উচ্চমূল্যের কারণে যখন গরু ও খাসির গোশত মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে, তখন আরও শঙ্কার খবর দিচ্ছে পোলট্রি খাত। ফিডের দাম বাড়ার চাপ সামলাতে না পেরে খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা। কাঁচামাল সংকটে বন্ধ হচ্ছে ফিড মিলও। এ শিল্পের এমন বহুমুখী সঙ্কটেও মন্ত্রণালয় থেকে সঠিক নির্দেশনা না পাওয়ার অভিযোগ করেন উদ্যোক্তারা। এদিকে খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে বিশেষ বোর্ড গঠনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
‘আগে খাসির গোশত খেতাম, এরপর গরু, বর্তমানে মুরগি খাচ্ছি। এখানেও দাম বেশি। খাবার নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ আর কতটুকু করতে পারি।’ খুচরা বাজারে দাম বৃদ্ধি নিয়ে ভোক্তার এ উদ্বেগের কারণ অনুসন্ধানে খামার পর্যায়ে গিয়ে পাওয়া গেল আরও বড় বিপর্যয়ের আভাস। খামারিদের দাবি, গত নয় মাসে প্রতি কেজি পোলট্রি ফিডের দাম ১২ টাকা বাড়লেও সেভাবে বাড়েনি মুরগির দাম। তাই খামারই বন্ধ করে দিচ্ছেন অনেকে।
লাভ না হওয়ায় খামার বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে দুজন খামারি বলেন, আমাদের সাত হাজার শেড ছিল। সব কটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ওপরের শেডও বন্ধ করে দিয়েছি। যদি এই মুরগিতেও লাভ না হয়, এটিও বন্ধ করে দেব।
ফিডের দাম বাড়ায় মুরগির সরবরাহ-সঙ্কটের মুখে খুচরা বাজার। এ অবস্থায় পশুখাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারাও নিরুপায়। কারণ, গত দুই বছরে কাঁচামালের দাম বেড়েছে গড়ে ৬৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে প্রকট হয়েছে সরবরাহ সঙ্কট। এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে ৮০টির মতো কারখানা।
কাঁচামালের বাড়তি দামে বিপাকে পড়া ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছি। সাময়িকভাবে সমস্যা হচ্ছে। তবে তা অচিরে ভালো হওয়ার আশা করলেও তা হতে দেখছি না। দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। আমাদের বাধ্য হয়ে ফিডের দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে।
চাহিদা আর জোগান যখন এমন চ্যালেঞ্জের মুখে তখনো উদাসীন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এমন দাবি করে আগের মতো কর অবকাশ চায় এ খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সংগঠনটির সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর থেকে করছে কি না, তা জানি না। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের না দিয়ে ভারতে সয়াবিন রফতানির অনুমোদন দিয়েছে। এর জন্যও দাম বেড়েছে। সয়াবিন রফতানি না হলে এখন দাম ৪৫ টাকা থাকত। আমি মনে করি, আবারও এটিকে কর অবকাশ খাত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া উচিত।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, টেকসইভাবে ঘুরে দাঁড়াতে এ খাতের জন্য যেমন দরকার একটি শক্তিশালী নীতিমালা, তেমনি দরকার সমন্বিত একটি বোর্ডও। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, এখানে একটি বোর্ড করতে হবে। সেই সঙ্গে শক্ত নীতি করতে হবে। সেটি প্রয়োগের ক্ষমতাও দিতে হবে। একই সঙ্গে দেশে ভুট্টা ও সয়াবিনের চাষ বাড়ানোর পরামর্শ খাত সংশ্লিষ্টদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন