চৈত্রের দাবদাহ আর রাজধানীর ওয়াসার সাপ্লাইয়ের দূষিত পানি পান করে ঢাকা মহানগরীতে ডায়রিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৭৪ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এতে দেখা যায় প্রতি ঘণ্টায় ৫৩ জনের বেশি রোগী একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
গতকাল শনিবার আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। এ ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল এবং পাড়া মহল্লার ক্লিনিকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আইসডিডিআরবি হাসপাতালে সরেজমিন দেখা যায় লোকে-লোকারণ্য পুরো হাসপাতাল। রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। রোগীদের চিকিৎসার জন্য ফাঁকা যায়গায় টানানো হয়েছে বাড়তি দুটি তাঁবু। এসব তাবুতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
আইসিডিডিআরবিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ রোগী রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, উত্তরখান, দক্ষিণখান এলাকা থেকে এসেছেন। যাত্রাবাড়ী ধলপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ১৮ বছর বয়সী মো. আকাশ জানান, গত শুক্রবার থেকেই তার ডায়রিয়া শুরু হয়। এরপর রাতে অসুস্থতা আরও বাড়তে থাকলে গতকাল সকালে তিনি এখানে ভর্তি হয়েছেন। সকাল থেকে তাকে ৫ ব্যাগ স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।
মো. এনামুল হক নামে (৪৫) আশকোনা দক্ষিণখান এলাকার আরেক রোগী বলেন, প্রথমে তার ডায়রিয়া শুরু হয়। এরপর সঙ্গে বমি। ডায়রিয়া এবং বমি বন্ধ না হওয়ায় গতকাল সকালে ভর্তি হন। সকাল থেকে ৬ ব্যাগ স্যালাইন দেওয়া হয়েছে তাকে। আইসিডিডিআরবি’তে এক ঘণ্টা আবস্থান করে দেখা যায়, মিনিটে মিনিটে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আসবেন। তাদের চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রীষ্মকালের গরমের শুরুতে বরাবরের মতোই ডায়রিয়া এবং কলেরার রোগী বেশি ভর্তি হয় হাসপাতালে। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল ঢাকার সহকারী বিজ্ঞানী ডা. শহিদুল ইসলাম বলেন, এবারের রোগীর সংখ্যা অন্য বছরগুলোর তুলনায় স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি। তবে এটা খুব বেশি অস্বাভাবিক নয়। প্রতি বছর মার্চ, এপ্রিল, মে এবং আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রোগীর চাপ বাড়ে। অন্যান্য বছর দিনে গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী ভর্তি হতো, এবার সংখ্যাটা একটু বেশি।
তিনি আরও বলেন, করোনায় অনেকেই ঘরে ছিলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেন এবং নিয়মিত হাত ধুতেন। এখন যেহেতু করোনা কমে গেছে, মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন, বাইরের খাবার খাচ্ছেন। আমাদের মনে হচ্ছে, মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা কমে গেছে, তাই ডাইরিয়া আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন। তিনি সবাইকে খাবার আগে ও পরে হাত ধোয়া, নিরাপদ ফোটানো পানি পান করা এবং বাইরের খোলা খাবার না খাওয়ার পরামর্শও দেন।
আইসিডিডিআরবি সূত্রে জানা যায়, গত মাসের ১৬ মার্চ ১ হাজার ৫৭ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৭ মার্চ ভর্তি হন ১ হাজার ১৪১ জন, ১৮ মার্চ ১ হাজার ১৭৪, ১৯ মার্চ ১ হাজার ১৩৫, ২০ মার্চ ১ হাজার ১৫৭, ২১ মার্চ ১ হাজার ২১৬, ২২ মার্চ ১ হাজার ২৭২, ২৩ মার্চ ১ হাজার ২৩৩, ২৪ মার্চ ১ হাজার ১৭৬, ২৫ মার্চ ১ হাজার ১৩৮, ২৬ মার্চ ১ হাজার ২৪৫, ২৭ মার্চ ১ হাজার ২৩০, ২৮ মার্চ ১ হাজার ৩৩৪, ২৯ মার্চ ১ হাজার ৩১৭, ৩০ মার্চ ১ হাজার ৩৩১ এবং ৩১ মার্চ ১ হাজার ২৮৫ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন