শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আবাসন শিল্পে অশনিসঙ্কেত

নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিতে থমকে গেছে উন্নয়ন রডের দাম টনপ্রতি ১৪ হাজার টাকা বেড়েছে বস্তাপ্রতি সিমেন্ট ৫০ টাকা বেড়েছে, ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা, ইটের দামও বেশি

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

করোনার ধকল কাটতে না কাটতেই ইউক্রেট-রাশিয়া যুদ্ধ। বেড়ে গেছে তেলসহ সব ধরণের নির্মাণ সামগ্রীর দাম। হঠাৎ করে রড, টিমেন্ট বালুর দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ খরচ বেড়ে গেছে। ফলে অনেক নির্মান প্রকল্পের কাজবন্ধ হয়ে গেছে। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনিশ্চত হয়ে পড়েছে নির্মাণ শিল্পে জড়িত লাখ লাখ শ্রমিকের পরিবার। জানতে চাইলে অ্যাসুরেন্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের সিইও ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফুর রহমান বলেন, গত এক মাসের ব্যবধানে রডের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা। কয়েকদিন আগে যেখানে ৭৪ থেকে ৭৫ হাজার টাকা প্রতি টন রড কিনেছি, বর্তমানে ৮৮ থেকে ৮৯ হাজার টাকা কিনতে হচ্ছে। অপরদিকে সিমেন্টের দামও সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ৫০টাকা বেড়েছে। রড, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর বাজার অস্থির থাকায় নির্মাণকাজ চালিয়ে যেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় গত ২ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, শিল্পে কাঁচামালের ঘাটতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভ‚-রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য। মহামারী করোনার ধাক্কা কাটলেও বিশ্ব বাণিজ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতি অর্থনীতির গতি টেনে ধরেছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। প্রায় সব ধরনের ব্যবসায় এক প্রকার ধস নেমেছে। আর্থিক সঙ্কটের কারণে ইতিমধ্যে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। করোনার প্রভাব পড়েছে দেশের নির্মাণ খাতেও। অনেক ব্যবসায়ীই ব্যাংক লোন আর জমানো অর্থ বিনিয়োগ করে পড়েছেন সঙ্কটে। আবার করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে আসায় সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ায় মানুষ দীর্ঘদিন পর ব্যক্তিগতভাবে বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করছিলেন। পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল আবাসন ব্যবসাও। কিন্তু হঠাৎ করে গত কিছুদিন থেকে দেশে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়তে থাকায় ফের বাড়ছে সঙ্কট। নির্মাণকাজের অন্যতম প্রধান উপকরণ রড, সিমেন্ট, শিট, অ্যাঙ্গেল, ইট, বালু আর পাথরের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট নিয়ে বিপাকে আবাসন ব্যবসায়ীরা। আর যারা দীর্ঘদিন পর ব্যক্তিগতভাবে ঘর-বাড়ির নির্মাণকাজে হাত দিয়েছেন তাদের মাথায়ও হাত।

এদিকে নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব পড়েছে সরকারের বড় বড় উন্নয়ন কাজে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে। কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারনে সামগ্রিকভাবে দেশের নির্মাণ শিল্পে ভাটা দেখা দিয়েছে। নির্মাণখাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৫০ লাখ সহ অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার প্রায় ২ কোটি মানুষ। এ কাতে স্থবিরতা নামায় সামনে দেশে এক অর্থনৈতিক মহামারীর সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি নির্মাণখাতের সঙ্গে জড়িত দেশের শিল্পায়ন। নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমেও ভাটা পড়েছে। ইতিমধ্যে নির্মাণকাজের অন্যতম প্রধান উপকরণ রডের দাম দফায় দফায় বেড়ে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এক মাসের ব্যবধানে প্রতি টন রডের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা। প্রতি টন রড এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কোম্পানীভেদে ৮৫ হাজার থেকে থেকে ৮৯ হাজার টাকায়। অথচ এক মাস আগেও প্রতি টন রড ৭৪ থেকে ৭৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। কাঁচামাল সঙ্কট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রডের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও ক্রেতারা বলছেন, উৎপাদনকারীদের সিন্ডিকেটের কারণে লাগামহীন রডের বাজার। এছাড়াও দাম বেড়েছে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সিমেন্ট, অ্যাঙ্গেল, শিট, মোটা প্লেট, পাতলা প্লেট, ইট, বালু ও পাথরের।

অথচ চলতি বছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সিমেন্ট ও স্টিল শিল্পে আগাম কর প্রত্যাহার করেছেন। যে কারনে নির্মাণ সামগ্রী সিমেন্ট, স্টিল, রডের দাম কমবে বলে আশাবাদী ছিল সবাই। কিন্তু করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের নির্মাণখাতসহ সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অস্থির আন্তর্জাতিক বাজার। জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন শিল্পপণ্যের কাঁচামালের দাম। জাহাজের জ্বালানি (মেরিন ফুয়েল) টনপ্রতি ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এতে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে বলে জানিয়েছে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর সামসুল আলামিন ইনকিলাবকে বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম অতিমাত্রায় বেড়েছে। এর প্রভাব সরাসরি আবাসন খাতে পড়েছে। রড, সিমেন্ট, ইটসহ প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু যে আবাসন খাতে এই সমস্যা হচ্ছে তা নয়; সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেকেই বাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। দীর্ঘদিন পর ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। আর এ সময়ে দাম বাড়ার প্রভাবে আবাসন খাত বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়েছে। আবাসন খাতে সাধারণত নির্মাণের আগেই বিক্রি করা হয়। তাই হঠাৎ করে সবকিছুর দাম বাড়ায় সামনে ফ্ল্যাটের দামও বাড়াতে বাধ্য হবো। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষই ক্ষতির মুখে পড়বে। বিশেষ করে নির্মাণ ও অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার প্রায় ২ কোটি মানুষ ক্ষতির মুখে।

সূত্র মতে, লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে রডের দাম। এক মাসের ব্যবধানে প্রতি টন রডের (৬০ গ্রেডের ওপরে) দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এক মাস আগেও প্রতি টন রড ৭৪ থেকে ৭৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৯ হাজার টাকা। কাঁচামাল সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রডের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ও ক্রেতারা বলছেন, উৎপাদনকারীদের সিন্ডিকেটের কারণে লাগামহীন রডের বাজার।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, দেশে স্বয়ংক্রিয় ইস্পাত কারখানা আছে ৩০টি। সনাতন পদ্ধতির কারখানা আছে ১০০টির মতো। বছরে দেশে রডের চাহিদা আছে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টন। এই হিসাবে মাসে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টন রড দরকার হয়। রড তৈরির কাঁচামাল হলো পুরনো লোহার টুকরো। এই কাঁচামাল সরাসরি আমদানি করে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করেন উৎপাদকরা। বাকি প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ আসে জাহাজভাঙ্গা শিল্প এবং লোকাল ভাঙ্গারি বর্জ্য থেকে।

উৎপাদনকারীদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে দেশের বাজারে রডের টন সর্বোচ্চ ৮১ হাজার টাকায় উঠেছিল, যা তখন ইতিহাসের রেকর্ড দাম ছিল। তার আগে ওয়ান-ইলেভেনের (২০০৭-০৮) সরকারের সময় প্রতি টন রডের দাম সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। চলতি বছরের শুরুতে রডের দাম কিছুটা কমে টনপ্রতি ৭৬ হাজার টাকায় নেমে আসে। তবে জানুয়ারির শেষ দিকে এসে আবারও বাড়তে থাকে। মার্চে এসে গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮৯ হাজার টাকায় উঠলো রডের টন।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও শাহরিয়ার স্টিল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় রডের দামও বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে কাঁচামাল কেনা পড়েছে টনপ্রতি ৭৩ হাজার টাকা। এগুলো প্রসেসিং করে রড তৈরি করতে আরও ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। এতে টনপ্রতি রডে বর্তমানে উৎপাদন খরচ পড়ছে ৮৮ হাজার টাকা। তিনি বলেন, একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারেও কাঁচামালের দাম বেড়েছে। একসময় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে স্ক্র্যাপ কেনা হতো প্রতি টন ৩০০ ডলারে। এখন কেনা হচ্ছে ৬৪০ ডলারে। এর আগে বেশ কিছু দিন ৬০০ ডলার ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অনেক দেশ; যারা আগে দুই দেশ থেকে রড তৈরির স্ক্র্যাপ কিনতো, তারা এখন মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া থেকে কিনছে। আমরা আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে স্ক্র্যাপ কিনেছি। এখন আরও বেশি দেশ এসব দেশ থেকে কেনার কারণে প্রতি টন স্ক্র্যাপে ৪০-৫০ ডলার করে দাম বেড়ে গেছে।

এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব কোম্পানির সিমেন্টে বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া বাড়ার কারণে সিমেন্টের উৎপাদন খরচ প্রতি বস্তায় ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে। এ অবস্থায় টিকে থাকার স্বার্থে মূল্য সমন্বয় করা হচ্ছে। সিমেন্টের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া দ্বিগুণ বাড়ায় খুব শিগগির দেশের বাজারে সিমেন্টের দাম ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সিমেন্ট উৎপাদনে প্রধান পাঁচটি কাঁচামাল ক্লিংকার, লাইমস্টোন, সø্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম ব্যবহৃত হয়, যার সবই আমদানি নির্ভর। এর মধ্যে ৬২ থেকে ৯০ শতাংশই হলো ক্লিংকার। কাঁচামাল ক্লিংকার প্রতি টন ৬০ থেকে বেড়ে ৭৫-৭৯ ডলার হয়েছে। শুধু ক্লিংকারেই ১৫ ডলারের বেশি দাম বেড়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য কাঁচামাল লাইমস্টোন, সø্যাগ, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম গড়ে ১০-১২ ডলার বেড়ে গেছে। কাঁচামাল তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কয়লা। কয়লার দাম বাড়ায় ও করোনা-পরবর্তী বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় কাঁচামালের সঙ্কট তৈরি হওয়ায় সিমেন্টের দাম বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সিমেন্টের কাঁচামালের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি ও জাহাজভাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। সংগঠনটির প্রথম সহসভাপতি মো. শহীদ উল্ল্যাহ বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে দেশের সিমেন্ট ও ইস্পাত শিল্পে অস্থিরতা দেখা দেবে। ওই সব দেশ থেকে আসা কাঁচামালের দর এরই মধ্যে দ্বিগুণ বেড়েছে। এ ছাড়া যুক্ত হয়েছে পণ্য পরিবহন খরচ। এরই মধ্যে ওই সব অঞ্চলে পণ্যবাহী জাহাজ আটকে পড়েছে।

গতকাল সরেজমিন রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি দোকান ঘুরে দেখা যায়, সব কম্পানির সিমেন্টের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা বেড়েছে। খুচরা হিসেবে সুপারক্রিট ৪২০ থেকে বেড়ে ৪৭০ টাকা, শাহ স্পেশাল ৪২০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। স্ক্যান সিমেন্ট ৪৫০ থেকে বেড়ে ৪৯০-৫০০ টাকা, বেঙ্গল ৪১০ থেকে বেড়ে ৪৬০ টাকা এবং মীর ৪০৫ থেকে বেড়ে ৪৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মতে, প্রতিদিন নতুন রেট হচ্ছে। সিমেন্টের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

রড, সিমেন্টেরই নয়’ দাম বেড়েছে নির্মাণশিল্পের আরেক উপকরণ ইটের। প্রতিটি ইটের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। ১ নম্বর ইট প্রতি হাজার আগে যেখানে বিক্রি হতো ৯ হাজার টাকা, এখন এটি বিক্রি হচ্ছে ১৩ হাজার টাকায়। দ্বিতীয় গ্রেডের ইট বিক্রি হচ্ছে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায়। অথচ ভালো মানের ইট এর আগে সাড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যেই বিক্রি হয়েছে। ইটের দাম বৃদ্ধি ব্যাপারে সাভারের ডিবিএস ব্রিকফিল্ডের ম্যানেজার মো. মোকলেসুর রহমান জানান, এক টন কয়লা ছিল সাত হাজার টাকা। তা বেড়ে এখন হয়েছে ১৪ হাজার টাকার বেশি। কয়লা সিন্ডিকেটের কারণে এইটার দাম বেড়েছে।

গণপূর্তের ঠিকাদার জাহিদুল ইসলাম টিপু বলেন, রডের দামসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় অনেক উন্নয়নকাজ চালু রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন পুরোদমে উন্নয়নকাজ চলার কথা থাকলেও কাজের গতি কমে গেছে। এজন্য নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা যাবে না প্রকল্প। রড, সিমেন্ট, ইটসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে তদারকি বাড়ানোর আহŸান জানান তিনি।

ঠিকাদারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন- বাসির সভাপতি প্রকৌশলী এস এম খোরশেদ আলম জানান, নির্মাণ সামগ্রীর দাম হঠাৎ বাড়তে থাকায় চলমান কাজ সময়মতো শেষ করা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। কাজে ইতিমধ্যে ধীরগতি নেমে এসেছে। তাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, তারা যখন টেন্ডার জমা দিয়েছিলেন সেখানে এই নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়তে শঙ্কায় বর্ধিত মূল্য নির্ধারণের সুযোগ ছিলো না। অথচ এখন বর্ধিত দামে কিনতে হচ্ছে। তিনি জানান, স্টিল নির্ভর যে কোন অবকাঠামো নির্মাণে রডের দরকার হয় ২৫ ভাগ। আর এই রডের দাম যদি ২৫ ভাগ বেড়ে যায় তাহলে পুরো প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায় ৬ থেকে ৭ শতাংশ। অথচ বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে কোন প্রকল্প থেকে ৫ শতাংশ লাভ করা যায় না।

এফবিসিসিআই’র সাবেক সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমানে বিশ্ব একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব খুবই ভয়াবহ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মত দ্রুত প্রবৃদ্ধিতে থাকা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশি প্রভাব পড়ছে। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শুধু রড-সিমেন্ট-ইটের দামই নয় সবকিছুতেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। দ্রুত এ পরিস্তিতি থেকে বের হওয়া কষ্টকর হবে। একই সঙ্গে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বলতে শুধু একটি ক্ষেত্র নয়; এর সঙ্গে দেশের পুরো শিল্পখাত বা অর্থনীতি জড়িত।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Abdull Mustakimm ১৫ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৩ এএম says : 0
সারা বাংলাদেশে আন্দোলনের দরকার, দেশে এমন দ্রব্যমুল্যের দাম বেশি গরিবরা, মদ্যবিত্তরা, কি করে বাচবে,করুনার কারনে মানুষের আয় কম যদিো রাষ্ট্রের অর্থনিতি ভাল,কিন্তু শহরাঞ্চলে দেখা যায় মানুষ ময়লা আবর্জনা থেকে তাদের ক্ষুদা মিঠাচ্চে,
Total Reply(0)
MD A Musa ১৫ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৩ এএম says : 0
মূল্য স্ফিতি কাকে বলে সৌদিয়া আরবিয়াতে থাকলে বুঝতে। আরো আছে দোকান থেকে যা কিনি সব কিছুতে অতিরিক্ত সরকারী ১৫% নগদ ট্যাক্স।
Total Reply(0)
Mdkawsar Hamid ১৫ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৪ এএম says : 0
কি লাভ এত উন্নয়ন দেখিয়ে, সাধারন মানুষ গুলো দেখার কেউ নাই। রাস্ট্র তুমি নির্বিকার, নাগরিক অনিরাপদ, এমন নির্মমতার স্বীকার ,,,। অরক্ষি মৃত্যু ফাঁদ । এখন মহামারী থেকেও ভয়ংকর রুপ নিয়েছে বাংলাদেশে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দিকে তাকালে চোখ বেয়ে পানি চলে আসে।সাধারন মানুষের তো আর ঘুষের টাকা নেই যে তার পেট ভরে খাবে,, তাই সরকারের দৃষ্টি আকার্ষন করে বলছি দেশের উন্নয়ন নয়, আগে দেশের দিনমজুর ও গরীব অসহায় মানুষ গুলোর দিকে তাকান, দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে এই নির্ম আয়ের মানুষগুলোকে বাচান।
Total Reply(0)
Hasan Mahmud ১৫ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৫ এএম says : 0
ইন্টারন্যাশনাল মুদ্রা হিসেবে স্বর্ণমুদ্রা বা রৌপ্যমুদ্রাকে বেছে না নিলে এ সমস্যা বাড়তেই থাকবে
Total Reply(0)
Abdul Momin ১৫ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৫ এএম says : 0
এটা আরও বাড়বে তার কারন হলো দেশ এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের চেয়ে এখন ব্যক্তি স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, এবং সেই সাথে ক্রমাগত ভাবে জীবিকার সাথে সম্পর্কিত উৎপাদিত দ্রব্যের পরিমান দিন দিন কমে যাচ্ছে যা ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ.....
Total Reply(0)
Asad Biswas ১৫ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৫ এএম says : 0
দেশপ্রেমিক জনগণ কখনোই চায় না এদেশে লুটপাটকারী সন্ত্রাসী দুর্নীতিবাজ ক্ষমতার অপব্যবহার কারি কোন সরকার বা কোন দল বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তি বাংলাদেশ শাসন করুক... তবুও সাধারন জনগনের আশা ক্ষমতা কুক্ষিগত কারীদের হাত থেকে মুক্তি চাই দেশপ্রেমিক জনগণ
Total Reply(0)
Nur Nowrin Sheikh ১৫ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৬ এএম says : 0
সবকিছু পরিশেষে যেটা হতে যাচ্ছে.... গৃহ যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে,, আল্লাহ আমাদের ঈমান ঠিক রাখার তাওফিক দান করুন।
Total Reply(0)
Rocky Khan Rocky ১৫ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৭ এএম says : 0
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য দিনে দিনে বাড়ছে আর কমছে শুধু মানুষের দাম
Total Reply(0)
গ্রিন রবি ১৫ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৭ এএম says : 0
বাংলাদেশে জিনিস পত্রের দাম যে হিসাবে বাড়ছে সেটা অস্বাভাবিক। এটা ক্ষমতা সীন দলের ব্যার্থতা।
Total Reply(0)
Mir Irfan Hossain ১৫ মার্চ, ২০২২, ৬:৫৭ এএম says : 0
মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে যখন তীব্র বেকারত্ব যোগ হয় - সেটাকে কি নামে অভিহিত করবেন? অর্থাৎ একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে দৈনিক - অন্যদিকে মানুষের কাজের সুযোগ ক্রমহ্রাসমান! একেই অর্থনীতিবিদরা স্ট্যাগফ্লেশন বলে থাকেন!
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন