স্টাফ রিপোর্টার : খোদ রাজধানীতেই অবৈধভাবে তৈরি হচ্ছে মানব কঙ্কাল। মানুষের লাশ সংগ্রহ করে দিনের পর দিন বাসা বাড়িতে রেখেই কঙ্কাল তৈরি করে আসছে একটি চক্র। কাফরুল থেকে এ চক্রের একজন সদস্যসহ ৩২টি কঙ্কাল ও ৮টি লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ প্রশাসন একটু নড়েচড়ে বসেছে। এ চক্রের সদস্য ও মেডিকেল কলেজের ছাত্র নুরুজ্জামানকে আটকের পর বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে রাজধানীর পুলিশ। নুরুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতাররে জন্যও পুলিশ গতকাল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। নুরুজ্জামানের কাছ থেকে পাওয়া কঙ্কাল তৈরির চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য শুনে পুলিশের কর্মকর্তারা হতবাক হয়ে গেছেন। তারা বলছেন, এটি একটি ভয়ঙ্কর চক্র। রাজধানীতে বাসা বা বাড়ি ভাড়া দেয়ার আগে ভাড়াটিয়াদের সকল তথ্য সংশিষ্ট থানায় দেয়ার কথা। তারপরেও বাসা ভাড়া নিয়ে কিভাবে এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- এ চক্রটি মাসের পর মাস ধরে চালিয়ে আসছে এ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পুলিশ বলছে, কাফরুল থানার পূর্ব কাজীপাড়ার একটি বাড়ির দ্বিতীয়তলায় প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল ব্যবহার করে লাশ গলানো হতো। পরে মাংস ছাড়িয়ে তৈরি করা হতো কঙ্কাল। তাদের দাবি এই চক্রের অন্যতম হোতা মেডিক্যাল শিক্ষার্থী নূরুজ্জামান।
কাফরুল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম সিকদার বলেন, ওই বাড়িটি থেকে ৩২টি কঙ্কাল এবং ৮টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নূরুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কঙ্কাল বিক্রি চক্রের তথ্য জানা গেছে। ওই বাসায় সে কী করতো তাও জানা গেছে। সে কঙ্কাল বিক্রি চক্রের অন্যতম সদস্য প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
মিরপুর জোনের দায়িত্বশীল এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অভিযানের সময় ওই বাসার ফ্ল্যাট থেকে ৩২টি কঙ্কাল ও মানুষের গলিত ৮টি মৃতদেহ পাওয়া যায়। বড় ড্রামে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের মধ্যে মৃতদেহগুলো ডুবানো ছিল। একইসঙ্গে বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল ও ব্লিচিং পাউডারও পাওয়া যায়। এ থেকে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে এ বাসায় কঙ্কাল তৈরি করে আসছিল নূরুজ্জামান ও তার সহযোগীরা।
পুলিশের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে, মেডিক্যাল পড়ুয়াদের কেন্দ্র করে এ চক্রটি ময়মনসিংহ এবং গাজীপুর এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কবরস্থান থেকে লাশ তুলে আনে। মূলত দুই থেকে তিন দিনের লাশই তারা টার্গেট করে। এর বেশি হলে কঙ্কাল হবে না এই আশঙ্কায় তারা দ্রুত এই লাশগুলো নিয়ে আসে। এ কাজ করার জন্য তাদের নিজস্ব লোকও রয়েছে। এরপর সদ্য মৃতদেহগুলো তারা বিভিন্নভাবে কাজীপাড়ার ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে আসতো। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে লাশ প্রতি ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। সেখান থেকে তৈরি করা কঙ্কাল পরে ৫০-৬০ হাজার টাকায় কিনে নেন ক্রেতা।
পুলিশ আরও জানায়, চক্রটি প্রথমে পুরান ঢাকার একটি মেডিক্যাল কলেজকে কেন্দ্র করে কঙ্কাল বিক্রি শুরু করে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে পড়লে তারা কৌশল বদলে ফেলে। অভিযোগ রয়েছে একশ্রেণির মেডিক্যাল শিক্ষার্থী অল্প দিনে বেশি টাকা আয়ের লোভে এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দারা কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে নজরদারি শুরু করেছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেওয়ারিশ কিংবা মৃত্যুর আগে কেউ তার দেহ দান করে গেলে কেবল ওই লাশ থেকে কঙ্কাল হতে পারে। কিন্তু এর সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এ কারণে ৪০ ভাগ মেডিক্যাল শিক্ষার্থী প্রতি বছর বাজার থেকে নতুন বোনস বা কঙ্কাল কিনতে বাধ্য হয়। যার সুযোগটি নিয়েছে চক্রটি।
অন্যদিকে আটককৃত নূরুজ্জামান পুলিশকে বলেছে, বাংলাদেশে তো বটেই দেশের বাইরেও তারা কঙ্কাল বিক্রি করত। নূরুজ্জামান পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার দেয়া তথ্যে চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন