সাম্রাজ্যবাদীদের চাপিয়ে দেওয়া মুক্তবাজার দর্শনের ফলে জাতীয় বাজেট এখন সম্পদ জবরদখলকারী, দুর্নীতিবাজ ও ফাটকাবাজ গোষ্ঠীর তোষণ-পোষণকারীতে পরিণত হয়েছে। গত শুক্রবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা : সিলেট অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, দুর্নীতিবাজ ও ফাটকাবাজ গোষ্ঠীর তোষণ-পোষণকারীদের কারণে অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতাসহ সর্বোচ্চ সম্ভাবনা থাকলেও আঞ্চলিক বৈষম্যের অবসান হয় না। ঘাটতি, অস্বচ্ছতা ও গোঁজামিল দিয়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য প্রণীত জাতীয় বাজেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাক্সক্ষার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে আলোচনায় সিলেট বিভাগের চারটি জেলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞ, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক কর্মী, সাংবাদিক নেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি তাদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
আবুল বারকাত বলেন, রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতি এখন রেন্ট-সিকার গোষ্ঠীর দাসে পরিণত হয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে আবারও বৈষম্যমূলক দ্বৈত-অর্থনীতি পাকাপোক্ত রূপ নিয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে জাতীয় নীতি ও বাজেট প্রণয়নকারীদের চিন্তা ও স্বদেশপ্রেমের দীনতা। ৪৮টি জাতীয় বাজেটের মধ্যে ৩০টি উপস্থাপনকারী সিলেটে অঞ্চলের তিনজন অর্থমন্ত্রী।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও বৈদেশিক মুদ্রার প্রাচুর্য থাকলেও কৃষি খাতের মাধ্যমে এ বিভাগের গ্রামীণ পরিবারের বার্ষিক আয় দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম-৬৩ হাজার ৪২১ টাকা। অথচ কৃষিযোগ্য জমির ৫৫ শতাংশই অনাবাদি পড়ে থাকে। এখানে ৪৯ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু প্রসবের হার মাত্র ৩৮ শতাংশ, জন্মের সময় শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারও দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সিলেট বিভাগের মানুষের যতটুকুই উন্নয়ন হয়েছে, তা সম্পূর্ণই প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে। বাজেট প্রণয়নে কালো টাকা ও অর্থ পাচার বন্ধ করে সৎ কর্মকাণ্ড, বিনিয়োগবান্ধব কর্মকৌশল, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থাপনা ও সুষম আঞ্চলিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হলে বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন অনেক আগেই বাস্তব রূপ পেত।
মতবিনিময় সভায় সিলেট অঞ্চলের বক্তারা বলেন, বিনিয়োগের জন্য ওয়ান স্টপ পরিষেবার মাধ্যমে শুধু প্রবাসী ও রপ্তানিতে অর্জিত অর্থ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে প্রবাহিত করা গেলে এ অঞ্চলের চেহারাই বদলে যেত। এখানে রেমিট্যান্সের প্রবাহ অনুপাদনশীল খাতে ব্যয় না করে এফডিআই ও বন্ড বাজারে আনতে উৎসাহিত করা জরুরি।
তারা বলেন, দেশের ১৬৭টি চা-বাগানের মধ্যে ১৩৬টিই এই বিভাগে। এ শিল্পে জড়িত শ্রমিকদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও চা প্রক্রিয়া-বাজারজাতকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে বাজেটে বিশেষ দিকনির্দেশনা থাকতে হবে।
দেশের ৩৭৩টি হাওরের মধ্যে ২১৭টিই এ অঞ্চলে; এ জন্য হাওরে কৃষি সম্পদ-মৎস্য-পশুসম্পদের উন্নয়ন এবং মৎস্য প্রজনন দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ রেখে জেলেদের প্রণোদনা দেওয়া জরুরি। এ ছাড়া প্রচুর সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত সম্প্রসারণে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশবান্ধব যান চলাচল উৎসাহিতকরণ, পরিবেশ বিপর্যয় ও পাহাড় ধস কমাতে অপরিকল্পিতভাবে খনি থেকে পাথর উত্তোলন ও যত্রতত্র আবাসন বন্ধ করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন