বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস। এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বিনিয়োগ করি যক্ষ্মা নির্মূলে, জীবন বাঁচাই সবাই মিলে’। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যক্ষ্মার লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে এমন ২৮ লাখের বেশি মানুষকে পরীক্ষা করে তাদের শানাক্ত করা হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগীর আনুমানিক মৃত্যু ছিল প্রতি লাখে ৫৪ জন। ২০২০ সালে এই সংখ্যা কমে ২৭ জনে নেমেছে। চিকিৎসায় নিরাময়ের হার গত ১০ বছরে ৯৫ শতাংশে বেশি। ২০২১ সালে এই হার ছিল ৯৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমবিডিসি) ডা. হাসান ইমাম বলেন, শনাক্ত বেড়েছে তার মানে এই নয় যে দেশে যক্ষ্মা রোগী বেড়েছে। মূলতো কোভিড-১৯ মহামারির শুরুর দিকে অন্যান্য রোগের মতো যক্ষ্মা শনাক্তকরণ কর্মসূচির কার্যক্রম কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে কোভিড পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসায় শানাক্তকরণে জোর দেওয়া হয়। এছাড়া গ্লোবাল ফান্ডের সহযোগীতায় আগের তুলনায় আমাদের যক্ষ্মা শনাক্তের সক্ষমতাও বেড়েছে। বিশেষ করে জিন এক্সপার্টের মতো অত্যাধুনিক মেশিনের সহযোগীতায় বিপুল রোগী শনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে। ডা. হাসান ইমাম বলেন, এভাবে রোগী শনাক্ত হলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত সময়ের আগেই হয়তো যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগী সর্বাধিক তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। ১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে। এরপর থেকেই বাংলাদেশ সরকার ও কিছু বেসরকারি সংস্থা যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রনে কাজ করছেন। ২০১৫ সালের পর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে মহামারি হিসাবে উল্লেখ করে নতুন কর্মকৌশল অনুমোদন করে।
যেখানে বলা হয়, ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে যক্ষ্মা রোগে মৃত্যুহার ৯৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে যক্ষ্মায় আক্রান্তের হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি জানায়, বাংলাদেশ যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ের জন্য উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে যেমন-এলইডি মাইক্রোস্কোপ, জিন এক্সপার্ট মেশিন, লিকুইড কালচার ও এলপিএ, ডিজিটাল এক্সরে ব্যবহার করা হচ্ছে। যক্ষ্মা রোগ নির্ণয়ে ইতোমধ্যে দেশে ৪৯০টি জিনএক্সপাট মেশিন ও ১৮৭ ডিজিটাল এক্সরে চালু আছে। এছাড়াও ১টি ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরী ও ৪টি রিজিওনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরীর যক্ষ্মা রোগী সনাক্তের কাজ করছে। পাশাপাশি ৪৪ টি বক্ষব্যাধি কিনিক, ৭টি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল এবং দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতল, সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্ত:বিভাগ ও বহি:বিভাগে যক্ষ্মা নির্নয়ের পরীক্ষা হয়ে থাকে। এসব সুযোগ বাড়ানোর কারণে দেশে ড্রাগ সেনসিটিভ ও ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট উভয় প্রকার যক্ষ্মা রোগী সনাক্ত বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রের পর প্রতিটি রোগীকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি নিয়মিত ওষুধ সেবনের জন্য প্রতি রোগীর জন্য একজন ডটস প্রোভাইডার নিশ্চিত করা হয়েছে। যারফলে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণের পাশাপাশি এই রোগে মৃত্যুহার কমে এসেছে। চিকিৎসায় সাফল্যের হার বেড়েছে, যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক যক্ষ্মা রোগের জীবানু মাইক্রোব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস আবিস্কার করেন। যক্ষ¥া রোগের জীবানু আবিস্কারের ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জীবানু আবিস্কারের দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মারোগের চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর এই দিনটিতে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন