রেজাউর রহমান সোহাগ: অবশেষে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। রাজধানী ঢাকার নতুন উপশহর পূর্বাচলে ৩৫ একর জমিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব অর্থায়ণ ও ব্যাবস্থাপনায় নির্মাণ করতে যাচ্ছে ৫০ হাজার দর্শক আসন বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। যেখানে থাকবে ক্রিকেটের প্রয়োজনীয় আধুনিক সকল ধরণের সুযোগ-সুবিধা। এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণে ব্যয় হবে ৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে ৪০০ কোটি টাকা এবং বাকি ৪০০ কোটি টাকা পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে যোগাড় করবে বিসিবি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের ব্যাপারে খুবই কার্যকরী উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তিনি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দ্রুত এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের তাগিদ দিয়েছেন এবং এই ব্যাপারে ক্রিকেট বোর্ডকে সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যেই এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য পূর্বাচলে ৩৫ একর জমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ (রাজউক)।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করতে চাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আদলে। যেখানে মূল স্টেডিয়ামের পাশাপাশি আরো থাকবে অত্যাধুনিক ক্রিকেট একাডেমি, পর্যাপ্ত অনুশীলন মাঠ, খেলোয়াড়দের আধুনিক আবাসন ব্যবস্থা, বিসিবির সদর দফতর ও একটি পাঁচ তারকা হোটেল। যাতে বাংলাদেশে খেলতে আসা বিদেশি দলগুলো স্টেডিয়াম সংলঘœ এই হোটেলেই অবস্থান করতে পারে। ইতোমধ্যেই বিসিবি এই স্টেডিয়াম নির্মাণের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ার দুই তিনটি সনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ডিজাইনসহ কারিগরি প্রস্তাব এনেছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই ব্যপারটি তদারকি করছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুব আনাম। জানা গেছে, ডিজাইন চূড়ান্ত হবার পর এই স্টেডিয়াম নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হবে চীনের কোন নামকরা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে, যাদের খুব দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আগামী জুন মাসের মধ্যেই সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ শুরু করতে চায় বিসিবি। বিসিবির কর্মকর্তারা আশা করছেন নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করা যাবে। তবে, এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণে ক্রীড়ামোদীদের জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর হচ্ছে এই স্টেডিয়ামটি যাতে প্রকৃতভাবেই একটি অত্যাধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম হয় সেটি পুরোপুরি নিশ্চত করার জন্য এই কাজটি এককভাবে করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং এই কাজে বিসিবি কোনভাবেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করবে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের খবরদারী ও অথরিটি ছাড়া এটিই হবে বাংলাদেশে প্রথম কোন স্টেডিয়াম নির্মাণ। জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন এই ব্যাপারটিতে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এর আগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নিতে বলা হলে তারা স্টেডিয়াম নির্মাণের খরচ বাবদ ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি বাজেট তৈরি করেছিলো! যা শুনে ক্রিকেট বোর্ড রীতিমত হতবাক ও বিস্মিত হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্বে থাকলেও তাদের অত্যন্ত নি¤œমাণের অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি ক্রীড়াঙ্গণের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ক্রীড়াঙ্গণের সর্বমহলেই। সবচেয়ে নিন্দনীয় বিষয় হচ্ছে, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে কোন স্টেডিয়াম নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হলেই তারা সবসময় স্টেডিয়ামে খেলাধূলার সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দেয়ার চাইতেও অনেক অনেক বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে স্টেডিয়ামের দোকান নির্মাণ ও দোকান বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারটিকে। একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশে এই ধরণের নিকৃষ্ট নজির নেই। এই দিক থেকে পূর্বাচলে অত্যাধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে মাইনাস করার সিদ্ধান্তটি ক্রীড়ামোদী মহলে খুবই প্রশংসার দাবি রাখে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন