শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা সহসাই উঠছে না

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চা, মানবাধিকার, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইস্যু, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার, ধর্মীয় সম্প্রীতি, ইউক্রেন-রাশিয়া

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সংলাপে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ানের (র‌্যাব) ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দেশটির সহযোগিতা চেয়েছে ঢাকা। আর ওয়াশিংটন বলছে, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, এ বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে। ফলে সহসাই উঠছে না র‌্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। গতকাল রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সংলাপের পর ঢাকা ও ওয়াশিংটনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড বলেছেন, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর তিন মাস বাংলাদেশে বিচারর্বহিভূত হত্যাকান্ড ঘটেনি। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছি। নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার বিষয়ে বিস্তারিত লিখিতভাবে তুলে ধরেছি। আশা করছি সামনে সুফল পাবো। গতকাল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অংশিদারিত্ব সংলাপ প্রায় দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড। বৈঠকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চা, মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার, ধর্মীয় সম্প্রীতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ্যে র‌্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রস্তাব করা হয়।

বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছি। আমরা শুধু ব্যাখ্যাই করিনি, আমরা এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উন্মুখ এটা প্রকাশ করেছি। আশা করছি সামনে সুফল আসবে। র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বাড়তে পারে এমন আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেছি।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক চর্চা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির মতো বিষয়েও বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় ও বøু ইকোনমিতে সম্ভাব্য সহযোগিতা নিয়েও আমরা গভীর আলোচনা করেছি। আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সম্পর্কে আমাদের মতামত বিনিময় করেছি এবং জাতীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং ভ‚-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, দুই পক্ষ প্রকৃতপক্ষে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে একে অপরকে সহযোগিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আগামী জুনের শুরুতে আসন্ন উচ্চ-স্তরের অর্থনৈতিক অংশীদারি পরামর্শে এবং চলতি বছরেই টিআইসিএফে এসব বিষয়ে আরও আলোচনা করা যাবে।

ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড বলেন, কোনো দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা চুপ থাকতে পারি না। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারকে সবসময়ই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ বিষয়টি অনেক জটিল। এ বিষয়ে আরও কাজ করার আছে। বাংলাদেশে র‌্যাবের কার্যকলাপ, বিচারর্বহিভূত হত্যা ও গুম নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে। তবে আমরা গত তিন মাসে এ বিষয়গুলো সমাধানে উন্নতি দেখতে পেয়েছি। পররাষ্ট্র সচিব আমাদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সরকার বিচারর্বহিভূত হত্যাকান্ড ও মানবাধিকারের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দায়বদ্ধতা ও বিচার নিয়ে সরকার কাজ করছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সরকারের পরিকল্পনা জানিয়ে আমাদের একটি ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে। আমরা আলোচনা অব্যাহত রাখব। কারণ নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ দমন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড বলেন, বৈঠকে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক দীর্ঘ ৫০ বছরের। সামনে এই সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আওতায় এ সম্পর্ক নিরাপত্তা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন ইস্যুতে আরও শক্তিশালী হবে।

সংলাপে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিদের আলোচনায় চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন পরিস্থিতি উঠে আসে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কথা জানায় ওয়াশিংটন।
মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের মধ্যে এ বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় শান্তি ও নিরাপত্তা চায়। বহুবার রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসানোর চেষ্টা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু মস্কো শোনেনি। তারা আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে ইউক্রেনে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে বৈশ্বিকভাবে গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক আইন এখন হুমকির মুখে। এমন পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার সব অংশীদারত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই হুমকি মোকাবেলা করতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াতে হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা সব সময় যুদ্ধের বিপক্ষে।

এর আগে গত শনিবার ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড ঢাকায় আসেন। তিনি আগামী ২৩ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফর করবেন। এই সফরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অংশীদারদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে। সফরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড একটি প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ও প্রতিরক্ষা দফতরের নীতিবিষয়ক ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি আমান্ডা ডরিও রয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Sarwar Alam Milon ২১ মার্চ, ২০২২, ৭:১৭ এএম says : 0
আমেরিকার কাছ থেকে এ্যাটাক হেলিকপ্টার কেনা যেতে পারে।আর অত্যাধনিক ফাইটার বিমান কিনতে হবে ইউরোপ থেকে।কারন মিয়ানমারেরগুলো চীন আর রাশিয়ার। বাকী সবকিছু আনতে হবে তুরস্কের নিকট হতে। আর পারমানবিক সহযোগীতা নিতে হবে রাশিয়ার কাছ থেকে।
Total Reply(0)
Mufrat Zaman Shahi ২১ মার্চ, ২০২২, ৭:১৭ এএম says : 0
উঠবেও না,,,আইন বাতিল না করা পর্যন্ত
Total Reply(0)
MD Moazzem Hossain ২১ মার্চ, ২০২২, ৭:১৮ এএম says : 0
যেখানে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটা আবার উঠবে না
Total Reply(0)
Md Sohel Rana ২১ মার্চ, ২০২২, ৭:১৮ এএম says : 0
RAB এর নিষেধাজ্ঞার পর একশো দিনে কোনো বন্ধুক যুদ্ধ হয়নি...
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন