শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কর্মসংস্থান রুজি-রোজগারে ভাটা

হু হু করে বাড়ছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৭ এএম

বর্তমানে সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে নির্মাণ কাজ এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও নিচে নেমে গেছে। কর্মসংস্থান বা কাজের সুযোগও কমেছে সমানুপাতে। নির্মাণ সামগ্রীর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এর জন্য দায়ী। দেশে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প স্থবির। এ কারণে সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে কর্মসংস্থান। নির্মাণ খাত, উন্নয়ন ও ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের কাজের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ মানুষ এখন চরম অনিশ্চয়তায়। রুটি-রোজগারে ভাটার টান পড়েছে। ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত তারা। গত কয়েক মাস ধরে রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, খোয়া, বিটুমিন, রঙ, টাইলসসহ সবধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম ঊর্ধ্বমুখী। মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্প থমকে গেছে। এ খাতে যারা কাজ করতেন তাদের অনেকে বেকার হয়ে গেছেন।

নির্মাণ সামগ্রী ব্যবসায়ও নেমে এসেছে ধস। মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কেনাবেচা কমে গেছে। লোকসানের আশঙ্কায় ব্যবসায়ীরা শ্রমিক ছাঁটাই করছেন। কল-কারখানার নির্মাণ এবং বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণ থমকে যাওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগও সঙ্কুুচিত হয়ে গেছে। সরকারি মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে এবং আবাসন ও ব্যক্তিগত বাড়িঘর নির্মাণ খাতে লাখ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত। তাদের অনেকে এখন বেকার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কাজ হারিয়ে দিশেহারা এসব খেটে খাওয়া মানুষ। প্রতিদিনই কর্মহীন নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে।

নির্মাণ সামগ্রী খাতে অস্থির অবস্থার ফলে এ খাত সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ মানুষ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কঠিন সংকটে পড়েছেন। ইট, সিমেন্ট, রডের পাশাপাশি নির্মাণ সামগ্রীর সব আইটেমের বাজারে আগুন। তাই বেচাকেনা কমে গেছে। এতে মানি সার্কুলেশন বা টাকার প্রবাহ কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে। মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি এখন বিপাকে। এ অবস্থায় অর্থনীতির এ বিকাশমান খাতে অচলদশা পরিস্থিতিতে নাজুক করে তুলেছে। অথচ অতীতে এ সময়ে উন্নয়ন ও আবাসন খাত পুরোপুরিই সচল ছিল। সামনে বর্ষা মৌসুম, তার আগেই শুষ্ক মৌসুমে নির্মাণ কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে যারা কাজ শুরু করেছিলেন তাদের এখন মাথায় হাত। নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এ খাত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।

নগরীতে চলমান মেগা প্রকল্পসহ উন্নয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগের তুলনায় কাজের গতি কমে যাওয়ায় শ্রমিকের সংখ্যাও কমে গেছে। অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে গেছেন। একই অবস্থা আবাসন খাতেও। রিহ্যাবের তালিকাভুক্তসহ নগরীতে কয়েক হাজার ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। এসব নির্মাণ কাজে শ্রমিকের সংখ্যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শ্রমিক সরবরাহকারী একজন ঠিকাদার জানান, আগে তিনি দিনে ২০০ শ্রমিক সরবরাহ দিতেন। এখন তা ১০০ এর নিচে নেমে এসেছে। নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।

অন্যান্য প্রকল্পগুলোতেও একই চিত্র। বড় প্রকল্পগুলোতে কিছু কাজ হলেও ছোট প্রকল্পগুলো কার্যত বন্ধ। সেখানে যারা কাজ করতেন তারা এখন পুরোপুরিই বেকার। নগরীর শ্রমিকের হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কাজের অপেক্ষায় শ্রমিকদের দীর্ঘলাইন। নগরীর চকবাজার, কাজির দেউড়ি, কর্ণফুলী ইপিজেড, দেওয়ানহাট, মুরাদপুর, এ কে খান গেইট, বহদ্দারহাট, কালামিয়া বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সকালে শ্রমিকের হাট বসে। ঠিকাদারেরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেখান থেকে শ্রমিক নিয়ে যান। এসব শ্রমিকদের বেশিরভাগই নির্মাণ শ্রমিক। কিন্তু এখন শ্রমের বাজারে চরম মন্দা। শ্রমিকরা জানান, দুই মাস আগেও তারা কাজে ব্যস্ত ছিলেন। শ্রমবাজারে আসলেই ঠিকাদারেরা তাদের নিয়ে যেত। এখন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কাজ মিলছে না। খালি হাতে ফিরছেন। আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনে তাদের সংসার চলছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে তাদের না খেয়ে মরতে হবে।

আগ্রাবাদ এলাকার রড, সিমেন্ট ব্যবসায়ী মো. ফখরুল বলেন, মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেচাবিক্রি কমে গেছে। আগে দোকানে চার-পাঁচজন শ্রমিক কাজ করতেন। এখন দুইজন নিয়ে চলছে। বাকিদের ছাটাই করা হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট ট্রাক, ঠেলাগাড়ি, পিকআপসহ পরিবহন শ্রমিকরাও এখন কাজ পাচ্ছেন না। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা ভবন নির্মাণ করতেন সেখানেও বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের কাজের সুযোগ ছিল। তাও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। এসব নির্মাণ শ্রমিকেরা বিকল্প কোন কাজও পাচ্ছেন না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Habiba Fariha ২০ মার্চ, ২০২২, ৭:২০ এএম says : 0
এভাবে আর কতোদিন ?
Total Reply(0)
Md Hasan ২০ মার্চ, ২০২২, ৭:২০ এএম says : 0
মানুষ মরে যাক তবুও উন্নয়ন চলতে থাকুক।এখন তো দেশে কোন গরীব ই নেই
Total Reply(0)
Md Rashel Rashel ২০ মার্চ, ২০২২, ৭:২১ এএম says : 0
সব সামান মনে হয় রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসে অন্য দেশ থেকে আমদানি রপতানি করেনা মনে হয়, দেশ চোর থেকে রেহাই পাবেনা।
Total Reply(0)
Showkat Hayat Khan ২০ মার্চ, ২০২২, ৭:২১ এএম says : 0
যেভাবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে তাতে বাংলাদেশের যতগুলো ডিপার্টমেন্ট আছে ঠিকাদার দিয়ে কাজ করায় এমন একজন ঠিকাদার বাকি থাকবে না যে এই কাজগুলো করার পরে দেউলিয়া হবে না
Total Reply(0)
Md Apel Mahmud ২০ মার্চ, ২০২২, ৭:২২ এএম says : 0
ইন্ডিয়ান কাগজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৩ দিনের পার্থক্যে প্রতি প্যাকেট বোর্ডে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল কারন বুঝতে পারছি না।
Total Reply(0)
Monzur Haider Zippi ২০ মার্চ, ২০২২, ৭:২২ এএম says : 0
এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য এই মিডিয়ার প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
Md Sumon Howlader ২০ মার্চ, ২০২২, ৭:২২ এএম says : 0
অবৈধ সরকারের খুটির জোর করতে বসেছে মানুষ মারা সরকার আর নাই দরকার
Total Reply(0)
Md Ramzan Ali Sheikh ২০ মার্চ, ২০২২, ৭:২২ এএম says : 0
মেগা প্রকল্পের সব টাকা লুট হয়ে নেতাএবং আমলাদের একাউন্টে চলে গেছে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন