নতুন সাজে ফিরেছে গুলিস্তান শহীদ মতিউর পার্ক। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে অবস্থান বলেই গুলিস্তান পার্ক হিসেবেই পরিচিত। অযত্ন অবহেলায় পার্কটির অবস্থা বেহাল অবস্থা থেকে ফেরাতে নতুন উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। যে পার্কে বসে ছিন্নমূল মানুষের আড্ডায় মুখরিত ছিলো সে পার্কে ফিরে এসেছে পরিস্কার পরিছন্নতা। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন স্থানীয়রা। ১০ টাকার বিনিময়ে টিকিট কেটে পার্কে প্রবেশ করতে হয়। তিন পাশের যেকোন গেট দিয়েই পার্কে টিকিট কেটে প্রবেশ করছেন দর্শনার্থীরা।
জানা যায়, ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে নিহত মতিউরের নামে গুলিস্তান এই পার্কের নাম রাখা হয়। আয়তন প্রথম দিকে ৩৭ দশমিক ৯ বিঘা থাকলেও বর্তমানে চারদিকের অনেক জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় আয়তন কিছুটা কমে গেছে। যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলের সুবিধার কথা বিবেচনায় ১৯৯৫-৯৬ সালে পার্কের ভিতর দিয়ে সংযোগ সড়ক তৈরি করা হয়। ১৯৯৭ সালে পার্কের জায়গা নিয়ে ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চ নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গুলিস্তান শহীদ মতিউর পার্কটির চারদিকে ব্যস্ত এলাকা হওয়ায় এক সময় আশেপাশের রাস্তাগুলো ময়লা আবর্জনায় ভরা ছিলো। নজরদারি না থাকায় নষ্ট হওয়ার পথে ছিলো মূল্যবান স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি। সেই যন্ত্রপাতিতে লেগেছে হাতের ছোঁয়া। যত্নের অভাবে মরে যাওয়ার উপক্রম হওয়া বিভিন্ন জাতের বৃক্ষে গজিয়েছে নতুন পাতা। গুলিস্তানের মতিউর পার্কটি ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
এখন ময়লা আবর্জনা অনেকটাই পরিস্কার করা হয়েছে। তবে দক্ষিণ পাশের সড়কে রাজধানীর বাইরে যাওয়ার বেশকয়েকটি বাসের কাউন্টার আগের মতোই রয়েছে। পার্কের ভিতরে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে লোকজন বসবাস করতে এখন আর দেখা যায়নি। পূর্ব পাশের রাস্তায় বাসের পর বাস লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় আগের মতোই। রাস্তার পাশের দোতলা জিমনেসিয়াম ভবন। ব্যায়াম করার জন্য সব ধরনের সরঞ্জাম আছে এখানে। এসব দামি জিনিসপত্র একসময় থাকতো নিরাপত্তাহীন। ব্যায়ামাগারের নিচ তলায় কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীকে কাজ করতে দেখা গেছে।
পার্কের ভেতরে জটলা বেধে বসে মিলিতভাবে টানতো মাদক। মাদকাসক্তরা অচেতন হয়ে বসে, শুয়ে থাকতো নারী-পুরুষরা। ঝোপড়ি ঘর করে কিছু মানুষ বসবাস করতো। কয়েকটি স্থানে ছিলো অস্থায়ী খাবারের দোকান। এইসব স্থানে বসানো হয়েছে কয়েকটি রাইড। পার্কেটির ভিতরে চারদিক বাঁধাই করা পুকুরের পানিতে দেয়া হয়েছে দুইটি নৌকা। নৌকাগুলোতে কয়েকজন দর্শনার্থী চালাতে দেখা গেছে। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে সুদৃশ্য ঘাটটি দেখে যে কারো নজরকাড়ে। এতে সৌন্দর্য বেড়েছে পার্কের। এখানে বসে সময় কাটায় দর্শনার্থীরা। মেহগনি, আম, জাম, ঝাউ, পাতাবাহার, আকাশি, দেবদারু, গাব, বকুল, ইউক্যালিপটাস গাছে গজিয়েছে নতুন পাতা। চারদিকের সীমানা প্রচীর দেয়া হয়েছে ভালোভাবেই। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এ মাসের শুরু থেকেই নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে যত্ন নেয়া হচ্ছে পার্কটির। ১০ টাকার বিনিময়ে টিকিট কেটে পার্কে প্রবেশ করেন দর্শনার্থীরা।
সামির নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, টিকিট দিয়ে প্রবেশ করার সিস্টেম করার পর এই প্রথম আসলাম। আগের মতো এখন এখানে আর কোন সমস্যা নেই। নেশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল মানুষদের এখন আর দেখা যায় না। তবে এই পার্কে এখন বেশিকিছু নেই। বসে কিছুক্ষণ সময় কাটানো যায়।
বেসরকারি চাকরিজীবী অবদুর রহমান তুহিন বলেন, একসময় এই পার্কে অসামাজিক কার্যকলাপ ও মদকসেবীদের করণে লোকজন আসতো না। এখন হাঁটার জন্য হলেও ১০ টাকা দিয়ে লোকজন এই পার্কে আসছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থাকলে নিয়মিত মানুষ এখানে আসবেন।
একজন টিকিট বিক্রেতা বলেন, এই মাসের শুরু থেকে আমরা টিকিট বিক্রি করছি। প্রথম দিকে তেমন লোকজন আসছেন না। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার লোকজন বেশি আসেন। এখানে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। সবকিছু ঠিক হলে লোকজন আরও বাড়বে।
এব্যাপারে গুলিস্তান শহীদ মতিউর পার্কের ইজারাদার মো. অলি উল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, এই পার্কটি একসময় মানুষের চলাচল ও বসে সময় কাটানোর অনুপযোগি ছিলো। এখানে বসে আড্ডা দিতো পাগল, মাদকাসক্ত ও ছিন্নমূল লোকজন। এই প্রথম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিকট থেকে অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছি। প্রথম অবস্থায় আমরা এখানে কাজ শুরু করেছি। দ্রুতই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে লোকজনের বসে অবসর সময় কাটানোর ব্যবস্থা করছি। পরবর্তীতে আরও বেশি করে বিভিন্ন ধরনের রাইড ও বিনোদনের ব্যবস্থা করবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন