উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার তিউনিসের কেন্দ্রে অবস্থিত পার্লামেন্টের কাছে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। তিউনিসিয়ার স্বাধীনতার ৬৬তম বার্ষিকীতেই এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে বিরোধীদের পার্লামেন্টে যেতে বাধা দিতে নিরাপত্তা বাহিনী পার্লামেন্টের কাছাকাছি বারদো স্কয়ার ও সংযোগকারী রাস্তা বন্ধ করে দেয়। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট সাইদকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য অভিযুক্ত ও তার পদক্ষেপের সমালোচনা করে সেøাগান দেন। তিউনিসিয়ার পার্লামেন্টের কাছে এই বিক্ষোভে ‘জনগণ চায় অভ্যুত্থানের পতন’, ‘জনগণ চায় প্রেসিডেন্টের পতন’সহ আরো বিভিন্ন সেøাগান দেয়া হয়। বিক্ষোভে এমন অনেকেই অংশ নেন, যারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় কায়েস সাইদকে ভোট দিয়েছিলেন। এমনই একজন তিউনিসীয় নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মী মুনিরা বুআজিজি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমি চিন্তা করেছিলাম তিনি গণতন্ত্র ও বিপ্লবের অর্জনে বিশ্বাস করেন, কিন্তু তিনি তার সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ করেছেন।’ অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা কখনোই একে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলতে পারি না। আজ জনগণ সাইদপন্থী ও সাইদবিরোধী হিসেবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এটি আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ক্ষতি করছে।’ এদিকে তিউনিসিয়ার সংবিধান নতুন করে লেখার জন্য দেশটির নাগরিকদের মতামত চেয়ে গত জানুয়ারিতে এক অনলাইন জরিপ চালু করেন কায়েস সাইদ। রোববার ছিলো এই জরিপে মতামত দেয়ার শেষদিন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, তিন মাসে এই অনলাইন জরিপে পাঁচ লাখ আট হাজার নাগরিক তাদের মতামত দিয়েছেন। যা ৭০ লাখ ভোটারের মাত্র সাত শতাংশ। বিক্ষোভকারীরা এই অনলাইন জরিপকে প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। বিক্ষোভ সমাবেশে স্থগিত পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট সামিরা শাউয়াশি বলেন, ‘আমরা মতামতের ফলাফলকে গ্রহণ করবো না। এটি জনগণের বিরুদ্ধে প্রহসন।’ অপরদিকে তিউনিসিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আননাহদার সদস্য ই্য়ামিনা জুগলামি বলেন, ‘আমরা আগাম প্রেসিডেন্ট ও আইনসভার নির্বাচন চাই। আমরা এক রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে আছি এবং আমাদের অবশ্য রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দেশকে বাঁচাতে হবে।’ গত বছর ২৫ জুলাই করোনা পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ায় সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জেরে আকস্মিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর রাতে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ দুই বছর আগে নির্বাচিত পার্লামেন্ট ৩০ দিনের জন্য স্থগিত, প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশিকে বরখাস্ত ও দেশের নির্বাহী ক্ষমতা নিজের হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আদেশ জারি করেন। পরে ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রের জন্য হুমকি বিবেচনায় পরবর্তী আদেশ দেয়া না পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার আদেশ দেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। অপরদিকে ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের কিছু অংশ স্থগিত করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা জোরদার করেন সাইদ। তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো এই আদেশকে সাংবিধানিক অভ্যুত্থান বলে অভিযোগ করে আসছে। ২০১১ সালে আরব বসন্তের সূচনাকারী দেশ তিউনিসিয়ায় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে ২৪ বছর দেশটি শাসন করা একনায়ক জাইন আল আবেদীন বিন আলী ক্ষমতাচ্যুৎ হন। এর পর থেকেই গত দশ বছর ভঙ্গুর অবস্থা সত্ত্বেও আরব বিশ্বের একমাত্র গণতান্ত্রিক শাসন উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে চালু ছিলো। আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন