শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র শবে বরাত পালিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৭ এএম

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে সারা দেশে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হয়েছে। ইবাদত বন্দেগিতে রাত পার করছেন মুসল্লিরা। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রাত হিসেবে পরিচিত। এই রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন মহান আল্লাহ তায়ালা।‘লাইলাতুল বরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রাত। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, আল্লাহ এই রাতে তাঁর বান্দাদের গুনহা (অপরাধ) মাফ (ক্ষমা) করে দেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।

মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ পড়েন, কোরআন তিলাওয়াত করেন এবং জিকিরে মগ্ন ছিলেন। অতীতের পাপ অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন ধর্ম প্রাণ মুসলমানরা। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এশার নামাজের পর থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিরা রাত জেগে নফল নামাজ আদায়, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতসহ দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এতে মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মোনাজাতে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি এবং করোনা মহামারি থেকে মুক্তি কামনা করে দোয়া করা হয়।

রাজধানীর মহাখালীতে মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্সে বাদ মাগরিব থেকে সারারাত ইবাদত বন্দেগী, কোরআন তিলাওয়াত জিকির আসকার ও মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে পবিত্র শবে বরাত পালিত হয়েছে। আখেরী মোনাজাতে দেশ জাতি, ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
অনেকেই এদিন রোজা রেখেছেন এবং গোপনে দান খয়রাতের কাজ করেছেন। অনেকে এই রাতে তাঁদের পূর্বপুরুষদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রার্থনার আয়োজন করেন। এই পবিত্র রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলীমরা আত্মীয় প্রতিবেশী দুঃস্থ মধ্যে হালুয়া, ফিরনিসহ নানারকমের খাবার বিতরণ করেছেন। রাতে মসজিদ, কবরস্থান এবং মাজারে গিয়ে অনেকেই প্রার্থনা করেছেন। ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে বলে ‘লাইলাতুল বরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রাত।

ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে এই দিনটি পালন করা হয় গোটা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া জুড়ে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আজারবাইজান, তুরস্ক, উজবেবিস্তান, তাজাকিস্তান, কাজাকিস্তান, তুর্কেমেনিস্তান, কিরগিজস্তান জুড়ে চলে শবে বরাতের উৎসব। আরব বিশ্বে কেবলমাত্র সুফি ঐতিহ্যের আরব ও শিয়া মুসলিমরা এই উৎসব পালন করেন। স্থানভেদে এই উৎসব ভিন্ন নামে পরিচিত। ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শাবান, তুরস্কে বিরাত কান্দিলি, ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বরাত বা নিফসু শাবান। শবে বরাত মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তাও নিয়ে আসে। তাই শবে বরাত থেকেই আসন্ন রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। আরবি দিনপঞ্জিকা অনুসারে, শাবান মাসের পরে আসে রমজান মাস।

শবে বরাত উপলক্ষে মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট তাঁর বাণীতে বলেন, ‘মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়।’ সমাজের দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে তিনি বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘আসুন সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনা ব্যক্তিসমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে চট্টগ্রামে পবিত্র শবে বরাত পালিত হয়েছে। রাতভর ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহর রহমত কামনা করেছেন নগরবাসী। নগরীর প্রতিটি মসজিদে মুসল্লির ঢল নামে। নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, জমিয়তুল ফালাহ, এনায়েত বাজার শাহী জামে মসজিদ, লালদীঘি জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মুরাদপুর মসজিদে বেলাল, বহদ্দারহাট জামে মসজিদসহ প্রতিটি মসজিদে ছিলো নানা বয়সী মুসল্লির উপচেপড়া ভিড়। অনেক মসজিদ সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। মসজিদে মসজিদে করোনামুক্তি, বিশ্বশান্তি, দেশের সমৃদ্ধি, মানবজাতির সুখ, সমৃদ্ধি, রোগমুক্তির জন্য দোয়া করা হয়েছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, পবিত্র লাইলাতুল বরাত উপলক্ষে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী চকবাজার জামে এবাদুল্লাহ মছজিদে তিনদিন ব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিল শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। ফরিদপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিলেও গত শুক্রবার রাতভর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ, জিকির এবং ওয়াজ মাহফিল এবাদত বন্দেগী করা হয়েছে।

বরিশালের মুরুব্বীয়ানে দ্বীন ও জামে স্টিমার ঘাট মসজিদের খতিব আলহাজ হজরত মাওলানা শরফ উদ্দিন বেগ এর সভাপতিত্বে এবাদুল্লাহ মছজিদের মাহফিলে প্রধান মেহমান ছিলেন আলহাজ মাওলানা মুফতী মো. মাহবুবুর রহমান। এছাড়া, ঢাকার দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস আলহাজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান আইয়ুবী, কুমিল্লার মোফাচ্ছেরে কুরআন মাওলানা মুফতি মুহিব্বুল্লাহ আল-মুঈন ছাহেব, ছারছিনা দ্বীনিয়া মাদরাসার মোহাদ্দেস মাওলানা মুফতী মুহিব্বুল্লাহ আল-মাহমুদ ও আলহাজ হাফেজ ক্বারী মাওলানা মুফতী মুনিরুজ্জামান নুরানী তিন দিনের এ মাহফিলে তাফসীর করেন। এ উপলক্ষে জামে এবাদুল্লাহ মসজিদ হিফজুল কুরআন মাদরাসার ১৬ জন হাফেজ ছাত্রকে দস্তারবন্দী করা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মসজিদগুলোতেও পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে মিলাদ, দোয়া এবং নফল নামাজ আদায়সহ রাতভরই এবাদত বন্দেগী হয়েছে।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র শবে বরাত পালিত হয়েছে। গত শুক্রবার বাদ মাগরিব থেকে বিভিন্ন মসজিদে শুরু হয় মিলাদ ও দোয়া মাহাফিল। রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও সাহেববাজার বড় জামে মসজিদসহ প্রতিটি এলাকার মসজিদে এশার নামাজের পর বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম বয়ান করেছেন। হযরত শাহ মখদুম (রহ.) দরগা শরীফে ফজরের বিশাল জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে আখেরি মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে রাজশাহীতে সমস্ত মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি ও দেশের সার্বিক কল্যাণ কামনা করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুষ্টিয়ায় পবিত্র শবে বরাত এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. হেলালু উজ্জামান এর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সহকারী পরিচালক এ জে এম সিরাজুম মুনির। আলোচনা পেশ করেন কুষ্টিয়া কুওয়াতুল ইসলাম কামিল মাদরাসার মুহাদ্দিস মাও. মো. শিহাব উদ্দিন।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র শবে বরাত পালিত হয়েছে। গত শুক্রবার বাদ মাগরিব থেকে শনিবার ফজর নামাজ পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাত, ওয়াজ-মাহফিল, নামাজ, জিকির, মিলাদ ও বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে সৌভাগ্যের রজনী অতিবাহিত করেন মুসল্লিরা। মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় মসজিদে মসজিদে পুরুষরা নানা এবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে রাত কাটিয়ে দেন। এছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা ওমর ফারুক, বাহির গোলা জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা রুহুল আমিন ও নিজাম খাঁ উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ইমাম আব্দুর রউফ পবিত্র শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের উপর বিশেষ বয়ান করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন