রাজধানীতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ ও ওষুধ তৈরির সরঞ্জামাদিসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। গত বুধবার অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্র্রেফতারকৃত দুজন হলো-নকল ওষুধের পাইকারি বিক্রেতা মো. আলী আক্কাস শেখ ও ওয়েস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস-এর মালিক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। তাদের কাছ থেকে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ২৮০ পিস নকল প্যানটোনিক্স-২০ ট্যাবলেট, ১৮ হাজার পিস নকল মোনাস-১০ ট্যাবলেট, নকল ট্যাবলেট তৈরির পূর্ণাঙ্গ ডায়াস সেট ও ট্যাবলেট প্রিন্ট করা ৩৪ কেজি ফয়েল পেপার জব্দ করা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ৩০ মার্চ চকবাজারের মদিনা চাঁন সরদার কোল্ড স্টোরেজের এজেআর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি (কুরিয়ার সার্ভিস) থেকে এই ওষুধ উদ্ধার করা হয়। যার গায়ে যথাক্রমে ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সাভার ম্যানুফ্যাকচার বাই দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, ধুলিভিতা, ধামরাই, ঢাকা বাংলাদেশ লেখা রয়েছে। এ ওষুধ সম্পর্কে বিক্রেতা আলী আক্কাস শেখকে কাগজপত্র দেখাতে বললে তিনি বৈধ কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, নকল ওষুধের মূল মালিক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় তার নকল ওষুধ তৈরির একটি কারখানা আছে। আক্কাসকে নিয়ে আরামবাগ থেকে গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা পৌরসভার একটি বিল্ডিংয়ের নিচতলায় গিয়াস উদ্দিন ওয়েস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস নামে আয়ুর্বেদিক ব্যবসার আড়ালে নকল প্যানটোনিক্স-২০, মোনাস-১০ ট্যাবলেটসহ আরও কয়েকটি ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন করে থাকে। এসব ওষুধের মূল ডিলার মো. আলী আক্কাস শেখ। তিনি সিন্ডিকেটের অপর সদস্যদের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসব ওষুধ ছড়িয়ে দিয়ে আসছেন। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, রমজান ও তৎপরবর্তী ঈদকে কেন্দ্র করে এসব ভণ্ডের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জব্দ করা ওষুধে কার্যকর কোনও উপাদান নেই। নন-ফার্মাসিউটিক্যালস গ্রেডের এসব কেমিক্যাল সেবনের ফলে মানুষের কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্র এবং শ্বাসতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
নকল ওষুধে রোগ তো সারবে না উল্টো নতুন রোগের ঝুঁকি তৈরি হয় বলে সবাইকে সতর্ক থাকার তাগিদ দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক চেয়াম্যান ড. সৈয়দ সাব্বির হায়দার।
তিনি বলেন, যে রোগের ওষুধ খেলেন, নকল হলে সেটির প্রতিকার তো পাচ্ছেন না। নকল হওয়ায় এর মধ্যে যে কেমিক্যাল ব্যবহার হয় তার ক্ষতিও আছে। তাই এই ক্ষেত্রে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। যারা নকল ওষুধ তৈরি ও বাজারে ছাড়ে তাদের সামরি ট্রায়াল করে ফাঁসি হওয়া উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক। ওষুধ বিশেষজ্ঞ বলেন, নকল ওষুধ খেলে মানুষ তো মারা যেতে পারে। এই ধরনের ঘটনাগুলোর দ্রুত বিচার করে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন