বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট,প্রথম অন্তর্বর্তীকালিন সরকার প্রধান এবং সাবেক বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ (৯২) আর নেই। গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক বার্তায় প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পৃথক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
মরহুমের জামাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহাদুজ্জামান জানান, আজ (রোববার)প্রথমে গামের বাড়ি নেত্রকোনায় তার প্রথম জানাজা হবে। সেখান থেকে তার লাশ আনা হবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে। এখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তার স্ত্রী আনোয়ারা আহমদ ২০১৮ সালে ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ময়ে ড. সিতারা পারভীন ২০০৫ সালের ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। এখন সাহাবুদ্দীন আহমদের এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এবং এক মেয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে প্রেসিডেন্ট করা হয়। বার্ধক্যে উপণীত বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৯০’এর গণআন্দোলনের পর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরার প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেও তাকে প্রেসিডেন্ট করা হয়। ২০০১ সালে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেয়ার পর ঢাকার গুলশানের একটি বাড়িতে অনেকটা নিভৃত জীবন যাপন করছিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট।
সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রæয়ারি নেত্রকোণার কেন্দুয়া থানার পেমল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এম এ ডিগ্রি নেন।
ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রথম কর্ম জীবন শুরু করেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। পরে প্রশাসক হিসেবে গোপালগঞ্জ ও নাটোর মহকুমায় চাকরি করেন। পরে ১৯৬০ সালে বিচার বিভাগে বদলি হন। তিনি ঢাকা ও বরিশালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং পরে কুমিল্লা এবং চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে সাহাবুদ্দীন আহমদ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। পরে ১৯৮১ সালের ১৬ এপ্রির নিয়োগ পান আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে।
এদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের ইন্তেকালে আরও শোক জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল প্রমুখ।
এদিকে দেশের প্রথম তত্ত¡াধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক কাউন্সিলে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপি’র মহাসচিব আরও বলেন, সোহাবুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অন্যান্য ভুমিকা পালন করেছেন। ১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্যে সর্বসম্মতভাবে যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই সময় তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ যতদিন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করবে, ততদিন তাকে (সাহাবুদ্দীন আহমদ) স্মরণ করবে। এ সময় মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান বিএনপি’র এই নেতা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন