ কোটিরও বেশি ভোটার আগাম ভোট দিয়ে দিয়েছেন। এসব ভোটার উপস্থিতির ইঙ্গিত হলো হিলারিই এগিয়ে। ২০০৮ ও ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতির অনুপাতে এবার কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার উপস্থিতি কম; বেড়ে গেছে লাতিনো ভোটারদের উপস্থিতি। এসব ভোটার ঐতিহ্যগতভাবেই ডেমোক্রেট ঘেঁষা। হিলারি ক্লিনটন ব্যক্তিগতভাবে এ গোষ্ঠীর মাঝে জনপ্রিয়। অপরদিকে রিপাবলিকান সমর্থক শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি তেমন বাড়েনি। ২০০৮ ও ২০১২ সালের তুলনায় এবার ডেমোক্রেট সমর্থকরা দ্বিগুণেরও বেশি ভোট দিয়েছে। এটা হিলারির জন্য সুখবর বৈকি। মিডিয়াগুলোর জরীপে দেখা যায় রিপাবলিকানদের চেয়ে কমপক্ষে ১০ লাখ বেশি ডেমোক্রেট এবার আগাম ভোট দিয়েছেন। এপি’র খবর হলো কিছু অঙ্গরাজ্যে ভোটারদের মধ্যে আগাম ভোট দেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। টেক্সাস, জর্জিয়া, ইন্ডিয়ানা ও অরিগনের মতো রাজ্যগুলোতে এবার রেকর্ড পরিমাণ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছে। ইলেক্টোরাল ভোটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য জর্জিয়া, ম্যারিল্যান্ড, মিনেসোটা ও টেনিসিতে আগাম ভোটের পরিমাণ ২০১২ সালের চেয়ে অনেক বেশি। আর ফ্লোরিডায় আগাম ভোটাভুটিতে কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে হিলারি। অতএব হোয়াইট হাউজ দখলের ভোটযুদ্ধে ইতিহাস গড়ার পথেই রয়েছেন হিলারি ক্লিনটন।
সংশোধনী ঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গতকাল ভুলবশত ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৫৮ এবং প্রেসিডেন্ট হতে ২৭৯ ভোট প্রয়োজন ছাপা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হবে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৩৮ এবং বিজয়ী হতে প্রয়োজন ২৭০টি ভোগ। অনিচ্ছাকৃত এ ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন